খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৩ নভেম্বর ২০২৫ | ২৮ কার্তিক ১৪৩২

নাগরিকদের নিরাপত্তা দিন

|
১২:০০ এ.এম | ১৩ নভেম্বর ২০২৫


সা¤প্রতিক সময়ে ক্রমবর্ধমান অপরাধপ্রবণতা ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতি মানুষের প্রধান উদ্বেগের কারণ হয়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত তিনটি প্রতিবেদন জননিরাপত্তার এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে। পুলিশের মাসিক অপরাধবিষয়ক প্রতিবেদনেও হত্যাসহ সাত ধরনের অপরাধ ৫ শতাংশ বৃদ্ধির তথ্য নিশ্চিত করেছে। পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে হত্যার ঘটনাটি প্রমাণ করে অপরাধীরা কতটা বেপরোয়া।
এভাবে প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ড জনসাধারণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। একই দিনে মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, চট্টগ্রাম, বগুড়াসহ সাত জেলায় চারটি খুন ও চারটি লাশ উদ্ধারের খবর দেশজুড়ে অপরাধপ্রবণতার বিস্তার নিশ্চিত করে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মুন্সীগঞ্জে সংঘর্ষ, মাদারীপুর ও চট্টগ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে পুত্র কর্তৃক বাবা খুন এবং বগুড়ায় মুরগি চুরি নিয়ে কাঠমিস্ত্রিকে কুপিয়ে হত্যার মতো ঘটনাগুলো পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনগুলোর দুর্বলতা এবং তুচ্ছ কারণে সহিংসতার আশ্রয় নেওয়ার প্রবণতা স্পষ্ট করে। এই ক্রমবর্ধমান নৈরাজ্য এটাই প্রমাণ করে যে আইনের শাসন এবং নাগরিক নিরাপত্তা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ডাকাতি-দস্যুতা, অপহরণ, নারী ও শিশু নির্যাতন, চুরি, সিঁধেল চুরি ও পুলিশের ওপর হামলার মতো সাতটি অপরাধের মামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে হত্যা মামলা ৩১৯টিতে (অক্টোবর) পৌঁছানো এবং পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা বৃদ্ধি (এক মাসে ২৬টি বৃদ্ধি) প্রমাণ করে সাধারণ নাগরিকের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তাও উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে এসেছে। বিষয়গুলো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কার্যকারিতা ও অপরাধ প্রতিরোধের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে।
অপরাধ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক প্রতিশোধস্পৃহা, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখলকে উলে­খ করা হয়েছে। যদিও পুলিশ সদর দপ্তর চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে। সমাজ বিশ্লেষকদের মতে, শুধু পুলিশি অভিযান যথেষ্ট নয়। অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর মতে, সামাজিক সচেতনতা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা গেলে অপরাধের হার কমানো সম্ভব।
হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস এখন আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়-এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য এক গুরুতর হুমকি। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ জরুরি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রেখে নিরপেক্ষভাবে কাজের সুযোগ দিতে হবে। অপরাধী যে-ই হোক তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ