খুলনা | বুধবার | ১২ নভেম্বর ২০২৫ | ২৮ কার্তিক ১৪৩২

মাদকের মামলার এজাহারে মূল অপরাধীদের নাম কেন বাদ যায়

|
১২:১২ এ.এম | ১২ নভেম্বর ২০২৫


মাদক কেনাবেচা ও অর্থ পাচারে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম আর দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮৩ লাখের বেশি। দেশি আন্তর্জাতিক সংস্থার সা¤প্রতিক কালের প্রতিবেদনগুলোই জানাচ্ছে, দেশে মাদকের বিস্তার কতটা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। তা সত্তে¡ও বিচারিক প্রক্রিয়ার ত্র“টি ও দুর্বলতার কারণে মাদকের মামলায় ৫৯ শতাংশ আসামির সাজা না হওয়ার বিষয়টি যেমন উদ্বেগজনক, একই সঙ্গে মাদক নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত সংস্থা ও বাহিনীগুলোর সদিচ্ছা না থাকারও বহিঃপ্রকাশ।ঢাকাসহ ২৬টি জেলার বিভিন্ন আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া মাদকের ৫০০ মামলার রায় পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করেছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে মাত্র ২০৪টি মামলা, অর্থাৎ ৪১ শতাংশ মামলায় সাজা হয়েছে। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে মাদকের পৃষ্ঠপোষক, অর্থ জোগানদাতাদের মতো মূল আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান।
মাদকের উৎস বন্ধ না করে আর মূল আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু বাহক পর্যায়ে ও মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালালে কার্যত কোনো ফলাফল নিয়ে আসে না। নানা সময়ে পরিচালিত মাদকবিরোধী অভিযানগুলো তার বড় দৃষ্টান্ত। এরপরও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হাতেনাতে গ্রেফতার হওয়া আসামিদের সাজা না হওয়ায় তাঁরা নতুন করে অপরাধে যে জড়িয়ে পড়েন না, তার নিশ্চয়তা কী? মাদক মামলার একটি অভিযোগপত্রে মূল আসামিদের নাম উলে­খ না থাকাটা নিশ্চিত করেই পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গাফিলতি ও ব্যর্থতাকেই তুলে ধরে। অপরাধ প্রমাণ করার ক্ষেত্রে তদন্ত সংস্থার ব্যর্থতার পেছনে ১৬ ধরনের ঘাটতি খুঁজে পাওয়া গেছে। এর মধ্যে যেমন ত্র“টিপূর্ণ এজাহার, নিরপেক্ষ সাক্ষী না থাকা, জব্দতালিকা ঠিকভাবে না করার মতো বিষয় রয়েছে আবার মামলার তদন্তে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার তদারকি না থাকা ও রাষ্ট্রপক্ষের গাফিলতিও রয়েছে। ফলে এটা সহজেই বোধগম্য যে মাদক মামলার এজাহার দায়সারা, তদন্ত কতটা যেনতেনভাবে করা হয়। যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, বছরের পর বছর ধরে এ অবস্থার নড়চড় নেই।
দেশে প্রতিবছর মোট যে মামলা হয়, তার মধ্যে মাদকসংক্রান্ত মামলা সবচেয়ে বেশি। জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা মনে করে, যত মাদক বিক্রি হয়, ধরা পড়ে তার মাত্র ১০ শতাংশ। ২০২৩ সালে যেখানে ২ কোটি ৩০ লাখের মতো ইয়াবা ধরা পড়ে, ২০২৪ সালে ধরা পড়ে ২ কোটি ২৮ লাখ ইয়ারা। এই তথ্যে আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ নেই, কেননা গত বছর জুলাইয়ের পর থেকে দীর্ঘ সময় ধরে আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা অত্যন্ত ভঙ্গুর ছিল।আমরা মনে করি, মাদক প্রতিরোধে নিয়োজিত সংস্থাগুলোই শর্ষের মধ্যে ভূতের ভূমিকা পালন করে। না হলে কেন, সাফল্যের মাপকাঠি হবে-দায়ের করা মামলার সংখ্যা, উদ্ধারকৃত মাদকের পরিমাণ ও সংক্ষিপ্ত বিচারে আসামির সাজার হার দেখে। এতে কি মাদক পরিস্থিতির উন্নতি ও অবনতির বাস্তব কোনো চিত্র উঠে আসে?
মাদকের মতো সংঘবদ্ধ অপরাধে দায়সারা তদন্তের মানে হচ্ছে অপরাধী চক্রকে পৃষ্ঠপোষকতা করা। মাদকের ভয়াবহ রকমের বিস্তারের কারণে জনগোষ্ঠীর বিশাল একটা অংশের সম্ভাবনা যেমন ধ্বংস হচ্ছে, আবার নানা ধরনের অপরাধের সংখ্যাও বাড়ছে। মাদককে তাই যেকোনো মূল্যে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মাদক নিয়ন্ত্রণে সবার আগে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার প্রয়োজন। মাদকের মামলার বিচারে রাষ্ট্রপক্ষকে অবশ্যই আরও সক্রিয় হতে হবে। পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে মাদক প্রতিরোধে তাদের লক্ষ্য ও কর্মপন্থা খোলনলচে পাল্টাতে হবে। তদন্ত সংস্থা ও তদন্তকারীর গাফিলতিতে অপরাধীরা পার পেয়ে গেলে, তাদেরও জবাবদিহি করা প্রয়োজন।

্রিন্ট

আরও সংবদ