খুলনা | শুক্রবার | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ | ২১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

ময়লা আবর্জনা আর দুর্গন্ধে ভরা মোংলা কসাইখানা

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাজারজাত করা হচ্ছে বিভিন্ন পশুর মাংস

মাহমুদ হাসান, মোংলা |
০২:১০ এ.এম | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫


মোংলা পোর্ট পৌরসভার কসাইখানার অবস্থা দেখলেই মাংস খাওয়ার স্বাদ মিটে যায়। দীর্ঘদিনেও মেরামত ও সংস্কার না হওয়ায় ভেঙ্গে গেছে ঘর, উড়ে গেছে টিনের চালা, নেই পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। চর্তুদিকে পচাগলা ময়লার স্তূপের মাঝখানে জবাই করা হয় গরু, ছাগল ভেড়াসহ বিভিন্ন পশু। ঠিক সেই খানেই ফেলে রাখা হয় জবাইকৃত পশুর নাড়ি-ভুড়ি হাড়গোড়সহ সব রকমের বজর্¦। যেখানে-সেখানে ছড়ানো ছিটানো ময়লার স্তূপ, পচা-গলা রক্ত মাংস আর হাড়গোড়ে ধরেছে পোকা। অস্বাস্থকর পরিবেশে প্রস্তুত করা হচ্ছে বাজারজাত করা মাংস। ফলে নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কসাইদের। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন কিলখানা তৈরি করার জন্য বরাদ্ধ হয়েছে টাকা, তবে কাজ এখনও শুরু করা হয়নি, নতুন কসাইখানা তৈরি হলে থাকবেনা দুর্ভোগ। 
মাংস ব্যবসায়ীরা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, মোংলা পোর্ট পৌরসভা স্থাপিত হয় ১৯৭৫ সালে। সেই থেকেই শহরের প্রাণকেন্দ্রে গড়ে উঠেছে মোংলা পোর্ট পৌর কসাইখানাটি। বর্তমানে পৌরসভাটি যদিও প্রথম শ্রেণিতে উন্নত হয়েছে-হয়েছে রাস্তা ঘাটও। দেখতেও সৌন্দর্য বর্ধন, কিন্তু কসাইখানাটি এখন রয়েছে নেই আগের মতোই। পুরোনো আমলের কসাইখানায় নেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা। জমে আছে রক্ত আর ময়লা পানি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় তৈরি হয়েছে গোবরের স্তূপ। স্যাঁতসেঁতে অবস্থা, পানি জমে জন্ম নিয়েছে পোকা। আর সেখানেই জবাই করা হচ্ছে গরু, ছাগল, ভেড়া মহিসসহ বিভিন্ন পশু প্রাণী। পাশেই জবাই করা গরু মহিসের ভুড়ি, চামড়া ও গোশতের উচ্ছিষ্ট ফেলা হয়েছে। সেখানে কাকের ঝাঁক আর দলে দলে কুকুরের আনাগোনা। আস্ত চামড়া ছেলা গরু আর গোশতের বড় বড় অংশের ওপরে নোংরা পায়ে বসে ঝিল্লি টেনে ছেঁড়ায় ব্যস্ত কাক। একই ভাবে কুকুরগুলোও হেঁটে বেড়াচ্ছে মাংসের পাশ দিয়ে। কসাইখানায় করা হচ্ছে না পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষারও। চর্তুদিকে পোকায় কিলবিল করছে, তার মধ্যে জবাই করা হয় পশু এবং সেখানে বসেই প্রস্তুত করা হয় বাজারজাতকৃত মাংস প্রস্তুত। 
জানা যায়, এখানে প্রায় ৬০ জন কসাই বা মাংস ব্যাবসায়ী রয়েছে। মোংলা বন্দরনগরী হওয়ায় সপ্তাহের ৪ দিন জবাই হয় পশু। প্রতিদিন ৫০-৬০টি গরু-মহিষ, ২০/২৫টি ছাগল ও ভেড়ার মাংস প্রস্তুত করে বাজারজাত করার জন্য। এতে গরু ১০০, মহিষ ২০০ ও ছাগল প্রতি ৫০ টাকা করে দিতে হয় পৌরসভাকে। এছাড়া মাংস ব্যবসাযীদের প্রতি বছর ট্রেড ও স্যানেটারী লাইসেন্স করতে হয় মোটা অংকের টাকা দিয়ে। পৌর কর্তৃপক্ষ সরকারি ভাবে নির্ধারিত টাকা নিলেও ফিরেও তাকায় না এর পরিবেশের দিকে। এছাড়া কসাইখানাটি পর্যাপ্ত জায়গার সংকট, চারপাশে দুর্গন্ধযুক্ত আবর্জনার স্তূপ, নেই পানির ব্যবস্থা, কুকুর আর কাকের উপদ্রব, খোলা জায়গায় রোদ-বৃষ্টিতে কসাইদের দুর্ভোগতো লেগেই আছে। এতো কিছু দিয়েও পৌর সেবা থেকে বঞ্চিত এ সকল ব্যবসায়ীরা। কসাইদের কষ্টের কথা একাধিকবার জানিয়েও কিছুই করেননি পৌর কর্তৃপক্ষ বলে জানায় মাংস ব্যবসায়ীরা।
মাংস ব্যবসায়ী সমিতি সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, মোংলার মাংস ব্যবসাযীদের দুর্ভোগের অন্ত নেই, যেখানে মাংস রেখে বিক্রি করা হচ্ছে সেখানেও স্থায়ী কোন দোকান নেই। বন্দর এবং পৌর কর্তৃপক্ষকে বার বার আবেদন করেও কোন ফল হয়নি। বন্দরের জায়গা পুরাতন একটি সেই মান্ধাতার আমলের কসাইখানা সেখানেই জবাই করা হয় পশু। এটি একটি বন্দর নগরী, এখানে দেশি-বিদেশি নাবিক, পর্যটকদের আনাগোনা রয়েছে। আমাদের কসাইখানার পরিবেশ যদি নিজ চোখে দেখে জীবনেও আর মাংস খেতে চাইবে না। আমরা সরকারসহ পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে একটি ভাল মানের কসাইখানা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থার দাবি জানাই।   
মোংলা পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার সুমী জানান, কসাইখানার বেহাল অবস্থা দেখে নতুন ঘর নির্মাণ, পানি ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যার ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। নতুন ভবন ও পরিবেশ বান্ধব কসাইখানা তৈরির প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে, প্রকল্পটি শেষ হলে মাংস ব্যবসায়ীদের আর দুর্ভোগ থাকবেনা। 
১৯৭৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোংলা পোর্ট পৌরসভায় ১১ জন পৌর চেয়ারম্যান ও মেয়র ক্ষমতা বা অবস্থার পরিবর্তন হলেও কসাইখানাটি রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায় একই রকম। উন্নতমানের একটি পরিবেশ বান্ধব কসাইখানা প্রতিষ্ঠিত হবে এমন প্রত্যাশা মোংলাবাসীর।

্রিন্ট

আরও সংবদ