খুলনা | শুক্রবার | ১৪ নভেম্বর ২০২৫ | ২৯ কার্তিক ১৪৩২

‘খুলনাঞ্চলের ৩৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি থাকছে বছরের অধিকাংশ সময়’

খবর বিজ্ঞপ্তি |
০১:৫৬ এ.এম | ১৪ নভেম্বর ২০২৫


খুলনা-যশোর অঞ্চলের প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ বছরের অধিকাংশ সময় জুড়ে পানিবন্দি অবস্থায় থাকছে বলে মন্তব্য করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের পশ্চিমাঞ্চল জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জল কুমার সেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, খুলনার ডুমুরিয়া ও যশোরের অভয়নগর ও কেশবপুরসহ এ অঞ্চলের অনেক নদীতে এখন মানুষ ঘরবাড়ি করে বাস করছেন। এটি পরিবেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ফারাক্কার বাঁধের কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য দেশের নদীগুলো প্রায় মরে গেছে। কৃষক তাদের ফসল ফলাতে পারছে না। অথচ দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। লবণ পানির কারণেও কৃষক তাদের কৃষির ওপর নির্ভরতা হারাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিতান কুমার মন্ডল, খুলনা সিটি কর্পোরেশন সচিব শরীফ আসিফ রহমান, বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ আসিফুর রহমান এবং সহকারী পরিচালক মোঃ মইনুল হক, মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুরাইয়া সিদ্দিকা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. নাজমুস সাদাত, ইউএনডিপি’র সুমাইয়া সিদ্দিকী ও যমুনা টিভির খুলনা ব্যুরো প্রধান শেখ আল এহসান।
বক্তারা বাংলাদেশের ক্লাইমেট পলিসিগুলোতে জেন্ডার এবং যুব সমাজের অংশগ্রহণের সমস্যা এবং সমাধানের নানা দিক তুলে ধরেন। দ্যা আর্থ এর প্রজেক্ট কোর্ডিনেটর শরৎ স্বাধীন অনুষ্ঠানে  Bridging the Gap-Integrating Gender and Youth Perspective in Bangladeshs Climate Policies শীর্ষক গবেষণা রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। যেখানে পলিসির নানা সীমাবদ্ধতা ও উপযোগী সমাধান তুলে ধরা হয়।
সভায় জানানো হয়, বিশ্বে মোট পানির ৯৭ শতাংশই লবণাক্ত, যা মহাসাগরে জমা আছে। বাকি মাত্র ২.৫ থেকে ২.৭৫ শতাংশ হলো মিঠা পানি, যার বড় অংশই জমে আছে মেরু ও হিমবাহে। ভূগর্ভে রয়েছে প্রায় ০.৫০ থেকে ০.৭৫ শতাংশ এবং নদী-হ্রদসহ উন্মুক্ত জলাশয়ে মাত্র ০.০১ শতাংশ পানি। পৃথিবীর মোট পানির মাত্র ০.০০০১ শতাংশ প্রবাহিত হয় নদীতে-এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মিঠা পানি রয়েছে মাত্র ছয়টি দেশে : ব্রাজিল, রাশিয়া, কানাডা, ইন্দোনেশিয়া, চীন ও কলম্বিয়ায়।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ২.২ বিলিয়ন মানুষ নিরাপদ পানির অভাবে ভুগছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি-৬) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সবার কাছে নিরাপদ পানি পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও বাস্তবে তা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে।
খুলনায় পানি ব্যবস্থাপনার বাস্তব চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) খুলনা জোনে বর্তমানে রয়েছে ৪১টি উপক‚লীয় পোল্ডার, মোট ১,৯৩৪.২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ এবং ৯৮৪টি পানি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো (স্লুইসগেট ও রেগুলেটর)। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর এলাকা উপকৃত হচ্ছে। 
তবে বাপাউবোর স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, পানি নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারে বাজেট বরাদ্দ অত্যন্ত অপ্রতুল। বর্তমানে চাহিদার মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ অর্থই পাওয়া যায়, যা দিয়ে কার্যকর রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব নয়।

্রিন্ট

আরও সংবদ