খুলনা | সোমবার | ০৩ নভেম্বর ২০২৫ | ১৯ কার্তিক ১৪৩২

লক্ষ্যমাত্রা ৯৩ হাজার ২৭০ হেক্টর

রোপা আমনের কাঙিক্ষত ফলনের আশায় খুলনায় কৃষি দপ্তরের নানামুখি পদক্ষেপ

আল মাহমুদ প্রিন্স |
০১:৩৭ এ.এম | ০৩ নভেম্বর ২০২৫


খুলনায় এবারও রোপা আমন আবাদের কাক্সিক্ষত ফলনের আশায় কৃষি অধিদপ্তর আগে ভাগে নানামুখি কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। উপ-সহকারি কর্মকর্তারা তাদের রুটিন অনুযায়ী কৃষকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগ-বালাই যদি না হয় তাহলে কাক্সিক্ষত ফলনের প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্ট কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও প্রান্তিক চাষিরা। ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরে খুলনা জেলাসহ মেট্রোতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৩ হাজার ২৭০ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ৮৮ হাজার ৩৫১ হেক্টর। সম্ভাব্য উৎপাদন হয়েছে ২৮ হাজার ১৬০ মেট্রিক টন।  
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে খুলনায় রোপা আমন আবাদের ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়ছে। ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে খুলনা জেলাসহ মেট্রোতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৩ হাজার ২৭০ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ৮৮ হাজার ৩৫১ হেক্টর। সম্ভাব্য উৎপাদন হয়েছে ২৮ হাজার ১৬০ মেট্রিক টন। অর্জিত আবাদের মধ্যে রূপসা উপজেলায় ৩ হাজার ৭৩০ হেক্টর, তেরখাদায় ১৭ হাজার ৪০০ হেক্টর, ডুমুরিয়ায় ১৪ হাজার ৯৩১ হেক্টর, দাকোপে ১৯ হাজার ২৩০ হেক্টর, পাইকগাছায় ১৩ হাজার ৩৩০ হেক্টর, দিঘলিয়ায় ১ হাজার ৮২৭ হেক্টর, কয়রায় ১৬ হাজার ১১২ হেক্টর, ফুলতলায় ৬১৩ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর মেট্রোতে ৩০ হেক্টর ও লবনচরায় ১৬০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। 
উপজেলা পর্যায়ে একাধিক কৃষি অফিসারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবছর বিরি-১০৩, ৮৭, ৭৫, বিআর-১১, ২৩, ৪৯, বারী সেলুট, বেনাপোল, কাচড়া, লাল বালাম, গুটি স্বর্না জাতের ধানের বীজ দিয়ে রোপা আমনের আবাদ করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে বিরি-১০৩ ও ৮৭ জাতের ধানের বীজ উচ্চ ফলনশীল হওয়ায় (উপশী) কৃষক-কৃষাণীরা বেশি আগ্রহী। 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি খুলনা’র উপ-পরিচালকের নির্দেশনা মতে, স্ব-স্ব উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষক-কৃষাণিরা কাক্সিক্ষত ফলনের জন্য সকল নির্দেশনা মেনে আমনের আবাদ করেছেন কৃষক-কৃষিণীরা। উপজেলা কৃষি অফিসের নির্দেশনা মতে, রোগ-বালাই থেকে রক্ষা পেতে প্রতি ব্লকে দেওয়া হচ্ছে আলোক ফাঁদ। গ্রামে-গঞ্জে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে কৃষক ও সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে লিফলেট। কৃষকদের সমন্বয়ে করা হয় গ্রæপ মিটিং। আগাম বালাই ব্যবস্থা সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের। জমির প্রত্যেকটি ব্লকে দেখানো হচ্ছে আলোকচিত্র। 
স্ব-স্ব উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা রুটিন অনুয়ায়ী মাঠপর্যায়ে যেয়ে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কৃষি দপ্তরের উদ্যোগে সন্ধ্যার পর দেখানো হবে ভিডিও প্রদর্শনী। 
রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামের কৃষক মোঃ ওমর আলী শেখ বলেন, ‘রোপা আমনের ফলন ভালো আশা করছি। যদি কোনো রোগ-বালাই ও ঝড়-বৃষ্টি না হয় তাহলে বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি প্রত্যাশী। একই গ্রামের চাষি আলেমান শেখের সাথে কথা বললে তিনিও একই মন্তব্য করেছেন।’ 
রূপসার ইলাইপুর গ্রামের কৃষক মোঃ ইব্রাহিম শেখ, নৈহাটী গ্রামের কৃষক বিশ^জিৎ পাল বলেন, রোগ-বালাই ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ যদি না হয় তাহলে রোপা আমনের ভালো ফলন আশা করছেন। তারা বলেন, আমনের ফলন এবার ভালো আশা করা যাচ্ছে। যদি কোনো দুর্যোগ না হয় তাহলে ফলন ভালো হবে। শ্রীরামপুর গ্রামের চাষি আব্দুস সালাম শেখ বলেন, আবহাওয়া যদি ভালো থাকে তাহলে ধানের ফলন হয়তো ভালো হবে। ব্লক সুপারভাইজাররা কৃষকদের সবসময় বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছেন। 
দাকোপ উপজেলার খাটাইল গ্রামের কৃষক মোঃ মোজাম্মেল শেখ বলেন, ‘আবহাওয়া যদি ভালো থাকে এবং পোকা-মাকড়ের কোনো আক্রমণ যদি না হয় তাহলে আমনের বাম্পার ফলন হবে।’ একই উপজেলার সিংজোড়া গ্রামের চাষি সুকুমার মন্ডল বলেন, ‘পোকা-মাকড়ের আক্রমণ যদি না থাকে এবং আবহাওয়া যদি ভালো থাকে তাহলে ভালো উৎপাদন হবে।’   
রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসার তরুণ কুমার বালা বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ যদি না হয় তাহলে হেক্টর প্রতি উৎপাদন ৪ দশমিক ৫ থেকে ৫ দশমিক ৫ টন প্রত্যাশা করছি।’ তিনি বলেন, বিরি-১০৩ জাতের ধানের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে লিফলেট। কৃষক-কৃষাণিদের সমন্বয়ে করা হচ্ছে গ্র“প মিটিং। আগাম বালাই ব্যবস্থা সম্পর্কে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেক ব্লকে দেখানো হচ্ছে আলোকচিত্র । প্রতি ব্লকে একযোগে সপ্তাহের প্রতি সোমবার আলোক ফাঁদ দেওয়া হচ্ছে।  
তেরখাদা উপজেলা কৃষি অফিসার শিউলি মজুমদার বলেন, ‘রোপা আমন আবাদে ভালো ফলনের জন্য সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অতিঅল্প সময়ের মধ্যে সন্ধ্যার পর কৃষি বিষয়ক ভিডিও পদর্শন করা হবে। উপ-সহকারী কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন। রোপা আমন আবাদে কাক্সিক্ষত ফলন আশা করছেন তিনি। ফলন হেক্টর প্রতি ৫ দশমিক ১৯ টন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।’ 
দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কিশোর আহমেদ বলেন, ‘রোপা আমন আবাদে বাম্পার ফলন প্রত্যাশা করছি।’ এবছর হেক্টর প্রতি ৬ দশমিক ২ টন উৎপান আশা করছেন তিনি। তবে ভালো পরিচর্যা করা হলে ৬ দশমিক ৫ থেকে ৭ টন ধান উৎপাদন হওয়া সম্ভব। তিনি আরো বলেন, সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন স্থানে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। সর্বোপরি ভালো ফলনের জন্য সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার ইনশাদ ইবনে আমিন বলেন, ‘সময়মত বৃষ্টি হয়েছে। পোকা মাকড়ের তেমন কোনো প্রাদুর্ভাব নেই। তাই আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে তাহলে রোপা আমনের কাক্সিক্ষত ফলন আশা করছি। হেক্টর প্রতি ৫ দশমিক ৬টন ধান উৎপাদন হবে এমনটা প্রত্যাশা করছেন তিনি।’ 
বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আবু বক্কর বলেন, ‘রোপা আমনে ফলন ভালো হয়েছে। হেক্টর প্রতি ৫ থেকে ৬ টন ধান উৎপাদন হবে এমনটাই আশা করছেন তিনি।’ এছাড়া অন্যান্য উপজেলাগুলোতে খোঁজ নিয়ে একই অবস্থা জানা গেছে। 
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘খুলনা জেলাসহ মেট্রোতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৯৩ হাজার ২৭০ হেক্টর ধরা হয়েছে এর মধ্যে অর্জিত হয়েছে ৮৮ হাজার ৩৫১ হেক্টর। তিনি বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে এবং রোগ-বালাই যদি না হয় তাহলে রোপা আমনের বাম্পার ফলন হবে।’

্রিন্ট

আরও সংবদ