খুলনা | শুক্রবার | ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৫ পৌষ ১৪৩২

মোংলা সমুদ্র বন্দরের উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণে ৯ মেঘা প্রকল্প গ্রহণ

মোংলা প্রতিনিধি |
০২:৫৫ এ.এম | ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫


মোংলা সমুদ্র বন্দরের উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও স¤প্রসারণের লক্ষে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার। বন্দরকে আধুনিক ও বিশ্বমানের নৌ- যোগাযোগ কেন্দ্রে রুপান্তিত করতে গ্রহণ করা হয়েছে ৯টি বড় মেঘা প্রকল্প। তা থেকে ৪টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে, এরই মধ্যে নতুন করে ২টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আরো ৩টি প্রকল্প একেনেকে অনুমোদনে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে মোংলা বন্দরের বহুমুখী টেকসই উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি হিসেবে কাজে আসবে। ব্যবসায়ীদের হবে লাভজনক ও ব্যবসা বান্ধব প্রতিষ্ঠান, রাজস্ব আয় দিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতেও আঞ্চলিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে গড়ে উঠবে মোংলা সমুদ্র বন্দর। 
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায় বঙ্গোপসাগরের উত্তর উপকূলে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলা। এ বন্দরকে আধুনিকায়ন ও কার্যক্রম স¤প্রসারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে অন্তর্বতীকালীন সরকার। ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে ৫ হাজার ৬০৬ কোটি ৪১ লাখ ৭২ হাজার টাকা ব্যয় মোংলা বন্দরের সুবিধাদির স¤প্রসারণ ও উন্নয় এবং বন্দরের চ্যানেল সংরক্ষণ ড্রেজিং নামের ২টি মেঘা প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্প দু’টি শেষ হলে পণ্য খালাস -বোঝাই ও সাড়ে ৯ থেকে ১০ মিটারে জাহাজ বন্দর চ্যানেল দিয়ে আসা-যাওয়া করতে পারবে অনায়াসে। ফলে এক কোটি ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও চার লক্ষ টিইউজ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে।
এছাড়া পূর্বের গ্রহণ করা ৮ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা ব্যায়ে মোংলা বন্দরের সহায়ক জলযান সংগ্রহ, পশুর চ্যানেলে ইনারবার ড্রেজিং, আপগ্রেডেশন অব মোংলা পোর্ট ও ২টি অসম্পূর্ণ জেটি নির্মাণ নামে ৪টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। বন্দরকে আরো গতিশীল করতে নতুন করে ৩টি বড় প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে “পশুর চ্যানেল শাসন ও স¤প্রসারণের জন্য সমীক্ষা”, “ট্রেলিং সাকশন হপার  ও কাটার সাকশন ৩টি ড্রেজার ক্রয়” ও উন্নয়ন সেবা সহায়ক ২টি মুরিং বোট সংগ্রহ করা” প্রকল্প। প্রকল্পগুলো শেষ হলে চ্যানেলে নাব্যতা রক্ষা, পন্য বোঝাই জাহাজ দ্রুত ভিড়ানো ও ত্যাগ করা, বন্দরের কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত শিপিং এজেন্ট, সিএন্ডএফ এজেন্ট, স্টিভিডরস ও শ্রমিক-কর্মচারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি অন্যান্য বন্দরগুলো সাথে প্রতিযোগিতামূলক বন্দর, আধুনিক ও বিশ্বমানের নৌ-যোগাযোগ কেন্দ্রে রুপান্তিত হবে মোংলা সমুদ্র বন্দর। 
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য অর্থ ও পরিচালক প্রশাসন-(উপ-সচিব) কাজী আবেদ হোসেন বলেন, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘মোংলা বন্দরে আধুনিক বর্জ্য ও তেল নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্পটি চলতি বছরের জুনে সম্পন্ন করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে জাহাজ ও আশপাশের শিল্পকারখানাগুলোর বর্জ্য পরিবেশবান্ধব উপায়ে সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা করা হবে। এটি সমুদ্রদূষণ প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক ‘মারপল কনভেনশন’-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা সুন্দরবন ও পশুর চ্যানেলকে দূষণ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে। বাকি চারটি প্রকল্পের নির্মাণ কাজও দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। চলমান এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে-জরুরি সেবা ও কার্যকর পরিচালনার জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ, পশুর চ্যানেলের ‘ইনার বার’ এলাকায় ৮.৫ মিটার গভীরতা অর্জনের লক্ষ্যে ড্রেজিং করা, যাতে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজগুলো ওই চ্যানেল দিয়ে নিরাপদে চলাচল করতে পারে। তিনি আরও বলেন, চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পর জেটিতে অতিরিক্ত ১০০ থেকে ১৫০টি জাহাজের পণ্য হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। ফলে জাহাজের পন্য খালাস-বোঝাই সক্ষমতা দ্বিগুণ হবে।
বন্দর সূত্রে জানায়, বর্তমানে মোংলা বন্দরে জাহাজজট নেই। ফলে বন্দর ব্যবহারকারীরা ভালো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। গাড়ি আমদানিকারকদের জন্য বিশেষ সুবিধা, সাতটি কন্টেইনার ইয়ার্ড। এছাড়া ৩৮টি সহায়ক জলযান (যেমন-টাগবোট,পাইলট বোট, সার্ভে বোট, ড্রেজার) রয়েছে। আন্তর্জাতিক ‘শিপ অ্যান্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি (আইএসপিএস)’ কোড অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা, কোস্টগার্ডের নিয়মিত টহল এবং সহজলভ্য সড়ক, রেল ও নৌপথে পণ্য পরিবহনের ব্যাপক সুযোগও রয়েছে মোংলা বন্দরে। বর্তমানে মোংলা বন্দরের বার্ষিক সক্ষমতা হলো ১,৫০০টি জাহাজ হ্যান্ডলিং, এক কোটি ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন কার্গো, ১ লাখ টিইইউ কনটেইনার এবং ২০ হাজার গাড়ি হ্যান্ডলিং করার সক্ষমতা রয়েছে মোংলা বন্দরে। 
এছাড়া জেটিতে ৮.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানোর সক্ষমতা, ১৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেলে পানির ওপরে ভাসমান নৌযান সংকেত যন্ত্র ও টাওয়ার দিয়ে রাত-দিন নিরাপদ চলাচলের ব্যবস্থা, বিদেশি জাহাজের জন্য ৪৯টি নির্ধারিত বার্থিং পয়েন্ট, ১৩৪টি আধুনিক কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং যন্ত্র, নিরাপদ সংরক্ষণ ওয়ান-স্টপ সার্ভিস চালু রয়েছে, যার আওতায় অনুমতি, বিল, ইনডেন্টিং, যন্ত্রপাতি বুকিং ও পেমেন্ট একই জায়গায় করতে পারছে ব্যাবসাযীরা। 
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, ভৌগোলিক দিক থেকে মোংলা বন্দরের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বন্দর দিয়ে নেপাল, ভুটান, চীন ও ভারতের পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। বর্তমানে প্রতিবেশী দেশগুলোর আগ্রহের কারণে বন্দরের ওপর চাপ বাড়ছে। এজন্য এর সস¤প্রসারণ জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকারের গ্রহন করা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে নেপাল, ভুটান ও চীনের সঙ্গে বৈশ্বিক বাণিজ্য স¤প্রসারণের সুযোগ তৈরি হবে। প্রকল্পগুলো শেষ হলে মোংলা বন্দর হবে বিশ্বের বাণিজ্যিক বাজারে পরিবেশ বান্ধব ও অন্য বন্দরের সাথে প্রতিযোগিতা মুলক সমুদ্র বন্দর। 
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে একশ’ ১৪ কোটি ৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা ব্যায় ‘মোংলা বন্দরে আধুনিক বর্জ্য ও তেল নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন, যা উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। 

্রিন্ট

আরও সংবদ