খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৩ পৌষ ১৪৩২

নাগরিকের রাষ্ট্র ও শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক উত্তরণ সবার প্রত্যাশা

|
১২:২০ এ.এম | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫


দক্ষিণ এশিয়ায় সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়া একমাত্র দেশ বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুযায়ী, ‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা’র লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ এগোনোর কথা। যদিও গত পাঁচ দশকে কোনো লক্ষ্যই পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা পূরণ না হওয়ার ফলেই আমরা দেখেছি স্বাধীনতার পাঁচ দশকের মধ্যে দুই বা ততোধিক গণঅভ্যুত্থান ও বেশ কয়েকটি সামরিক সরকার। রাজনৈতিক পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক আকাক্সক্ষা পূরণের জন্য রাজপথে বারবার নাগরিকদের রক্ত দিতে হয়েছে।
আমরা এখনো সবার জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারিনি। প্রাথমিক শিক্ষায় প্রায় ১১ ধরনের পাঠ্যক্রম দেখছি। সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা কথার কথাই রয়ে গেল। ১১ ধরনের প্রাথমিক শিক্ষায় ভবিষ্যৎ বিভেদের বীজ বপন করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মদদেই। তার ওপর প্রাথমিক শিক্ষাও শেষ করতে পারছে না ৪০ শতাংশ শিশু। চিকিৎসা অবকাঠামো থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গেলেও সেবা পৌঁছায়নি। এ কারণে চিকিৎসার জন্য সবাইকে ঢাকামুখী হতে হচ্ছে, ফলে চাপ বাড়ছে রাজধানীর ওপর। আমরা প্রতিষ্ঠান ও পরিষেবা তৃণমূলে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় সবাইকে শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের জন্য রাজধানীমুখী হতে হচ্ছে। এটা যে কত ভয়াবহ বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে তা গত মাসে কয়েক দিনের ব্যবধানে অর্ধডজন বার ভূকম্পন দেখিয়ে দিয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বৈষম্যমুক্ত ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে পরিণত করা। তাই ১৬ ডিসেম্বর বিজয় উদযাপনের পাশাপাশি প্রয়োজন স্বপ্ন কতটা পূরণ হলো তা মূল্যায়ন করা। সূচনালগ্নে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পশ্চাৎপদ। সম্পদের প্রাচুর্য তেমন ছিল না। স্বাধীনতার পূর্বে পাকিস্তানের পুঁজিপতি ও শোষক শ্রেণি দেশ থেকে সম্পদ পাচার করেছে পশ্চিম পাকিস্তানে। উপরন্তু যুদ্ধকালীন এক ধরনের ভঙ্গুর অবস্থায় পৌঁছে যায় দেশ। সে অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াতে বেশ হিমশিম খেতে হয়েছে দেশকে। এরপর পেরিয়েছে ৫৪ বছর। ২০২৫ সালে এসে আমাদের বলার মতো অনেক অর্জন, সফলতা ও উন্নয়নের গল্প রয়েছে। কিন্তু পেছন ফিরে তাকালে দেখা যায়, যে সমঅধিকারের রাষ্ট্রের প্রত্যাশায় দেশ মুক্ত হলো, আজও তা অপূরণীয় রয়ে গেছে। এখানে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতাও বারবার ব্যাহত হয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়েছে, বিশেষত সর্বশেষ বিদায়ী সরকারের আমলে। আইনশৃঙ্খলার স্থান দখল করেছে দলীয় শাসন, অপশাসন ও অনিয়ম-দুর্নীতি যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রাষ্ট্রের সর্বত্র। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের অর্থনীতি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুবিধাভোগী হয়েছে বিশেষ সুবিধাভোগী শ্রেণি। এর সুবিধার সুষম বণ্টন হয়নি। অসম অর্থনীতিতে আর্থিক চাপে দিনাতিপাত করছে নিম্ন আয়ের মানুষ। এ বিজয়ের দিনে তাই অঙ্গীকার হোক বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতির নিরাময়। তাছাড়া ২০২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সূত্রপাত হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে। অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের বয়ানে বারবার উঠে এসেছে তারা সর্বস্তরে বৈষম্যের অবসান চান এবং নাগরিকের রাষ্ট্র বানাতে চান। অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বেশকিছু সংস্কার পদক্ষেপ গ্রহণ করে। হয়তো ভবিষ্যতে তা কিছু ফল দেবে, তবে স্বল্পমেয়াদে তার সুফল এখনো নাগরিকরা উপভোগ করছে না। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যে মৌলিক পরিবর্তন আনা দরকার ছিল তা দৃশ্যমান নয়। এতে কয়েকদিন পরপর আমরা রাজপথে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নানা আন্দোলনে নামতে দেখছি। দেশে এখনো বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে পারছি না বলেই রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে বিশিষ্টজনদের চিকিৎসার্থে বিদেশ পাঠাতে হচ্ছে। উচ্চবিত্তের প্রায় সবাই বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন, এমনকি নিম্ন-মধ্যবিত্তের অনেকেই প্রতিবেশী দেশগুলোয় চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। এতে আমাদের বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। আমরা যদি আমাদের চিকিৎসাসেবাকে বিশ্বমানের করতে পারতাম তাহলে দেশের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর নাগরিকদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতো। এরই মধ্যে অবশ্য বেশ কয়েকটি হাসপাতাল থেকে অনেক বিদেশী নাগরিক সাশ্রয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমাদের ওষুধ শিল্প বেশ বিকশিত হয়েছে। উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারলে তা তৈরি পোশাক ও রেমিট্যান্সের মতো আরেকটি অর্থনৈতিক ভিত হতো বাংলাদেশের।

্রিন্ট

আরও সংবদ