খুলনা | মঙ্গলবার | ০৪ নভেম্বর ২০২৫ | ২০ কার্তিক ১৪৩২

রাজনীতি দ্বিধাবিভক্ত জাতীয় ঐক্য জরুরি

|
১২:১৩ এ.এম | ০৪ নভেম্বর ২০২৫


জুলাই জাতীয় সনদ ও তা বাস্তবায়নের আদেশ এবং গণভোট এখন আলোচনার তুঙ্গে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণ এখন স্পষ্টতই দ্বিধাবিভক্ত। শুধু বিভক্ত নয়, পরস্পরকে আক্রমণ করে চলছে নানা ধরনের বক্তৃতা-বিবৃতি। এসব কারণে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সঠিক সময়ে হবে কি না, তা নিয়েও অনেকে সন্দেহ-সংশয় প্রকাশ করছেন। অথচ অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশের অর্থনীতি যেভাবে বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে, তা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দ্রুত নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো বিকল্প নেই।
জুলাই জাতীয় সনদ ও এর বাস্তবায়ন নিয়ে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের দলগুলোর মধ্যে সৃষ্ট এমন বিভাজন নিয়ে উৎকণ্ঠা সর্বমহলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্ভাব্য গণভোটের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পাশাপাশি উঠেছে নানা প্রশ্ন। সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত ৪৮টি বিষয়ে সমর্থন করেন কি করেন নাএই একটি প্রশ্নে কিভাবে ‘হ্যাঁ-না’ ভোট হবে? কিছু প্রস্তাবে কারো মতামত ইতিবাচক হতে পারে আবার কিছু প্রশ্নে নেতিবাচক হতে পারে। সেটি কিভাবে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ দিয়ে স্পষ্ট করা যাবে?
আইন বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্টজনদের মধ্যে এখন বেশি আলোচনা ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ জারির এখতিয়ার নিয়ে। ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘সরকার এ আদেশ জারি করবে’। এতে জামায়াতসহ কয়েকটি দলের সমর্থন আছে। এনসিপিও এ প্রস্তাবের পক্ষে। কিন্তু বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল এ প্রস্তাব সমর্থন করছে না। দলনিরপেক্ষ আইন বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, নির্বাহী বিভাগ বা সরকারকে কখনোই আইনি আদেশ জারি বা আইনের সমকক্ষ কোনো কিছু করার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।
ঐকমত্য কমিশনের যুক্তি এবং জামায়াতের আইনজীবীর বক্তব্য, “আমরা এখন যে অবস্থায় আছি, সেটা এক ধরনের ‘স্টেট অব এক্সেপশন’। এটা আমাদের বিবেচনায় রেখেই অগ্রসর হতে হবে। সবকিছুই পুরনো বাক্সে ঢোকানো যাবে না। কিছু জিনিস সম্ভবত বাক্সের বাইরেও থাকবে।” এ ছাড়া বলা হচ্ছে, “আগের সরকারের সময় নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি কিভাবে গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে এই আদেশ জারি করবেন। এই আদেশটা জারি করা হচ্ছে জনগণের ‘কনস্টিটিউয়েন্ট পাওয়ার’ বলে। যে আদেশ জারি হবে, সেটা সরকারকেই জারি করতে হবে।” কিন্তু বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল এ ধরনের যুক্তির বিরোধিতা করে বলেছে, সরকারের এ রকম আদেশ জারি করার কোনো এখতিয়ারই নেই।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কেবল রাষ্ট্রপতিকেই অধ্যাদেশ জারির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অন্য কাউকে নয়। নির্বাহী বিভাগকে কখনোই আইনি আদেশ জারি বা আইনের সমকক্ষ কোনো কিছু করার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। আর আলোচিত জুলাই সনদে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অনেক কিছুই আছে।’ সুপ্রিম কোর্টের আরেক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, ‘সরকার হচ্ছে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ। দৈনন্দিন প্রয়োজনে বিভিন্ন আদেশ জারির ক্ষমতা সরকারের আছে। নির্বাহী আদেশে আইন বাস্তবায়নের সুযোগ থাকলেও আইন প্রণয়নের সুযোগ নেই।’ তাঁর মতে, সরকারের আদেশে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের কোনো সুযোগ নেই। হলেও সেটি টিকবে না, চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে দেশে জাতীয় ঐকমত্যের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। কিন্তু জুলাই সনদ ও গণভোট নিয়ে যেভাবে রাজনৈতিক দলগুলো মুখোমুখি অবস্থানে চলে যাচ্ছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসতে হবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ