খুলনা | মঙ্গলবার | ১১ নভেম্বর ২০২৫ | ২৭ কার্তিক ১৪৩২

আইনের প্রতি সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ সমর্থন রয়েছে : প্রসিকিউশন

শেখ হাসিনার রায় ঘিরে অনিরাপদ বোধ করছে না প্রসিকিউশন

খবর প্রতিবেদন |
০১:২১ এ.এম | ১০ নভেম্বর ২০২৫


জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের রায় ঘিরে প্রসিকিউশন অনিরাপদ বোধ করছে না বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। রোববার  দুপুরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে চানখারপুলে ছয় হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তামিম বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণ হবে এ মাসের ১৩ তারিখে। এজন্য প্রসিকিউশনের প্রস্তুতির কিছু নেই। প্রসিকিউশন কোনো অনিরাপদ বোধও করছে না। আমাদের দায়িত্ব হলো ট্রাইব্যুনাল ও তদন্ত সংস্থা থেকে যেসব অভিযোগ আনা হয় সেসব প্রমাণের চেষ্টা করা, সাক্ষ্য উপস্থাপন করা ও যুক্তি-তর্ক তুলে ধরা। আর ট্রাইব্যুনালের দায়িত্ব হলো যুক্তিতর্ক ও সাক্ষ্য বিবেচনায় রায় দেওয়া। এর বাইরে প্রসিকিউশনের আর কোনো দায়িত্ব নেই।
১৩ নভেম্বর রায় হবে বলেছেন একজন উপদেষ্টা-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আসলে আমাদের সাধারণত যে মামলাগুলো ট্রায়াল কোর্টে বা হাইকোর্ট বিভাগে হয়, সেখানে রায়ের তারিখ নির্ধারিত থাকে যে আগামী অমুক তারিখে রায়। কিন্তু ট্রাইব্যুনালে এর আগে আমরা দেখেছি যে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ করা হয়। এবার ট্রাইব্যুনাল রায়ের দিন নির্ধারণের জন্য একটি তারিখ রেখেছেন, সেটি হলো ১৩ নভেম্বর। যারা নিয়মিত প্র্যাকটিস করেন না বা আইন-আদালতের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, তারা হয়ত একটু ভুল বুঝেছেন। আমি পরিষ্কার করছি যে, ১৩ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। ওই দিন রায় ঘোষণার দিন জানতে পারব আমরা।
রায়কে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিসহ রাজনৈতিক উত্তাপ নিয়ে সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে এই প্রসিকিউটর বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি গ্রহণ করবে। এর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেবে রাষ্ট্র বা সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রসিকিউশনের সঙ্গে এই রাজনৈতিক কর্মসূচি বা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের কোনো সম্পর্ক নেই। এই পরিস্থিতিতে কোনো বাড়তি চাপ অনুভব করছে না প্রসিকিউশন। তবে এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কয়েকটি সংস্থা কাজ করছে। তারা এ বিষয়ে যথার্থ ব্যবস্থা নেবে বলে আমরা আশা করছি।
দেশের আইনের প্রতি সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ সমর্থন রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর।  সেনা আইন নিয়ে জানতে চাইলে প্রসিকিউটর বলেন, এটার জবাব আমরা শুরুতেই দিয়েছি। চিফ প্রসিকিউটর স্যারও দিয়েছেন। এ ছাড়া সেনা সদর দপ্তরের প্রথম ও পরবর্তী দিনের সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রতীয়মান হয় যে, দেশের আইন এবং আদালতের ওপর সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ সমর্থন রয়েছে। এর প্রমাণ-নির্ধারিত তারিখের দিন তারা নিজেদের কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেছেন। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সহায়তা করায় প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীকে আমরা ধন্যবাদ জানিয়েছি।
আইনি ব্যাখ্যা দিয়ে গাজী এমএইচ তামিম বলেন, দু’টো আইনই দেশের স্পেশাল ল’ (বিশেষ আইন)। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হলো এমন একটি আইন, যেটি সংবিধানের প্রথম সংশোধনী দিয়ে প্রটেক্টেড (সুরক্ষিত) করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, এই আইন বাংলাদেশের প্রযোজ্য সব আইনের ওপর প্রাধান্য পাবে। সংবিধানের সঙ্গেও যদি এই আইন সাংঘর্ষিক হয় কোনো ক্ষেত্রে, তাহলে সংবিধান সেখানে সাইলেন্স হয়ে যাবে। অর্থাৎ এই আইনটি প্রাধান্য পাবে। এই আইন প্রাধান্য পাবে বলে ৭৩-এ-তে বলে দেওয়া আছে। অতএব এখানে সেনা আইন বা অন্য কোনো আইনে বিচারের সুযোগ নেই। ট্রাইব্যুনালের আইনেই বিচার হবে।
এদিকে, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে টিএফআই- জেআইসি সেলে গুমের দুই মামলাসহ জুলাই-আগস্টে রাজধানীর রামপুরায় ২৮ হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের হয়ে আইনি লড়াই করতে চান না বলে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সরওয়ার। এ দিন সকালে ওকালতনামা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহারের আবেদনের পর তা মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি মোঃ শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল। ফলে ওকালতনামা থেকে তার নাম প্রত্যাহার হয়।
গত ২২ অক্টোবর তিন মামলায় ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠান ট্রাইব্যুনাল। ওইদিন আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী সরওয়ার। এর পরদিনই তিনি সমালোচনার মুখে পড়েন।
উল্লেখ্য, গত ২৩ অক্টোবর শেখ হাসিনার এ মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন হয়। যুক্তিতর্ক শেষ হলে রায়ের দিন ধার্যের জন্য আগামী ১৩ নভেম্বর ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মোঃ শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মোঃ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ওই দিন ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজের প্রথমেই শেখ হাসিনার মামলায় সমাপনী বক্তব্য দেন এ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ আসাদুজ্জামান। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রধানমন্ত্রীসহ হেভিওয়েট নেতাদের যেভাবে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল, সেসব বর্ণনা ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরেন তিনি। একইসঙ্গে শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেন। পরে আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর যুক্তি উপস্থাপনের কয়েকটি বিষয়ে জবাব দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এরপর তাদের কিছু কথার পাল্টা উত্তর দেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন।
উল্লেখ্য, গুমের দুই মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৩ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। রামপুরায় ২৮ হত্যা মামলার শুনানি হবে ২৪ নভেম্বর।

্রিন্ট

আরও সংবদ