খুলনা | সোমবার | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ | ২৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

বকুলের মধ্যস্থতায় সমঝোতা * বিভেদ ভুলে ধানের শীষে ঐক্য

নতুন উদ্যমে মহানগর বিএনপি, দীর্ঘ বিরতির পর একত্রে মাঠে

এন আই রকি |
১২:৪৬ এ.এম | ০৮ নভেম্বর ২০২৫


নানা জল্পনা কল্পনা শেষে খুলনা-২ আসন (সদর- সোনাডাঙ্গা) আগামী সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি প্রায় চার বছর মহানগর বিএনপি’র বর্তমান কমিটির রাজনীতির সাথে ছিলেন না। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মহানগরের সভাপতি পদ হারানোর পর তিনি তার অনুসারীদের নিয়ে পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি ও সাংগঠনিক কার্যক্রম করে আসছিলেন। এমনকি মহানগর পার্টি অফিসে তিনি পা রাখেননি। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর খুলনার রাজনীতি অঙ্গনে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনায় মহানগর বিএনপি’র কমিটি এখন নজরুল ইসলাম  মঞ্জুর পক্ষে প্রচারণা নামছেন। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক এবং খুলনা-৩ (দৌলতপুর-খালিশপুর-খানজাহান আলী) আসনের ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুলের মধ্যস্থতায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু। আগামী রোববার থেকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণায় নামবেন। 
জানা যায়, ২০২১ সালের মহানগর বিএনপি নতুন কমিটি হওয়ার পর থেকে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করেছিল নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ তার অনুসারীরা। গেল ২৭ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মতবিনিময় সভায় ডাক পান সাবেক সংসদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু। 
আরো উপস্থিত ছিলেন  খুলনা-২ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী মহানগর বিএনপি’র সভাপতি শফিকুল আলম মনা ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন। ওই সময় দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশনা দেন দলের মধ্যে কোন বিভেদ থাকবে না। যে মনোনয়ন পাবে সে সকলকে নিয়োগ ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করবে। 
এরপর ৩ নভেম্বর বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাদেশে ২৩৭ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী ঘোষণা করেন। সেখানে খুলনা-২ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয় মহানগর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে। 
এদিকে এই ঘটনার পর থেকে খুলনা মহানগর বিএনপি’র রাজনীতি ওলট-পালট হয়ে যায়। মহানগর বিএনপি’র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকার কারণে তারা নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ করেননি। তারা অপেক্ষায় আছে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার। 
এদিকে বিষয়টি মীমাংসার জন্য বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও খুলনা-৩ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী রকিবুল ইসলামকে নির্দেশনা দেয়া হলেও তার শশুরের মৃত্যুর কারণে শুক্রবার বিকেল অব্দি কোন সমঝোতা বৈঠক হয়নি। যার ফলশ্র“তিতে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস মহানগর বিএনপি ও নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অনুসারীরা পৃথকভাবে পালন করে। তবে রকিবুল ইসলাম বকুল ও নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সাথে গত কয়েকদিন একাধিকবার ফোনে কথা হয়েছে। নজরুল ইসলাম মঞ্জু চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে অসুস্থ রয়েছেন। যার কারণে তিনি রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছেনা। 
এদিকে রকিবুল ইসলাম বকুলের শ্বশুর বৃহস্পতিবার মারা যাওয়ায় তারা দুইজন একত্রে বৈঠক করতে পারেনি। শনিবার তিনি খুলনা-২ আসনের সকল থানার বিএনপি নেতৃবৃন্দে সাথে বৈঠক করবেন। 
এদিকে বিএনপি’র একটি সূত্র জানিয়েছে,  নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবং রকিবুল ইসলাম বকুলের ঐক্যমানে বিগত দিনগুলোর তুলনায় সব থেকে বেশি শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ হবে খুলনা মহানগর বিএনপি। তাদের ঐক্যের কারণে খুলনা-২ এবং খুলনা-৩ আসনেই বিএনপি নেতা-কর্মীরা ইতিমধ্যেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছে। বর্তমান মহানগর বিএনপি’র কমিটি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পক্ষে এবং দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা বিএনপি’র সাবেক সভাপতিসহ নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অনুসারীরা রকিবুল ইসলাম বকুলের পক্ষে মাঠে নামলে বিপুল ভোটে তারা জয় লাভ করবেন আগামী সংসদ নির্বাচনে আশাবাদ তৃণমূলে। 
নগরীর সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদ বলেন, মঞ্জু ভাই অসুস্থ থাকার কারণে রাজনৈতিক কোনো কার্যক্রমে উপস্থিত থাকতে পারছে না। বর্তমান কমিটির সাথে আমাদের কথা চলছে। খুব দ্রুত আমরা ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ শুরু করব।
মহানগর বিএনপি’র সভাপতি এস এম শফিকুল আলম মনা জানান, খুলনা-২ আসনে প্রচারণায় নামার বিষয়ে কেন্দ্র থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে এই বিষয়ে বিএনপি’র ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল আমাদের সবার সাথে বৈঠক করবেন। 
মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন বলেন, মঞ্জু ভাইকে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আমরা সকলে একত্রে তার পক্ষে কাজে নামবো। 
বিএনপি’র ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক এবং খুলনা-৩ আসনের ধানের শীষের সংসদ সদস্য প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, মঞ্জু ভাইয়ের সাথে কয়েকবার কথা হয়েছে। আমার শ্বশুর ইন্তেকালের কারণে বসতে পারিনি। শনিবার খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা থানার সকল পর্যায় নেতৃবৃন্দের সাথে বসবো। মঞ্জু  ভাইয়ের সাথে কথা বলে আগামীতে কিভাবে খুলনা-২ এবং খুলনা-৩ আসনে নির্বাচনী কাজ করবো তার একটি খসড়া করা হয়েছে।  দলের ভিতরে যে বিভেদ ছিল সেটি আর থাকবে না। তিনি আরো বলেন, মহানগর পার্টি অফিস সকলের। এটা দলীয় নেতা-কর্মীর জন্য উন্মুক্ত। 
সাবেক সংসদ সদস্য ও ধানের শীষের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু  বলেন, আমি চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পরে দুর্বল হয়ে পড়েছি। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর আমরা একসাথে কর্মসূচি পালনের বিষয়ে খুলনা-৩ আসনের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুলের উপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে তার শ্বশুরের ইন্তেকালের কারণে আমরা একসাথে বসতে পারিনি। আমার সাথে তার কয়েক দফা কথা হয়েছে। রোববার থেকে মহানগর বিএনপি’র নেতৃবৃন্দের সাথে যৌথভাবে নির্বাচনী প্রচারণা নামতে পারি।

্রিন্ট

আরও সংবদ