খুলনা | রবিবার | ১৬ নভেম্বর ২০২৫ | ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

অর্ধশতাধিক বাস ভাঙচুর

বরিশালে হাফ ভাড়া নিয়ে সংঘর্ষ, আহত অর্ধশত

খবর প্রতিবেদন |
০১:২১ এ.এম | ১৬ নভেম্বর ২০২৫


বরিশালের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে হাফ ভাড়া নিয়ে বিরোধের জেরে বাস শ্রমিকদের সঙ্গে বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজ (বিএম কলেজ) শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

ভাঙচুর করা হয়েছে অন্তত ৫০টির মতো বাস, যার মধ্যে শ্রমিকরা দাবি করছেন-তাদের ১০টির বেশি বাস সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর হয়ে গেছে।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মুলাদী থেকে বরিশালমুখী বাসে হাফ ভাড়া ইস্যুকে কেন্দ্র করে প্রথম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, বিএম কলেজের দুই শিক্ষার্থী শিক্ষার্থী পরিচয়ে অর্ধেক ভাড়া দিতে চাইলে শ্রমিকরা তা নিতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে তর্কাতর্কি শুরু হয়, পরে হাতাহাতি এবং শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের সংঘর্ষে রূপ নেয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হিজলা থেকে বরিশাল ফেরার পথে বিএম কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আবুবকর হাফ ভাড়া দিতে গেলে বাসের এক স্টাফ তাকে গালিগালাজ করে এবং শারীরিকভাবে হেনস্থা করে। এর পরপরই ছাত্ররা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ করলে শ্রমিকরা প্রথম হামলা চালায় বলে দাবি করেছে শিক্ষার্থী পক্ষ।

বিএম কলেজ শিক্ষার্থী রাজু জানান, ‘হিজলা থেকে ফেরার পথে আবুবকরকে হাফ ভাড়া দিতে গেলে স্টাফরা খারাপ ভাষায় গালি দেয়, তাকে ধাক্কাধাক্কি করে। আমরা প্রতিবাদ করলে শ্রমিকরা প্রথম হামলা চালায়। পরে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে কলেজের আরও শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে আসে।’

এ ঘটনার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে শতাধিক শিক্ষার্থী নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে জড়ো হয়ে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে বিচার দাবি করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে শ্রমিকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আবার ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অনুযায়ী-এই সংঘর্ষে ৩০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী আহত হন।

অপরদিকে শ্রমিকদের দাবি সম্পূর্ণ ভিন্ন। শ্রমিকরা বলেন, শিক্ষার্থীরা সংগঠিত হয়ে টার্মিনালে প্রবেশ করার পর তাদের ওপর হামলা চালায় এবং অর্ধশতাধিক বাস ভাঙচুর করে। শ্রমিক নেতা আরজু মৃধা বলেন, ‘আজ কলেজ বন্ধের দিনও হাফ ভাড়া নিয়ে বিরোধ হয়েছিল। সন্ধ্যায় কয়েকশ শিক্ষার্থী হঠাৎ নথুল্লাবাদ স্ট্যান্ডে এসে দাঁড়িয়ে থাকা বাসগুলোতে হামলা চালায়। ৫০টির মতো বাস ভাঙচুর করেছে। আমাদের প্রায় ১৫–২০ জন শ্রমিক মারাত্মক আহত হয়েছেন।’

তিনি আরও অভিযোগ করেন, শিক্ষার্থীরা বিচার চাইতে আসার কথা বললেও আচরণ ছিল হামলাত্মক।

এদিকে শিক্ষার্থীরা পাল্টা দাবি করেন, তারা বিচার চাইতে গেলে শ্রমিকরাই গুরুত্ব না দিয়ে আরও উত্তেজনা তৈরি করে এবং তাদের ওপর চড়াও হয়।

টার্মিনালে উপস্থিত একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘হাফ ভাড়া নেওয়া আইনসঙ্গত অধিকার। অথচ শিক্ষার্থী পরিচয় দেখানোর পরও বাস শ্রমিকরা আমাদের লাঞ্ছিত করে। আমরা বিচার চাইতে গেলে তারা আবার আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমাদের অন্তত ২৫ জন আহত হয়।’

সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। নথুল্লাবাদ-বিমানবন্দর সড়কসহ আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। টার্মিনালের দোকানপাটও বন্ধ হয়ে যায়। পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

রাত ৯টা পর্যন্ত টার্মিনাল এলাকায় টান টান উত্তেজনা বিরাজ করে এবং ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বাস ভাঙচুরের ঘটনাও চলছিল বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

ঘটনার খবর পেয়ে বরিশাল বিমানবন্দর থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

বিমানবন্দর থানার ওসি মামুন উল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। শিক্ষার্থী ও শ্রমিক উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। পরিস্থিতি যাতে আর না বাড়ে সে দিকেই আমাদের নজর।’

এ ঘটনায় শ্রমিকদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তারা হামলার ন্যায্য বিচার দাবি করবেন এবং হাফ ভাড়া ইস্যুতে ছাত্রদের অধিকার নিশ্চিত করার দাবি তুলবেন।

নথুল্লাবাদ টার্মিনাল-কেন্দ্রিক এই সংঘর্ষে শহরের সাধারণ যাত্রী, দোকানদার ও স্থানীয় মানুষও ভীষণভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, গত কয়েক বছরে নথুল্লাবাদে এতো বড় উত্তেজনা আর দেখা যায়নি।

ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশ টহল অব্যাহত রেখেছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ