খুলনা | শুক্রবার | ০৭ নভেম্বর ২০২৫ | ২২ কার্তিক ১৪৩২

গুমের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড, বিচার করতে হবে ১২০ দিনে

খবর প্রতিবেদন |
০১:৪০ এ.এম | ০৭ নভেম্বর ২০২৫


দেশে গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার নিশ্চিত করতে ‘গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। অধ্যাদেশে গুমকে চলমান অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের ৪৭তম বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠকে জাতীয় লজিস্টিক নীতির খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন এবং ২০২৬ সালের সরকারি ছুটির তালিকাও অনুমোদিত হয়েছে। এছাড়া জাতীয় নগরনীতি নিয়ে আলোচনা হলেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
প্রেস সচিব জানান, গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী আইন হিসেবে বিবেচিত হবে।
তিনি বলেন, এই আইনের ফলে ভবিষ্যতে কোনো সরকার বা কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা দেশে গুমের রাজত্ব চালাতে পারবে না। কোনো গোপন আটক কেন্দ্র বা ‘আয়নাঘর’ আর তৈরি হবে না।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, গুমকে চলমান অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। গোপন আটক কেন্দ্র, যা ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত, স্থাপন ও ব্যবহারকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গোপন আটক কেন্দ্র স্থাপন, যা আয়নাঘর নামে পরিচিত, তা ব্যবহার শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গুম সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্ত কমিশনকে গুম সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্তের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে,এই অধ্যাদেশে গুম প্রতিকারের লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের ১২০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্নের বাধ্যবাধকতা, ভুক্তভোগী-স্বাক্ষীর অধিকার সুরক্ষা, ক্ষতিপূরণ এবং আইনগত সহায়তা নিশ্চয়তা প্রদান সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গুম-সংক্রান্ত ঘটনায় কার্যকর পদক্ষেপ ও ভুক্তভোগী পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য একটি বিশেষ তহবিল ও কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার গঠনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
এছাড়া, গুম প্রতিরোধ প্রতিকার এবং সুরক্ষার উদ্দেশ্যে তহবিল গঠন এবং তথ্যভান্ডার প্রতিষ্ঠার বিধানও সংযোজিত হয়েছে।
তিনি বলেন, গুম প্রতিরোধ এবং প্রতিরোধ অধ্যাদেশ ২০২৫-এর চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে আজ (বৃহস্পতিবার)। শেখ হাসিনার সময় বাংলাদেশে হাজার-হাজার ছেলে মেয়ে গুম হয়েছে। তার মধ্যে গুম বিষয়ক যে কমিশন করা হয়েছে, সেখানে অভিযোগের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার এবং ওই কমিশনে যারা মেম্বর আছেন, তারা তাদের রিপোর্টে বারবার বলছেন যে এটার সংখ্যা ৪০০-এর উপরে হবে। আর দেশে শত শত আয়নাঘর ছিল, সেখানে এদেরকে রাখা হতো। অনেকে যারা গুম হয়েছেন, কেউ কেউ ফিরে এসেছেন, আবার অনেকে ফিরে আসেননি। আপনি জানেন বিএনপি’র অনেক কর্মী এখনো ফিরে আসেননি।
তিনি আরও বলেন, গুম সংক্রান্ত একটি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন আছে। যেটার নাম হচ্ছে, ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দি প্রটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম এনফোরস ডিসএপিয়ারেন্স। গত বছর ২৯ আগস্ট বাংলাদেশের উপদেষ্টা পরিষদ এটার এপ্রুভ করেছেন। বাংলাদেশ এটার অংশীদার হয়েছে। অংশীদারের এই কনভেনশনকে ফলো করে অধ্যাদেশটা তৈরি করা হয়েছে। এটা বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক আইন। এর ফলে বাংলাদেশে আর কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার এসে গুমের রাজত্ব চালাতে পারবে না। দেশে কোনো আয়নাঘর তৈরি হবে না।
প্রেস সচিব বলেন, আগের সরকারের আমলে বাংলাদেশে গুমের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছিল। গঠিত গুম কমিশনে প্রায় ২ হাজার অভিযোগ এসেছে। তবে কমিশনের সদস্যদের হিসাবে প্রকৃত সংখ্যা ৪ হাজারেরও বেশি হতে পারে। 
তিনি বলেন, দেশে অনেক মানুষ আছেন, যারা নিখোঁজ হওয়ার পর আর ফেরেননি। আবার কেউ কেউ ফিরে এসেছেন। বিএনপি’র অনেক কর্মী এখনও ফিরে আসেননি। এই বাস্তবতাই আইনটিকে জরুরি করে তুলেছে।
তিনি আরও জানান, অধ্যাদেশটি প্রণয়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনি মানদন্ড অনুসরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ গত বছরের ২৯ আগস্ট জাতিসংঘের ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রোটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’-এ যোগ দেয়। সেই কনভেনশনের নীতিমালা অনুযায়ীই এই আইনটি তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ গত বছরের ২৯ আগস্ট এই আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সদস্য হয়। সে অনুযায়ী আমরা কনভেনশনের মান বজায় রেখে এই আইনটি প্রণয়ন করেছি।
প্রেস সচিব জানান, গত ৩০ অক্টোবর অধ্যাদেশটি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা ও বিতর্কের পর বিভিন্ন প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে এটি চূড়ান্ত আকারে (বৃহস্পতিবার) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকে অধ্যাদেশটি অনুমোদিত হয়।

্রিন্ট

আরও সংবদ