খুলনা | বুধবার | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ | ২ পৌষ ১৪৩২

১৬ ডিসেম্বর : সর্বাধিনায়ক অনুপস্থিত কেন?

এ্যাড. এম মাফতুন আহমদ |
০২:১০ এ.এম | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫


১৯৭১ সাল। আজাদী প্রিয় জাতি দীর্ঘ নয় মাস কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে। কেউ স্বাধীন দেশে গাজী হয়ে ফিরেছে। কেউবা শাহাদাৎবরণ করেছে। স্নিদ্ধ শীতল শ্যামল বাংলার পবিত্র জমিনে শেষ ঠাঁই নিয়েছে। তাঁদের সেই অসীম ত্যাগের বিনিময়ে জাতি ফিরে পেয়েছে শতাব্দীর হারানো স্বাধীনতা। দেশ স্বাধীন হলো। কিন্তু স্বাধীনতার স্বপ্নসাধ ভুলুণ্ঠিত হলো। জিম্মি হয়ে পড়লো ৭ কোটি বীর বাঙালী; আধিপত্যবাদী ভারতীয় কবলে। ভাবতে অবাক লাগে, স্বাধীনতার বিজয়ের আনুষ্ঠানিকতার দিন ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের কোনো সামরিক বা রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব রাখা হলো না। কেন সেদিন রাখা হয়নি? দেশবাসীর মনে প্রশ্ন জেগেছে; ঘুরে-ফিরে বারবার। 
যাদের বলা হচ্ছে রাজাকার, স্বাধীনতার শত্র“ তাঁদের রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা তাহলে কী সেদিন সঠিক ছিল? তারা পরিস্কার জাতিকে জানান দিয়েছিলেন, আমরা কেউ মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী নই। তবে পিন্ডি ছেড়েছি দিল­ী যাবো না। তারাই সামান্য নমুনা বিজয়ের আনুষ্ঠানিকতার দিন ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধিত্বকে রাখা হয়নি বন্ধু দেশ প্রতিবেশীর নির্দেশে।
যে সৈনিকের নির্দেশে এ দেশের মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতা আন্দোলনে সরাসরি যুদ্ধ করেছিল, নয় মাস তিনি জীবনবাজী রেখে সশস্ত্র সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অথচ বিজয়ী যোদ্ধার মুকুট সেই জেনারেল ওসমানীর মাথায় না ওঠে, উঠলো ভিন্ন দেশীয় এক জেনারেলের মাথায়। আফসোস গোটা স্বাধীনতাকামী জাতির।
স্বাধীনতার নামে ধোঁকা।
এই প্রসঙ্গে আমাদের দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর ফ্রান্সকে মুক্ত করেছিলো। কিন্তু জেনারেল ম্যাক অর্থার কিংবা মিত্রবাহিনীর কোনো নেতা সেদিন নরম্যান্ডি বা প্যারিসে গিয়ে বলদর্পে  ঢোকেনি। বিজয় শোভাযাত্রার অগ্রভাগে সেদিন ছিলেন ফরাসী নেতা দ্যাগল। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে একি হলো? বিজয়ী যোদ্ধার মুকুট জেনারেল ওসমানীর মাথায় না ওঠে, উঠলো ভারতীয় জেনারেলের মাথায়। একটি নব্য স্বাধীন জাতির প্রতি স্বাধীনতার নামে কী ধোঁকা নয়?
বাংলাদেশে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ককে বাদ দিয়ে জেনারেল নিয়াজীর কাছ থেকে ক্ষমতার দলিল লিখে নিলেন ভারতীয় জেনারেল অরোরা। ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে কোনো সামরিক বা রাজনৈতিক প্রতিনিধির উপস্থিতি না থাকার মূলে কি কারণ ছিল। বিষয়টি আসুন ইতিহাসের আলোকে একটু গভীরে তলিয়ে দেখি।
ভারতীয়দের কাছে আত্মসমর্পণ কেন?
এ প্রসঙ্গে নয় নম্বর সেক্টর অধিনায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর এম এ জলিল লিখেছেন,- “ঐতিহাসিক ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক অবসানের দিন। হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে ঢাকার  রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে। যে যুদ্ধ বাঙালীদের সশস্ত্র গণবিস্ফোরণ এবং মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়। তার শেষ হয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর অধিনায়কের কাছে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর অধিনায়কের আত্মসমর্পনের মধ্যে দিয়ে। 
হিসেবে মিলছে না কেন? হিসেবের এই গড়মিলের জন্য দায়ী কে বা কারা? যারা মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিল যুদ্ধ শেষে পরাজিত শত্র“ পক্ষ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করল না কেন? পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে তো কোনো যুদ্ধ হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী এবং মুক্তিকামী বাঙালী জনগণের মধ্যে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পনের হেতুটি দেখা দিল কেন-কোন উদ্দেশ্যে? সূত্র: ‘অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা’, মেজর এম.এ.জলিল পৃ. ৩৫,৩৬)। 
লেখক : আইনজীবী, কলামিষ্ট ও আজাদবার্তা সম্পাদক।

্রিন্ট

আরও সংবদ