খুলনা | শনিবার | ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৬ পৌষ ১৪৩২

বিভিন্ন স্থানে গায়েবানা জানাজায় সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ

জুলাই যোদ্ধা ওসমান হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় খুলনার মসজিদে-মসজিদে দোয়া

খবর বিজ্ঞপ্তি |
০১:৩৫ এ.এম | ২০ ডিসেম্বর ২০২৫


শহীদ শরিফ ওসমান হাদির শাহাদাত স্মরণে এবং চলমান আগ্রাসনের প্রতিবাদে মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বাদ জুম্মা খুলনার মসজিদে-মসজিদে শহীদ ওসমান হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এসব কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, শহীদ শরীফ ওসমান হাদি কোনো রাজনৈতিক দলের এজেন্ট ছিলেন না এবং তিনি কোনো দলের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেননি। তিনি কেবল বাংলাদেশের স্বার্থ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে কথা বলেছেন এবং আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কী ভূমিকা পালন করছে তা জনগণ জানতে চায়। তাদের অভিযোগ, এখন পর্যন্ত কোনো সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি এবং প্রশাসনের ব্যর্থতা বা মদদেই অভিযুক্তরা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছে। 
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় : জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের অকুতোভয় যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের আহবায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ইন্তেকালে শুক্রবার বাদ জুম্মা রাষ্ট্রীয় নির্দেশনার আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি জামে মসজিদে আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। পরে কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে শরিফ ওসমান হাদির গায়েবানা জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা নামাজ ও দোয়া অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ অংশগ্রহণ।
এদিকে ইনকিলাব মঞ্চের আহবায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ, মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিম। অনুরূপভাবে শোক প্রকাশ করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হারুনর রশীদ খান, ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ নূরুন্নবী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। 
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) : জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম সম্মুখসারির যোদ্ধা এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির অকাল প্রয়াণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গভীর শোক ও বিনম্র শ্রদ্ধা প্রকাশ করা হয়েছে। তার অকাল মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত, মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শুক্রবার বাদ জুম্মা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আয়োজনে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। দোয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ মাকসুদ হেলালীর উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীবৃন্দ সম্মিলিতভাবে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া, বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ, ইনস্টিটিউট পরিচালক, রেজিস্ট্রার, বিভাগীয় প্রধানগণ সহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। 
দোয়ায় দেশের জন্য তার ত্যাগ ও সাহসিকতার কথা স্মরণ করে মহান আল্লাহর দরবারে তার জান্নাতুল ফেরদাউস কামনা করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি যুবায়ের হাসান। 
শরীফ ওসমান হাদির স্মরণে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করায় শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা এবং একইসাথে উক্ত দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে এবং স্থগিতকৃত পরীক্ষার পুনঃনির্ধারিত সময়সূচী পরবর্তীতে জানিয়ে দেওয়া হবে।
খুলনা খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয় : জুলাই বিপ্লবের সম্মুখসারির অকুতোভয় যোদ্ধা, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদীর অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ডেজিগনেট) প্রফেসর ড. মোঃ আনিসুর রহমান। তিনি শহিদ হাদির রুহের মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করে তার পরিবারের সদস্যদের এবং দেশের শোকাহত মানুষের সাথে সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। একই সাথে তিনি এই ঘৃণিত হত্যাকান্ডের তীব্র  নিন্দা জানিয়ে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার  ও শাস্তি দাবি করেন।
বিপ্লবী ছাত্র-জনতা : গতকাল জুম্মাবাদ নগরীর নিউ মার্কেট সংলগ্ন বায়তুন নূর জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে কর্মসূচিটি শুরু হয়। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শিববাড়ী মোড়ে এসে সমাবেশে রূপ নেয়। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তৃতা করেন জুলাই যোদ্ধা আল শাহরিয়ার, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, আবুজার আল কামা, তাসনিম চৌধুরী, ডাঃ আব্দুল্লাহ চৌধুরী, মিরাজ হোসেন, সাইফ নেওয়াজ ও নিয়াজ আলম রনি প্রমুখ।
খুলনার বিপ্লবী ছাত্র-জনতার আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা ও অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। এসময় ভারতের দালালদের হুঁশিয়ার, আওয়ামী লীগের দালালদের হুঁশিয়ার, দিল্লির দালালদের হুঁশিয়ার এ ধরনের স্লোগান শোনা যায়। এছাড়া টকশোর সুশীলদের হুঁশিয়ার, মিডিয়ার সুশীলদের হুঁশিয়ার বলেও স্লোগান দেওয়া হয়। সমাবেশে আরও শোনা যায় ইনকিলাব জিন্দাবাদ, দিল্লি না ঢাকা, দিল্লি না ঢাকা ঢাকা, ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দাও, রুখে দাও।
বক্তারা বলেন, শহীদ শরিফ ওসমান হাদির আত্মত্যাগ ভুলে যাওয়ার নয় এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই এখনো শেষ হয়নি। তারা চলমান রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতিতে ছাত্রসমাজকে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান।
ইসলামী আন্দেলন জেলা শাখা : আধিপত্যবাদ বিরোধী তরুণ বিপ্লবী, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অগ্রসেনানী, ইনকিলাব মঞ্চের আহবায়ক শহীদ শরীফ ওসমান বিন হাদীর শাহাদাৎ বরণে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ওসমান হাদীর শোকাহত পরিবার, স্বজন, সহকর্মী, বন্ধুসহ শোকাহত জনতার সাথে সহমর্মিতা প্রকাশ করে ও তার রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিবৃতি দিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।
বিবৃতিদাতারা হলেন জেলার সভাপতি মাওলানা অধ্যাপক আব্দুল্লাহ ইমরান, সহ-সভাপতি মাওলানা আবু সাঈদ, এসএম রেজাউল করিম সরদার, মাওলানা মোঃ ওমর ফারুক, হারুন অর রশিদ,  হাফেজ মাওলানা মুফতি আশরাফুল ইসলাম, মুফতি মাহবুবুল আলম, মুফতি আজিজুর রহমান সোহেল, মুফতি এনামুল হাসান সাঈদ, নুরুল হুদা সাজু, মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, মাওলানা ওমর আলী, মাওলানা আসাদুল্লাহ হামিদী, হাফেজ জাহিদুল ইসলাম, হাফেজ কারিমুল ইসলাম, মুফতি আব্দুর রহমান ডাকব, শফিকুল ইসলাম, মুফতি ফয়জুল্লাহ, আবু দাউদ, মুফতি আব্দুল মালেক, মাওলানা অলিউর রহমান, মাওলানা আব্দুস সাত্তার, মোঃ ইসমাইল হোসেন শাকিল, আহমাদ রাসেল ও হাফেজ মইনুদ্দিন প্রমুখ।
গণসংহতি আন্দোলন : গণসংহতি আন্দোলন জেলা আহবায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল এবং সদস্য সচিব আসিফ ইকবাল চৌধুরী বিবৃতিতে ইনকিলাব মঞ্চের আহবায়ক শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে নেতৃবন্দ বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অগ্রগামী সৈনিক ছিলেন শহীদ ওসমান হাদি। 
সমসাময়িক রাজনীতিতে নীতিনিষ্ঠতা ও স্পষ্ট অবস্থানের জন্য তিনি ছিলেন এক গুরুত্বপূর্ণ নাম। তিনি এমন এক সময় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন,  যখন জন আস্থা সংকট, গণতান্ত্রিক চর্চার দুর্বলতা এবং রাষ্ট্রীয় জবাবদিহিতার অভাব স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। এই বাস্তবতায় ওসমান হাদির রাজনৈতিক বক্তব্য ও ভূমিকা জনস্বার্থকেন্দ্রিক রাজনীতির বহিঃপ্রকাশেরই অংশ বলে বিবেচিত হয়। ওসমান হাদির মতো কণ্ঠস্বর সমসাময়িক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ তিনি ব্যক্তি বা দলের সুবিধার চেয়ে রাষ্ট্র ও জনগণের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থকে সামনে রাখার কথা বলেছিলেন,  এই অবস্থান ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারতো বলে আমরা মনে করি। একইসাথে সাথে আমরা গভীর ক্ষোভের সঙ্গে বলতে চাই এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা  ভিন্নমতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। যে ব্যবস্থা সত্যভাষীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়, সেই ব্যবস্থার নৈতিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলা নাগরিকদের অধিকার। ওসমান হাদির মৃত্যু সেই ব্যর্থতারই একটি নির্মম দলিল।

্রিন্ট

আরও সংবদ