খুলনা | রবিবার | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ | ২৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

স্বপ্নের ঘর পেলেও স্বপ্নহীন জীবন: কালীগঞ্জের দুই আবাসনের বাসিন্দাদের মানবেতর দিনযাপন

হাবিব ওসমান, কালীগঞ্জ |
১২:৪০ এ.এম | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫


ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে দু’টি আবাসন প্রকল্প বারোবাজারের স্বপ্ননীড় ও বারো আউলিয়া আবাসন আজ যেন ভুলে যাওয়া মানুষের এক করুণ ঠিকানা। সরকারি আশ্রয় প্রকল্পের ঘর পেলেও আশ্রয়ের নিরাপত্তা, সুপেয় পানি, স্যানিটেশন, কাজের সুযোগ, এসব মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন প্রায় হাজারেরও বেশি অসহায় মানুষ। অনেক বছর ধরে চলতে থাকা এসব সমস্যার সমাধান আজও হয়নি। ২০ বছরের অপেক্ষা, তবুও জীবনে আলো নেই বারো আউলিয়া আবাসনের বাসিন্দাদের।
আবাসনে বসবাসকারী মোমিন হোসেন বলেন বছরের পর বছর ধরে আমরা খাস জমিতে ঝুপড়িতে ছিলাম। সরকার পাকা দেওয়াল আর টিনের ছাউনির ঘর দিয়েছে, কিন্তু আমাদের জীবন যাপন আগের মতোই কঠিন। কাজ নেই, আয়ের ব্যবস্থা নেই তাই ঘর থাকা সত্তে¡ও খেয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে।
এ আবাসনে ৮০টি পরিবারের প্রায় পাঁচশ’ মানুষ বাস করেন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই বেদে, দিনমজুর ও ভূমিহীন দরিদ্র পরিবার। নষ্ট নলকূপ, পানির কষ্টে জীবন আরও দুর্বিষহ। রাস্তার কাদা পানির মতোই অনিশ্চয়তায় ভরা এসব মানুষের জীবন। আরেক বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম জানান, আমাদের জন্য ৫টা নলকূপ থাকলেও ৩টা নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নিতে হলে অন্য পাড়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন ধরতে হয়। পানি ছাড়া কি জীবন চলে? নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিশুদের মধ্যে নানা অসুখ-বিসুখ বেড়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আরেকটি আবাসন স্বপ্ননীড়, নামেই স্বপ্ন, বাস্তবে সংগ্রাম। উপজেলার বারাবাজার ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের জলকার মাজদিয়া বাওড়ের পাশে স্থাপিত স্বপ্ননীড় আবাসনে বাস করেন ৫৯টি পরিবারের প্রায় তিনশ’ মানুষ। সামান্য বৃষ্টি হলেই পুরো এলাকা কাদায় পরিণত হয়। এছাড়াও নেই শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পানির কোনো সুব্যবস্থা। এই আবাসনে দুই বিঘা জমিতে থাকা সরকারি পুকুরটি স্থানীয় দুই প্রভাবশালীর দখলে। ফলে আয় বা পেশা তৈরির সুযোগ থেকেও বঞ্চিত বাসিন্দারা।
আবাসনের এক গৃহবধূ আক্ষেপ করে বলেন ঘর পাইছি ঠিকই, কিন্তু ঘরের বাইরে পরিবেশ নেই। রাস্তাগুলো পাকা না হলে, ড্রেনেজ আর পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা না হলে বাঁচা কষ্ট। ঘর পেয়ে আজ পর্যন্ত উপজেলা  প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ কোনদিন এসে দেখেও যায়নি আমাদের। আমাদের শিশুদের ভবিষ্যতও আঁধার। শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় আবাসনের ছোট শিশুদের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তায় ভরা। অনেকেই স্কুলে যেতে পারে না, কেউ বা কাজের খোঁজে ছুটে বেড়ায়। স্বপ্ন দেখার বয়সেই তারা বঞ্চনার ছায়ায় বড় হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগের অপেক্ষায় দুই আবাসনের মানুষ।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজওয়ানা নাহিদ বলেন, আমি নতুন জয়েন করেছি। দ্রুতই দুইটি আবাসন পরিদর্শনে গিয়ে বাসিন্দাদের সমস্যা শুনবো। রাস্তাঘাট, ঘর সংস্কার, পানির অভাব, রোগ-শোক সব সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
মানুষের মতো বাঁচার স্বপ্ন দুই আবাসনের হাজারো মানুষ আজও আশায় তাকিয়ে আছে, সরকার দ্রুতই তাদের জীবন যাত্রার মানোন্নয়নের জন্য উদ্যোগ নেবে, নারীদের ও পুরুষদের পেশাগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে, সুপেয় পানি, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে, যাতে তারা অন্তত মানুষের মতো বাঁচতে পারে। 

্রিন্ট

আরও সংবদ