খুলনা | মঙ্গলবার | ০৪ নভেম্বর ২০২৫ | ২০ কার্তিক ১৪৩২

বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেলে এক বছরে রাজস্ব আয় প্রায় ১৯ কোটি টাকা, বেড়েছে গ্রাহক সেবার মান

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা |
০২:১০ এ.এম | ০৪ নভেম্বর ২০২৫


বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সাতক্ষীরা সার্কেল এক বছরে ১৮ কোটি ৬৮ লক্ষ ৭৬ হাজার ১২৫ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন, মালিকানা, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফিটনেস, রুট পারমিটসহ বিভিন্ন খাত থেকে এই রাজস্ব আদায় করা হয়। এ ছাড়াও জেলায় ধারাবাহিকভাবে যানবাহনের উপর মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আরো ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সাতক্ষীরা সার্কেলের সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার উসমান সরওয়ার আলম সোমবার (৩ নভেম্বর) সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি জানান, গত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে সাতক্ষীরা সার্কেলে মোট ৫ হাজার ৮৩৬টি মোটর বাইকে ও অন্যান্য ২৩টি রেজিস্ট্রেশন, মালিকানা বদলী ৫৮০টি, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ৭ হাজার ৫২১টি, নবায়ন ৮২৭টি, ফিটনেস সার্টিফিকেট ইস্যু ২৩টি, নবায়ন ২ হাজার ৭শ’ ১৫টি, রুট পারমিট ইস্যু ২১টি এবং নবায়ন করা হয়েছে ২৫৪টি। ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড) বিতরণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৮৩৬টি। এছাড়া জেলায় ১২৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালতে ২৯২টি মামলা দায়েরের বিপরীতে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬শ’ ৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেল সূত্রে জানা যায়, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন (পেশাদার) করতে গ্রাহককে প্রথমে শিক্ষানবিস ড্রাইভিং লাইসেন্স (লার্নার) এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ অনলাইনে আবেদন করতে হয়। এরপর ২ মাস পরে লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট দিতে হয়। উত্তীর্ণ হলে নির্ধারিত ফি প্রদান করে পুনরায় অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন করতে হয়। শিক্ষানবিস ড্রাইভিং লাইসেন্স (লার্নার) এর পরীক্ষার সময় সুচি অনুযায়ী প্রথমে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আগুলের ছাপ) গ্রহণ করা হয়। স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সরাসরি গ্রাহকদের বাসার ঠিকানায় পোষ্ট অফিসের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়। প্রেরণের আগে লাইসেন্স পাঠানো সংক্রান্ত গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে অবহিত করা হয়।
মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন করতে সেবা গ্রহণকারীরা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নিজে অথবা সংশ্লিষ্ট ক্রয়কৃত মোটরসাইকেল বিক্রয়কারি প্রতিষ্ঠান (শোরুম) কর্তৃক নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সরকারি ফিস জমা পূর্বক মোটরযানের জন্য আবেদন করতে পারেন। আবেদনটি যাচাই-বাছাই করে সঠিক পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ রেজিস্ট্রেশনের অনুমোদন প্রদান করেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরপূর্বক গ্রাহককে নাম্বারসহ বায়োমেট্রিক, ফিঙ্গারসহ একনলেজমেন্ট স্লিপ গ্রহণের জন্য এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হয়।
পরবর্তীতে এসএমএস মাধ্যমে ডিজিটাল নাম্বার প্লেট গ্রহণের জন্য গ্রাহককে এসএমএস মাধ্যমে জানানো হয়। বায়োমেট্রিক ও ফিঙ্গার সম্পন্ন হলে গ্রাহককে এসএমএস মাধ্যমে জানানো হয় রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট গ্রহণ করা জন্য।
এছাড়া বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেল অফিসে মোটরযানের রুট পারমিট ইস্যু ও নবায়ন, মোটরযানের ফিটনেস ইস্যু ও নবায়ন, মোটরযানের ট্যাক্স টোকেন ইস্যু ও নবায়ন, মোটরযানের হাই সিকিউরিটি উইন্ডশিল্ড স্টিকার (ডিকল) ইস্যু ও নবায়ন, বিনামূল্যে মোটরযান ও ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত যে কোন ধরনের আবেদনপত্রের প্রাপ্যতা, মোটরযান সংক্রান্ত পরিসংখ্যান, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের আর্থিক সহায়তাসহ এ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান, ইন্সট্রাক্টর লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন, পরিবহনযানের কন্ডাক্টর লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন করা হয়।
এছাড়া আগে বিআরটিএ’র পরীক্ষাগুলো মাসে একবার নেওয়া হতো এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে নেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল নাম্বার প্লেট দেওয়া হতো প্রতি মাসে, এখন তা প্রতিদিন দেওয়া হচ্ছে। এভাবে আগের তুলনায় সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে।বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের আমলে সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ও গতি আনয়নের লক্ষ্যে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সাতক্ষীরা সার্কেল।
বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেলের সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার উসমান সরওয়ার আলম বলেন, বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেলের সফলতা ও ব্যর্থতা দু’টিই রয়েছে। আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ জলবল নেই। জনবলের অভাব, অল্প সংখ্যক জনবল নিয়ে গ্রাহক সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া নিজস্ব ভবন না থাকায় মোটরযানের পরিদর্শনের নির্দিষ্ট স্থান ও ড্রাইভিং পরীক্ষার নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় গ্রাহকরা কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এরপরেও আমরা বর্তমানে অনলাইন পদ্ধতিতে ওয়ানস্টপ সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছি। চালকদের জন্য সর্বাধুনিক স্মার্ট লাইসেন্স সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে ভুয়া লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা কমবে। ফলে মানুষ প্রতারিত হবে না। এছাড়া সাতক্ষীরা সার্কেলের নিজস্ব ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ এর মাধ্যমে গ্রাহকদের সকল অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করা হয়। সাতক্ষীরা সার্কেল অফিসের সেবার মান মুল্যায়ন করবে সাতক্ষীরা জেলার গ্রাহকরা।
বিআরটিএ’র দালাল দৌরাত্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা সব দালালদের সরিয়ে দিয়েছি। মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করা হয়। এছাড়া যে কোন অভিযোগের ক্ষেত্রে হট লাইন নাম্বারে (০১৯৬৬৬২২০৭৭) গ্রাহকরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবে।
জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেলের কার্যক্রমে ইতিবাচক পরিবর্তন ও সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। সকল প্রকার সেবা অন লাইনে প্রদানের ফলে বিআরটিএ অফিসে এসে এখন আর মানুষকে হয়রাণি হতে হয়না। এছাড়া জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে বিআরটিএ’র টাকা জমা দেওয়ার জন্য একটি বুথ চালু করা হয়েছে। নতুন ভবন করতে পারলে সাধারণ মানুষকে আর হয়রানির শিকার হবে না।

্রিন্ট

আরও সংবদ