খুলনা | শুক্রবার | ০৭ নভেম্বর ২০২৫ | ২২ কার্তিক ১৪৩২

ঝিনাইদহে বিএনপি’র দুর্গে ফাটলের শঙ্কা, নেতাকর্মীদের অসন্তোষ

খাইরুল ইসলাম নিরব, ঝিনাইদহ |
১১:৪৭ পি.এম | ০৬ নভেম্বর ২০২৫


ঝিনাইদহ-২ (সদর ও হরিণাকুন্ডু) আসন বিএনপি’র ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি। স্বাধীনতার পর থেকে বিএনপি’র প্রার্থী এই আসন থেকে একাধিকবার জয়ী হয়েছেন। ফলে জেলা সদরের এই আসনটি বিএনপি’র হৃদস্পন্দন ধরা হয়।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩৭টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হলেও ঝিনাইদহ-১, ঝিনাইদহ-২ ও ঝিনাইদহ-৪ সংসদীয় আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। গুঞ্জন উঠেছে ঝিনাইদহ-২ আসন মিত্রদলের জন্য ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এ আসনে প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁনের। এ খবরে তৃণমূল বিএনপি’তে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। 
দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ-২ আসন বহুদিন ধরেই বিএনপি’র অন্যতম শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এই আসনের রাজনীতি মূলত ঘুরে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ত্যাগ, আন্দোলন ও দীর্ঘ সংগ্রামের ওপর ভর করে। কিন্তু সেই দৃঢ় ঘাঁটিতেই এখন দেখা দিয়েছে শঙ্কার কালো মেঘ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে ঝিনাইদহ-২ আসনে যদি বিএনপি’র প্রার্থী না থাকে তবে এই অঞ্চলে বিএনপির অস্তিত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। গভীর সংকট দেখা দিবে মাঠের রাজনীতিতে। গত ১৭ বছর ধরে যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে রাজপথে থেকে দলকে শক্ত অবস্থানে রেখেছেন, হামলা-মামলা গ্রেফতার সহ্য করে সংগঠন ধরে রেখেছেন, তারাই বঞ্চিত হবেন। তাই প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে সেই বাস্তবতা উপেক্ষা করা হলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তৃণমূল বিএনপি’র নেতা সাধুহাটী ইউনিয়নের কৃষক আলাউদ্দীন জানান যারা এক যুগ ধরে রাজপথে থেকে দলকে টিকিয়ে রেখেছেন, হামলা-গ্রেফতার সহ্য করে সংগঠন ধরে রেখেছেন, তারা যদি মনোনয়ন বঞ্চিত হন তবে ভবিষ্যতে আর কেউ বিএনপি করবে না। ফলে ঝিনাইদহ ও হরিণাকুন্ডু উপজেলায় বিএনপি’র জনপ্রিয় প্রার্থী হিসেবে এড. এম এ মজিদকে মনোনয়ন দিলে আসনটির মর্যাদা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি জেলার অন্য তিনটি আসনও নেতৃত্বে সমৃদ্ধ থাকবে। 
সদরের নগরবাথান গ্রামের মোজাম্মেল হক জানান, ঝিনাইদহ এলাকার রাজনীতি গড়ে উঠেছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ত্যাগ, নিষ্ঠা ও মাঠের লড়াইয়ের ওপর ভিত্তি করে। তাই প্রার্থী নির্বাচনে যদি সেই বাস্তবতা উপেক্ষা করা হয়, তাহলে সংগঠনের ভিত নড়বড়ে হয়ে যাবে এবং দলের অভ্যন্তরে বিভক্তি অনিবার্য হয়ে উঠবে।
সাধুহাটী ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, দীর্ঘ সময় ধরে মাঠে থাকা নেতাদের বাদ দিয়ে সমঝোতার রাজনীতি যদি হাইকমান্ড প্রাধান্য দেয়, তাহলে ঝিনাইদহ-২ কেবল হারানো আসন হবে না, এটি পুরো জেলার বিএনপি সংগঠনের জন্য হতাশার প্রতীক হয়ে দাঁড়াবে।
জেলা পূজা ফ্রন্টের আহবায়ক মিলন কুমার ঘোষ বলেন, ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে একটা গোষ্ঠী নানাভাবে হিন্দু স¤প্রদায়ের মানুষের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়েছে। তবে এ ঘটনা ঝিনাইদহে একটিও ঘটেনি। এর মূল কারণ জেলা বিএনপি’র সভাপতি এমএ মজিদ হিন্দু স¤প্রদায়ের মানুষের সুরক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এখন এ আসন থেকে মিত্র দলের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে হিন্দু স¤প্রদায়ের মানুষ অনিরাপদ হয়ে পড়বে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে।
এদিকে বিএনপি’র প্রবীণ নেতা আক্তারুজ্জামান বলেন, ঝিনাইদহ-২ আসনে এমন অনেক পরিবার আছে যাদের সদস্যরা বছরের পর বছর বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কারো বাড়ি পুড়েছে, কেউ মামলা খেয়ে পালিয়ে থেকেছে, কেউ আবার জেল খেটেছে, কিন্তু দল ছাড়েনি কেউই। সেই মানুষগুলোর মনে এখন একটাই প্রশ্ন যাদের রক্ত, শ্রম আর ত্যাগে এই আসনের সংগঠন টিকে আছে, তাদের বাদ দিয়ে শরীক দলকে সিট ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে সেটা হবে নিজের কান কেটে অপরের যাত্রা ভঙ্গের সামিল।
ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা জানান, এই মুহূর্তে বিএনপি’র জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো দ্রুত, স্বচ্ছ ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া। কারণ এই আসনের প্রশ্ন কেবল একজন প্রার্থীর নয়, বরং এটি দলীয় অস্তিত্ব, তৃণমূলের সম্মান ও আন্দোলনের উত্তরাধিকার রক্ষার প্রশ্ন। সময় এসেছে দল প্রমাণ করুক, তারা ত্যাগ ও সংগ্রামের মূল্য দিতে জানে কিনা।
এ ব্যাপারে বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, বৃহস্পতিবার যশোরে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসেছিলেন। তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে বিএনপি’র প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ