খুলনা | বুধবার | ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ | ২৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

ভোমরা বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু সাতক্ষীরায় দাম কমলো কেজিতে ৩০ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা |
০১:৫০ এ.এম | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫


বাজার স্থিতিশিল রাখতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির সরকারিভাবে অনুমতির ২৪ ঘন্টা না পেরুতেই সাতক্ষীরার পাইকারি বাজারে দাম কমেছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। নতুন মৌসুমের দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসা এবং সরকারের আমদানির অনুমতির পর এই দাম কমেছে বলে জানান ব্যবসায়িরা। নিত্য প্রয়োজনীয় এই মসলা জাতীয় পণ্যটির দাম কমায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে।
সোমবার সকালে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, রোববার পর্যন্ত কেজি প্রতি ১৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া পুরাতন পেঁয়াজ এখন ১১০ টাকায়  এবং ১০০ থেকে ১০৫ টাকা দরে বিক্রি হওয়া নতুন মেহেরপুর জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি।
সুলতানপুর বড়বাজারের ব্যবসায়ি আব্দুল­াহ মোহাম্মদ তুহিন জানান, পুরো বছর দেশি পেঁয়াজের মাধ্যমে দেশের চাহিদা মিটেছে। ফলে কৃষকরা এবার ন্যায্যমূল্য পেয়েছেন এবং বৈদেশিক মুদ্রারও সাশ্রয় হয়েছে। কিন্তু মৌসুমের শেষ দিকে কিছু ব্যবসায়ির অধিক মুনাফার আশায় উচ্চ মূল্যের চেষ্টা বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছিল। তাই সরকার আমদানির অনুমতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাতারাতি দাম কমে গেছে।
সুলতানপুর বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা ক্রেতা নূরুল আলম জানান, সরবরাহ কমের অজুহাতে হঠাৎ করে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এতে আমাদের কিনতে সমস্যা হয়। এত টাকা দিয়ে পেঁয়াজ কিনলে আরও অন্যান্য বাজার কী দিয়ে করব। দেশি পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ এবং ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি  ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে থাকলে আমাদের জন্য ভালো হয়।
ক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, রোববার যে পেঁয়াজ ১০৫ ও  ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে আজ তা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৭০ এবং ১১০ টাকায়। সরকার আমদানির অনুমতি দিতেই দাম কমেছে। এখানে ব্যবসায়িদের কারসাজি আছে। অধিক লাভের আশায় কিছু কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করে দেয়। এতে করে আমাদের সাধারণ মানুষদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আমরা চাই নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হোক। তাহলে বাজারে কম দামে পেঁয়াজ আসবে।
বাজারে পেঁয়াজ বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, কয়েক দিন থেকে পেঁয়াজের বাজার বাড়তি। এ সময় আমরা প্রতিদিন অল্প অল্প পেঁয়াজ কিনে বিক্রি করেছি। ভারত থেকে আমদানির খবরে পেঁয়াজের দাম কমেছে। এতে করে আমরা কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারছি এবং কম দামে খুচরা বাজারে বিক্রিও করছি।
সুলতানপুর বড়বাজারের আড়তদার মেসার্স মোল্যা ভান্ডারের প্রোঃ মো. আজিজুল ইসলাম মোল­া জানান, বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এমনিতে পুরাতন পেঁয়াজের মজুদ শেষের দিকে। যে কারণে পুরতান পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকায় দামও বেড়ে যায়। একই সাথে বেড়ে যায় নতুন পেঁয়াজের দাম। তবে নতুন মৌসুমের দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় এবং সরকারের আমদানির অনুমতির পর দাম কমতে শুরু করেছে। পাইকারিতে আজ দেশি পুরাতন পেঁয়াজ ঢেলে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা এবং নতুন পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেজি। এসব পেঁয়াজ বস্তা কাটায় আরো ২ টাকা করে কম। আমদানি করা ভারতীয় পেয়াজ বাজারে ঢুকলে দাম আরো কমে যাবে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরার ভোমরা  স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে এটি অল্প পরিসরে। প্রতিদিন ৫০ জন আমদানিকারক আইপি পাবেন এবং একজন আমদানিকারক ৩০ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে পারবেন। সরকারের কাছে অনুরোধ পেঁয়াজ আমদানির জন্য আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক। তাহলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও কমে আসবে।
ভামরা স্থলবন্দর কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান জানান, সরকারিভাবে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার পরই রোববার বিকালে ভোমরা বন্দর দিয়ে এক গাড়িতে ৩০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বাংলাদেশে এসেছে। ভোমরা স্থল বন্দরের মেসার্স সামি এন্টারপ্রাইজ এই পেঁয়াজ অমদানি করেন। এই এক গাড়ি পেঁয়াজ থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৬৬ টাকা। 
প্র্রসঙ্গতঃ কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর রোববার (৭ ডিসেম্বর) ভারত থেকে ১ হাজার ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। মোট ৫০ জন আমদানিকারককে এ আইপি দেওয়া হয়। (আমদানি অনুমতিকে সংক্ষেপে আইপি বলা হয়)।  তবে কোনো আমদানিকারকই ৩০ টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি করতে পারবেন না। আবার কেউ দ্বিতীয়বারের জন্য আমদানির আবেদন করতে পারবেন না। আমদানির অনুমতির বা আইপির মেয়াদ থাকবে ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত।

্রিন্ট

আরও সংবদ