খুলনা | শুক্রবার | ০৭ নভেম্বর ২০২৫ | ২২ কার্তিক ১৪৩২

পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা ভোক্তার স্বার্থ রক্ষা করতে হবে

|
১২:১৩ এ.এম | ০৭ নভেম্বর ২০২৫


দেশের বাজারে আবারও পেঁয়াজ নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র অস্থিরতা। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি দাম ৩০ টাকার মতো বেড়েছে। খুচরা বাজারে বেড়েছে আরো বেশি। খুচরায় দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। এর পেছনে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সরবরাহ ঘাটতি কিংবা আমদানি জটিলতার চেয়ে বড় কারণ হলো বাজার ব্যবস্থাপনার চরম দুর্বলতা এবং প্রশাসনিক নজরদারির ঘাটতি। এমনকি খোদ সরকারি কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে দেশি পেঁয়াজের মজুদ যথেষ্ট থাকলেও ‘বাজার সিন্ডিকেট’ দাম নিয়ন্ত্রণ করছে নিজেদের ইচ্ছামতো।
বাংলাদেশে পেঁয়াজ শুধু রান্নার উপাদান নয়, এটি সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। তাই এই পণ্যের দাম বাড়লে তা দ্রব্যমূল্যের সামগ্রিক চিত্রে বড় প্রভাব ফেলে। অথচ প্রতিবছরই একই চিত্র দেখা যায়, দেশে নতুন পেঁয়াজ উঠলে দাম পড়ে যায়, কৃষক লোকসান গোনেন; আবার অন্য মৌসুমে আমদানি কমলেই ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার আশায় দাম বাড়িয়ে দেন। কৃষক, ভোক্তা কিংবা সরকারি কোনো সংস্থার পক্ষেই এই অস্থিরতা মোকাবেলা করা সম্ভব হয় না। ফলে ‘অভ্যস্ত সংকট’ যেন এখন নিত্যঘটনায় পরিণত হয়েছে।
সরকার দাবি করছে, বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আছে এবং টিসিবির মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে বিক্রি অব্যাহত থাকবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, টিসিবির সেই উদ্যোগ খুবই সীমিত। বাজারে কার্যকর তদারকি না থাকায় মধ্যস্বত্বভোগী ও পাইকাররা সহজেই দামের লাগাম টেনে ধরতে পারছেন না। পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কছাড় বা ভারত-চীন থেকে আমদানি সহজ করার যে সিদ্ধান্ত সরকার মাঝে মাঝে নেয়, তা স্বল্পমেয়াদি প্রভাব ফেলে বটে, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে কোনো স্থিতিশীলতা আনে না।
এখন জরুরি হলো কৃষকের স্বার্থ ও ভোক্তার ন্যায্যমূল্য উভয়ের ভারসাম্য রক্ষা করে একটি স্থায়ী নীতিমালা প্রণয়ন করা। স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সংরক্ষণ সুবিধা বাড়াতে হবে, যাতে মৌসুমি সরবরাহের তারতম্যে দাম না বাড়ে।
বাজারে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে। পেঁয়াজের বাজারের এই বারবারের অস্থিরতা কেবল একটি পণ্যের সংকট নয়, এটি আমাদের সামগ্রিক বাজার ব্যবস্থাপনার অদক্ষতার প্রতিচ্ছবি।
সরকার যদি এই দুর্বলতাকে কাটিয়ে উঠতে না পারে, তবে পেঁয়াজের মতো নিত্যপণ্যে ভোক্তাদের দুর্ভোগ বারবার ফিরে আসবে এবং প্রতিবারই সাধারণ মানুষকে এর খেসারত দিতে হবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ