খুলনা | বুধবার | ২৬ নভেম্বর ২০২৫ | ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র যবিপ্রবি

নিজস্ব প্রতিবেদক |
১১:৪৫ পি.এম | ২৫ নভেম্বর ২০২৫


যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আমবটতলা মোড়ে যশোর–চৌগাছা সড়কে এ ঘটনা ঘটে। পরে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে থেমে থেমে চলে দুপক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। থেমে থেমে চলা এই সংঘর্ষে অন্তত ৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যবিপ্রবির এক নারী শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের সামনে আমবটতলা মোড়ে ফটোকপির দোকানে যান। দোকানদার ওই শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত করেন। পরে ক্ষিপ্ত হয়ে যবিপ্রবির কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই দোকানদারকে মারধর করেন।

এসয় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় তাদের মধ্যে গোলযোগের সৃষ্টি হয়। যা এক পর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়। ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হন। এক পর্যায়ে মাইকে ঘোষণা শুনে ব্যবসায়ীদের সাথে যোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের তিন গ্রাম ইসলামপুর, শ্যামনগর ও সাজিয়ালির লোকজন। উভয়পক্ষ লাঠিসোটা হাতে মুখোমুখি অবস্থান নেয়।দীর্ঘক্ষণ ধরে চলা যশোর- চৌগাছা সড়কের উপর ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ি করে দুই পক্ষই। এতে অন্তত ৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। পরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ঢুকে গেলে; স্থানীয় ক্যাম্পাসের সামনের সড়কে টায়ার বেঞ্চ পুড়িয়ে দিয়ে বিক্ষোভ করে। এতে সড়কটিতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে স্থানীয় ফাঁড়ি, থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এলাকাবাসী মাইকিং করে আশপাশ থেকে লোক জড়ো করে বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে, এলাকাবাসীর অভিযোগ শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধভাবে স্থানীয়দের ওপর হামলা চালিয়ে মারপিট ও ভাংচুর করেছে। উভয়পক্ষই দাবি করেছে, তারা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।

রাত সোয়া ৯টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা ও যবিপ্রবি’র সাবেক শিক্ষার্থী রাশেদ খান মোবাইলে জানান, চার গাড়ি সেনা সদস্যদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক পুলিশ, ডিবি পুলিশ এবং র‌্যাব সদস্য রাত পৌনে ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তারা উভয়পক্ষকে শান্ত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ভূমিকা পালন করেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসী-উভয়পক্ষকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরিয়ে দেন। পাশাপাশি তারা যশোর-চৌগাছা সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক করতে কাজ করছেন বলেও জানান রাশেদ খান। তিনি বলেন, এই সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে, যা স্বাভাবিক করতে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে।

অন্যদিকে, যবিপ্রবি শিক্ষকরা উদ্যোগী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদেরকে একস্থানে জড়ো করে ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল মজিদ বলেন, স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেছে। অন্তত ৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে শুনেছি। গুরুতর আহত হয়েছে কিনা, এই মুহূর্তে বলা সম্ভব যাচ্ছে না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ আনতে না পারায়; পরে সেনাবাহিনী, পুলিশসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের আহ্বান জানায়। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, কি কারণে এ ঘটনাটি ঘটেছে।

রাত ১০টার দিকে মোবাইলে যবিপ্রবি’র ডেপুটি রেজিস্ট্রার নিত্যানন্দ পাল ঘটনাস্থল থেকে জানান, শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। তাদেরকে শান্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল মজিদসহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সাথে কথা বলছেন।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন রাত সাড়ে ৮টার দিকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আহতের সংখ্যা বলা যাচ্ছে না। পরে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানান তিনি।

্রিন্ট

আরও সংবদ