খুলনা | শুক্রবার | ২১ নভেম্বর ২০২৫ | ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

ভূমিকম্পে ৪ জেলায় নিহত ৮, আহত দুই শতাধিক

খবর প্রতিবেদন |
০৬:২৯ পি.এম | ২১ নভেম্বর ২০২৫


রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অনুভূত শক্তিশালী ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত আট জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকায় তিনজন, নরসিংদীতে তিনজন, নারায়ণগঞ্জে একজন এবং গাজীপুরে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। বহু ভবন-স্থাপনায় ফাটল দেখা গেছে।

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়।

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এর উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী। কম সময় স্থায়ী হলেও ভূমিকম্পের তীব্রতায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার ভবন দুলতে থাকে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মধ্যে। মানুষ ভবন থেকে নিচে নেমে আসেন।

ঢাকা ছাড়াও খুলনা, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, রংপুর, সাতক্ষীরা, যশোর, কুমিল্লা, রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, সিলেট, ফেনী, মাদারীপুর, ঝালকাঠি, দিনাজপুরসহ দেশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়েই কম্পন অনুভূত হয়। এর প্রভাব ভারতের কিছু এলাকাতেও পড়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় এখন পর্যন্ত ২০৮ জন চিকিৎসা নেওয়ার তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের পরিচালক ডা. মঈনুল আহসান বলেন, ‘সব হাসপাতালে জরুরি বার্তা দেয়া হয়েছে। আহতদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সব সহায়তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। টেলিফোনে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে—ঢাকাসহ গাজীপুর, নরসিংদী ও আশপাশের জেলাগুলোর বিভিন্ন হাসপাতালে আহত রোগীর চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

ঢাকায় রেলিং ভেঙে নিহত ৩
রাজধানীর বংশালের কসাইটুলী এলাকায় একটি পাঁচ তলা ভবনের রেলিং ভেঙে নিচে পড়ে তিন পথচারীর মৃত্যু হয়।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রেলিং ভেঙে পড়ার পর রক্তাক্ত অবস্থায় তিন জন পথচারী রাস্তার ওপর পড়ে আছেন। আশপাশের মানুষ ছুটে এসে তাদের উদ্ধার করেন।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অনেক ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।

নরসিংদীতে ভূমিকম্পের প্রভাবে বাবা-ছেলেসহ নিহত তিন
নরসিংদীতে তীব্র ভূমিকম্পের প্রভাবে ভবনের রেলিং ভেঙে আহত হয়ে বাবা-ছেলেসহ তিনজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে নরসিংদীর দুই উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- ওমর (১০), দেলোয়ার হোসেন (৩৭) ও কাজম আলী (৭৫)।

নিহত ওমর ও দেলোয়ার সম্পর্কে বাবা-ছেলে। তাদের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার উত্তর পাড়া গ্রামে। বর্তমানে পরিবারটি নরসিংদীর গাবতলি এলাকায় বসবাস করছিলেন।

অপর দিকে নিহত কাজম আলী পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের মালিতা গ্রামের বাসিন্দা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার প্রবল ভূমিকম্পে ভবনের রেলিং ভেঙে নরসিংদী সদর উপজেলার গাবতলি এলাকার ভাড়াটিয়া দেলোয়ার এবং শিশু ওমর গুরুতর আহত হলে তাদেরকে প্রাথমিকভাবে স্থানীয়রা চিকিৎসার জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থা গুরুতর দেখে চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে তাদের মৃত্যু হয়।

এছাড়াও ভূমিকম্পের সময় দেয়াল চাপায় পলাশ উপজেলার কাজম আলীর মৃত্যু হয়।

ঢামেকে ওমরের চাচা জাকির হোসেন জানান, ভূমিকম্প শুরু হলে দেলোয়ার হোসেন তিন সন্তানকে নিয়ে দ্রুত বাসা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এসময় বাড়ির ছাদের রেলিং ভেঙে তাদের ওপর পড়ে। এতে ওমর ও তার বাবা গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেন। পরে বাবা ও ছেলেকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসক ওমরকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ওমরের বাবা দেলোয়ারও মারা যায়।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মেনহাজুল আলম বলেন, ভূমিকম্পে জেলায় বিভিন্ন জায়গায় আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। আমরা একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। যে কোনো দুর্যোগে জেলা পুলিশ সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছে। পুলিশ তাদের নিরাপত্তায় সচেষ্ট রয়েছে।

গাজীপুরে গাছ থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু
গাজীপুরের কালীগঞ্জের নাগরী ইউনিয়নে একটি গাছ থেকে পড়ে সুজিৎ দাস (৩৮) নামের এক যুবক মারা যান। তাকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ভূমিকম্পের ফলে শাদেরগাঁ জামে মসজিদের দুটি গম্বুজও ভেঙে গেছে এবং বিভিন্ন স্থাপনা ও একটি স্কুল ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।

নারায়ণগঞ্জে দেয়াল চাপায় এক শিশু নিহত
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভূমিকম্পের সময় একটি টিনশেড বাড়ির দেয়াল ধসে পড়ে ফাতেমা নামের এক বছর বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় শিশুটির মা কুলসুম বেগম ও প্রতিবেশী জেসমিন বেগম আহত হন।

নিহত ফাতেমা গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ইসলামবাগ এলাকার আব্দুল হকের মেয়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত ও আহতদের পরিচয় নিশ্চিত করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভূমিকম্প শুরু হলে কুলসুম বেগম মেয়েকে নিয়ে ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় যাচ্ছিলেন। এ সময় রাস্তার পাশে টিনশেড বাড়িটির দেয়াল ভেঙে তাদের ওপর পড়ে। স্থানীয়রা দ্রুত তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন।

গাজীপুরে শতাধিক শ্রমিক আহত
অপরদিকে ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হয়ে গাজীপুরের শ্রীপুরে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে শতাধিক পোশাক শ্রমিক আহত হয়েছেন।

ভূমিকম্পে উঁচু ভবন দুলতে শুরু করলে ঘরবাড়ি, অফিস, শিল্পকারখানা, দোকানপাট থেকে বের হয়ে মানুষ দ্রুত খোলা জায়গায় ছুটে আসে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শ্রীপুর উপজেলার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি ডেনিমেক কারখানা ও নগরীর ইটাহাটা এলাকায় স্থানীয় কোস্ট টু কোস্ট কারখানায় ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে শতাধিক শ্রমিক আহত হন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আবার অনেকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

শ্রীপুরের ডেনিমেক কারখানার শ্রমিকরা জানান, সকালে কারখানার সাততলা ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে কাজ চলছিল। হঠাৎ ভূমিকম্প শুরু হলে ভবন দুলতে থাকে। এ সময় সাইরেন বেজে উঠলে কারখানার শ্রমিকরা ভয়ে দ্রুত নিচে নামতে গেলে পদদলিত হয়ে অনেক শ্রমিক আহত হন।

এছাড়া, গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী, জয়দেবপুর ও জেলার কালিয়াকৈর, শ্রীপুর, কালীগঞ্জ ও কাপাসিয়াজুড়ে হঠাৎ মোবাইল নেটওয়ার্কে চাপ বৃদ্ধি পায়। কলড্রপ ও নেটওয়ার্ক জটিলতার সৃষ্টি হয়।

গাজীপুরের নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলম হোসেন বলেন, গাজীপুরে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। কিছু শ্রমিক হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে আহত হয়েছেন। 

্রিন্ট

আরও সংবদ