খুলনা | বুধবার | ০২ জুলাই ২০২৫ | ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

মানসিক স্বাস্থ্য সংকট ও আমাদের করণীয়

প্রকাশ চন্দ্র অধিকারী, মনোবিজ্ঞানী |
০১:১৯ এ.এম | ১০ অক্টোবর ২০২১

মানুষ মাত্রই সুস্থ দেহ ও মনের প্রত্যাশি। সুস্থ দেহ ও মনের স্বাভাবিক প্রভাবকে কেন্দ্র করে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা প্রবাহিত। শরীরের সাথে মনের গভীর সম্পর্ক চিরাচরিত যা কোন ভাবেই অগ্রাহ্য করার পরিণতি ভয়ানক হতে পারে। পরিবেশের বিভিন্ন উদ্দীপকের সঙ্গে মনের ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ার ফলে আমাদের মন কখনো কখনো উৎফুল­ আবার কখনো দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। সুস্থ মনের উৎফুল­তা মানুষকে যেমন সুন্দর ভাবে বাঁচতে সহায়তা করে। তেমনই অসুস্থ মনের বিষময়তা জীবনকে বিভিন্ন ভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। মূলতঃ ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক, সামাজিকভাবে সুস্থ ও সুখ-স¦াচ্ছন্দ্য বোধ করার মানসিক ও শারীরিক অবস্থাকে মানসিক সুস্বাস্থ্য বলে অভিহিত করা হয়।
মানসিক নির্যাতন বা অসুস্থতার প্রভাব : (১) ব্যক্তির মধ্যে গুরুতর আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দেয়। (২) নিজের ক্ষমতা ও যোগ্যতা সম্পর্কে ব্যক্তির মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। (৩) এ সব ব্যক্তি সব সময় ভয়ে ভয়ে জীবন যাপন করে। (৪) ব্যক্তির মধ্যে বিভিন্ন প্রকার শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। (৫) অনেক ক্ষেত্রে এরা পরিস্থিতিকে মানিয়ে চলতে ভয় পায়। (৬) এরা পরিপূর্ণ আত্ম তৃপ্তি নিয়ে কোন কাজ করতে ব্যর্থ হয়। (৭) পারস্পরিক ভাব বিনিময়ের ক্ষেত্রে এদের আবেগজনীত আচরনের ঘাটতি দেখা দেয়। (৮) অন্যকে পাত্তা না দেওয়ার একটি মানসিকতা এদের মধ্যে বিকাশ লাভ করে। (৯) অন্যকে বিনা কারনে দোষ দেওয়ার একটা প্রবনতা এদের মধ্যে বিকাশ লাভ করে। (১০) পারিবারিক জীবনে এরা সুউপযোজন হতে ব্যর্থ হয় (১১) মানসিক স্বাস্থ্যের খারাপ পরিণতিতে ধীরে ধীরে এদের মধ্যে আতঙ্ক, হতাশা এবং উদ্বেগ বিকাশ লাভ করে। 
মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খাদ্যের প্রভাব : গবেষণায় দেখা গেছে, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার আমাদের জ্ঞানীয় প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। আমাদের আচরনের উপর খাদ্যের ভূমিকা অপরিসীম। গবেষণায় দেখা গেছে রোগীর খাদ্যে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত চিনি থাকলে বিভিন্ন মানসিক রোগ দেখা দিতে পরে। ভিটামিন বি টুয়েলভ’ সমৃদ্ধ খাদ্য আমাদের মানসিক অবসাদ, স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা ও হতাশাকে দূর করে। গবেষণায় আরো দেখা গেছে প্রচুর পরিমাণ শাকসবজি ও বিভিন্ন প্রকার খাদ্য বীজ মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারি। 
মানসিক স্বাস্থ্যহীনতা ও শারীরিক প্রভাব : যেহেতু মানসিক অসুস্থ ব্যক্তিরা প্রায় উদ্বেগ, ভয়, হতাশা, ভ্রান্ত বিশ^াস ইত্যাদি দ্বারা সহজে প্রভাবিত হয়, তাই তারা বিভিন্ন শারীরিক ঝুঁকিতে থাকে। তাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, হার্টে সমস্যা, মাথা ঘোরা, পেটে পীড়াজনিত সমস্যা, নিদ্রাহীনতা ইত্যাদি সমস্যা প্রায় দেখা যায়।
মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখার উপায় : (১) বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করা। (২) পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে সবার সাথে সদ্ভাব ও সামঞ্জস্য বজায়ে রাখার চেষ্ট করা। (৩) এমন কিছু কাজের মাধ্যমে নিজেকে ব্যস্ত রাখা যা ব্যক্তিকে আনন্দ দেয় এবং আত্ম বিশ্বাস যোগায় যেমন-শখের বই পড়া, গান শোনা ইত্যাদি। (৪) ভাল লাগার মুহূর্ত গুলো পরিবারের সদস্যদের সাথে ভাগ করে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। (৫) গৃহে অবস্থানকালীন সময়ে বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের সাথে সদ্ভাব বজায়ে রাখা। (৬) বাইরে আপনার যত টুকু দাযিত্ব ও কর্তব্য ততটুকুই আন্তরিকতার সাথে পালন করার চেষ্টা করা। অতিরিক্ত দায়িত্ব কাধে নিয়ে মানসিক চাপ না বাড়ানোই উত্তম। (৭) পরিবারের সদস্যদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া ও তাদের কথা গুলো গুরুত্বের সাথে শুনার অভ্যাস তৈরি করা এবং সকল আবদারের সমাধান দিতে না পারলেও বুঝিয়ে ব্যাপারটি মীমাংসা করার চেষ্টা করা। (৮) অযথা অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকা।(৯) কোন কাজ একশ’ ভাগ নির্ভুলভাবে সমাধান করার মানসিকতাকে পরিহার করা কারণ প্রত্যাশার সাথে আমাদের মানসিক যোগাযোগ ওতোপ্রতো ভাবে জড়িত। সে ক্ষেত্রে কাজটি সম্পূর্ণ নির্ভুল ভাবে সমাধান না হলে মানসিক যন্ত্রণা বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক স্বাস্থ্য নষ্ট হয়। (১১) শারীরিক ব্যায়াম আমাদের মস্তিষ্কে এন্ডোরফিল নামক একটি উপাদান নিঃসৃত করে যা আমাদের মনকে প্রফুল­ রাখে ও মানসিক স্বাস্থ্যকে সবল রাখে। তাই প্রতিদিন প্রায় এক ঘন্টা ব্যায়াম করা উচিত। করোনা আমাদের সমসাময়িক জীবন যাত্রাকে অনেক খানিক বিঘœ ঘটাতে সক্ষম, তাই হতাশা বা আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য্য ও সাহসের সাথে তাকে মোকাবিলা করতে হবে । তবেই আমরা শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে সক্ষম হবো। 
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজ, খুলনা। 

Email: [email protected]

্রিন্ট

আরও সংবদ