খুলনা | রবিবার | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ | ২৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

মানুষের দুর্দশার প্রতিচ্ছবি

|
১২:৩০ এ.এম | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫


প্রতিবছর ১২ ডিসেম্বর সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রতিটি নাগরিকের জন্য আর্থিক বোঝা ছাড়াই মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। কিন্তু বাংলাদেশে দিবসের প্রাক্কালে একটি প্রতিবেদন আমাদের সামনে এক কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরেছে। স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় মেটাতে গিয়ে দেশের ৪৪ শতাংশ পরিবার আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে এবং অনেকে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাংকের এই হিসাবটি শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি লাখ লাখ মানুষের দুর্দশার প্রতিচ্ছবি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ বে-নজির আহমেদের মতে, ব্যয় মেটাতে না পেরে দরিদ্র জনগোষ্ঠী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অথবা ধারদেনা ও সম্পদ বিক্রি করে চিকিৎসা করাতে গিয়ে আরো দরিদ্র হচ্ছে। এটি দেশের সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার (টঐঈ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে এক বিশাল অন্তরায়। ২০২৫ সালে ইউএইচসিতে বাংলাদেশের স্কোর মাত্র ৫৪-তে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ২০৩০ সালের লক্ষ্য ৭৪।
ইউএইচসি হলো অসুস্থতার কারণে কেউ যেন আরো বেশি দরিদ্র না হয়। অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। ২০১২ সালে রোগীরা পকেট থেকে গড়ে ৬৪ শতাংশ অর্থ খরচ করত, যা ফিবছর বেড়ে ২০২২ সালে ৬৯ শতাংশে পৌঁছেছে এবং বর্তমানে তা ৭০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। কৌশলপত্রের লক্ষ্য ছিল ২০৩২ সালের মধ্যে এই ব্যয় ৩২ শতাংশে নামিয়ে আনা। লক্ষ্য থেকে আমরা কেবল দূরেই সরছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদের মন্তব্য, ‘ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ অর্জন আমাদের জন্য মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার সমান।’ এই হতাশার মূল কারণ, তাঁর মতে, রাজনৈতিক প্রতিশ্র“তি, আইন ও নীতির অভাব এবং পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকা।
চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে লাখো মানুষ ধারদেনা, সঞ্চয় খরচ, এমনকি সম্পদ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস’ কেবল প্রতীকী কর্মসূচি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রয়োজন অবিলম্বে রাজনৈতিক প্রতিশ্র“তি এবং কাঠামোগত সংস্কার। স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ ব্যয় নয়, এটি জাতির উৎপাদনশীল ভবিষ্যতের পূর্বশর্ত। সরকার যদি এখনো চোখ খুলে না দেখে, তবে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্য অর্জন মঙ্গল গ্রহে যাত্রার মতোই দুরাশা হয়ে থাকবে।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ