খুলনা | মঙ্গলবার | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ | ২ পৌষ ১৪৩২

নির্বাচনের আগে ফিরে আসতেই চোরাগোপ্তা হামলা, পলাতকদের আরও কঠিনতর পরিকল্পনা রয়েছে: প্রধান উপদেষ্টা

খবর প্রতিবেদন |
০৭:০৮ পি.এম | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫


মহান বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনাটি স্মরণ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নির্বাচনের আগে ফিরে আসতেই পলাতকেরা এই চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, তারা চায় নির্বাচনের আগেই তাদের ফিরে আসা নিশ্চিত করতে। নানা ভঙ্গিতে এটা তারা করবে। এই চোরাগোপ্তা খুন করার উদ্যোগ তার একটা রূপ। আরও কঠিনতর পরিকল্পনা নিয়ে তাদের প্রস্তুতি আছে।

আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় তিনি এ ভাষণ দেওয়া শুরু করেন।

ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সামনে আজ উপস্থিত হয়েছি অত্যন্ত ব্যথিত হৃদয়ে। এই আনন্দের দিনে গভীর বেদনার সঙ্গে জানাচ্ছি, জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখযোদ্ধা ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর সম্প্রতি যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা শুধু একজন ব্যক্তির ওপর আঘাত নয়—এটি বাংলাদেশের অস্তিত্বের ওপর আঘাত, আমাদের গণতান্ত্রিক পথচলার ওপর আঘাত।

‘শরিফ ওসমান হাদি বর্তমানে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন। তাঁর চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। আপনারা তাঁর জন্য মহান আল্লাহ তাআলার কাছে অন্তরের অন্তস্থল থেকে দোয়া করুন।

‘সরকার এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা গেছে। আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই—যারা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত, তারা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

‘আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই—পরাজিত শক্তি ফ্যাসিস্ট টেররিস্টদের এই অপচেষ্টা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ করে দেওয়া হবে। ভয় দেখিয়ে, সন্ত্রাস ঘটিয়ে বা রক্ত ঝরিয়ে এই দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না।

‘আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাই—সংযম বজায় রাখুন। অপপ্রচার বা গুজবে কান দেবেন না। ফ্যাসিস্ট টেররিস্টরা, যারা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়, আমরা অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের মোকাবিলা করব। তাদের ফাঁদে পা দেব না। পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি এ দেশের পবিত্র মাটিতে আর কোনো দিন ফিরে আসবে না।’

পরাজিত শক্তির কাছে চোরাগোপ্তা খুনের চেয়ে আরও কঠিনতর পরিকল্পনা আছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের তরুণদের রক্ষা করুন। তাহলে আমরা সবাই এবং আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি রক্ষা পাবে। যারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, তারা বুঝে গেছে, তরুণ যোদ্ধারা তাদের পুনরুত্থানের পক্ষে ভীষণ রকম বাধা। এই অস্ত্রহীন, ভীতিহীন, ব্যক্তিগত স্বার্থ সম্বন্ধে সম্পূর্ণ উদাসীন দৈনন্দিন এই চেহারার ছেলেমেয়েদের নিয়ে তাদের সাংঘাতিক ভীতি। তাদের লক্ষ্য হলো, নির্বাচন আসার আগেই পথের এই বাধাগুলো সরিয়ে ফেলা—নিজেদের রাজত্ব আবার কায়েম করা। তাদের বন্ধুরা যত দিন তাদের সঙ্গে আছে, তত দিন তারা এই স্বপ্ন দেখবে। নির্বাচন হয়ে গেলে তাদের বন্ধুরা সমর্থন জোগাতে বেকায়দায় পড়বে। সেজন্যই তো এত তাড়াহুড়া। তারা চায় নির্বাচনের আগেই তাদের ফিরে আসা নিশ্চিত করতে। নানা ভঙ্গিতে এটা তারা করবে। এই চোরাগোপ্তা খুন করার উদ্যোগ তার একটা রূপ। আরও কঠিনতর পরিকল্পনা নিয়ে তাদের প্রস্তুতি আছে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের সবাইকে জোর গলায় বলতে হবে—আমরা তরুণদের রক্ষা করব। এখানে পুরোনো আমলের দাসত্ব মেনে যারা আছে, তাদেরকে দাসত্ব থেকে বের হয়ে আসতে হবে। উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করে আমরা সবাই মিলে দেশের ওপর আমাদের পরিপূর্ণ দখল প্রতিষ্ঠিত করব। নির্বাচনের আর বাকি মাত্র দুই মাস। আমরা তাদের ওপর নজর রাখব এবং বাকি দিনের প্রতিটি দিন উৎসবমুখর করে রাখব। যেহেতু আমাদের কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের মনে কোনো ভয়ডর নেই, তাই তারা নির্বাচনের আগের দুই মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে উৎসবমুখর করে রাখবে। সব রকমের হিংসা, কোন্দল থেকে দেশকে বাঁচিয়ে রাখবে।’

্রিন্ট

আরও সংবদ