খুলনা | সোমবার | ১৭ নভেম্বর ২০২৫ | ২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা চরম ঝুঁঁকিতে ভাঙতেই হবে রাজনৈতিক দুষ্টচক্র

|
১১:৫৩ পি.এম | ১৫ নভেম্বর ২০২৫


বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এক দ্বিমুখী অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি। একদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারাধীন মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য হয়েছে, যা এক নতুন বিচারিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। অন্যদিকে সেই বিচারকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে আবারও আগুন সন্ত্রাসের এক দুঃসহ পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা চরম ঝুঁকিতে ফেলেছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় আগামী ১৭ নভেম্বর ঘোষণা করা হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ কর্তৃক এই মামলার বিচারকাজ শেষ হওয়া জুলাই অভ্যুত্থানের ঘটনায় বিচারাধীন মামলাগুলোর মধ্যে প্রথম। চিফ প্রসিকিউটর এই রায়কে ‘দৃষ্টান্ত’ হিসেবে দেখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে অঙ্গীকার করেছেন যে দেশে যে-ই যত শক্তিশালী হোক না কেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ করলে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। অন্যদিকে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবীর প্রত্যাশা, তাঁর মক্কেলরা খালাস পাবেন। এই মামলার রায় বাংলাদেশের বিচারিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করতে যাচ্ছে।
কিন্তু রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতির যেভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, সেটিই আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির সবচেয়ে দুর্বল জায়গাকে সামনে আনে-সহিংসতা ও ধ্বংসাত্মক রাজনীতির অপ্রতিরোধী দুষ্টচক্র।
২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের নৃশংস আগুন সহিংসতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতারা যে নৈতিক অবস্থানের দাবি করতেন, আজ তাঁদেরই কর্মসূচি ঘিরে একই ধরনের অপরাধ সংঘটিত হওয়া জনমনে হতাশা সৃষ্টি করেছে। নিরাপত্তা বাহিনী সন্দেহের তীর তাঁক করেছে নিষিদ্ধ দল ও এর অঙ্গসংগঠনের দিকে; গ্রেফতারও হয়েছে অনেকে।
রাজনীতি যেখানেই আগুন সন্ত্রাসের বৈধতা খোঁজে, সেখানেই নষ্ট হয় গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতা ও সহনশীলতার বোধ।
মানবাধিকারকর্মীদের যুক্তি যথার্থকোনো সভ্য দেশে মতের লড়াই হয়, কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনকে কখনো শত্র“ বিবেচনা করা হয় না। পরিবহন শ্রমিকের মৃত্যু কিংবা আগুনে সাধারণ মানুষের দগ্ধ হওয়া কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির অংশ হতে পারে না। এটি মানবতাবিরোধী অপরাধেরই একটি রূপ, যাকে অতীতে যেভাবে নিন্দা করা হয়েছে, আজও ঠিক সেভাবেই রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে নিন্দা করতে হবে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অগ্নিসন্ত্রাস রাষ্ট্রকে অকার্যকর এবং সমাজে ভীতিকর অবস্থা তৈরির জন্য ঘটানো হয়। এই সমস্যা এখন আর দেশের অভ্যন্তরে সীমাবদ্ধ নেই, বরং আন্তর্জাতিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
এখন রাষ্ট্রের সামনে দু’টি অপরিহার্য দায়িত্ব-প্রথমত, বিচারিক প্রক্রিয়াকে ধুলোমুক্ত ও প্রভাবমুক্ত রাখা; দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক সহিংসতা রোধে আপসহীন অবস্থান নেওয়া। রাজনৈতিক দলগুলো যদি দায়িত্বশীল আচরণ না করে এবং জনগণ যদি সহিংসতার বিরুদ্ধে নৈতিক অবস্থান না নেয়, তবে সামনে আরো কঠিন সময় আসতে পারে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক সহনশীলতা ও নাগরিক নিরাপত্তা এই তিনের সমন্বয়েই দেশকে দুঃসহ চক্র থেকে বের করে আনা সম্ভব।

্রিন্ট

আরও সংবদ