খুলনা | রবিবার | ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৬ পৌষ ১৪৩২

শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুশোক শক্তিতে পরিণত হোক

|
১২:০৬ এ.এম | ২১ ডিসেম্বর ২০২৫


চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অন্যতম মুখ ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে সাত দিন লড়াই করে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার মারা গেছেন (ইন্নালিল­াহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আমরাতো আল­াহর এবং আল­াহর কাছেই ফিরে যাবো)। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টনে বক্স কালভার্ট রোডে সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনি গুরুতর আহত হন। 
অত্যন্ত সংকটাপন্ন ওসমান হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি উদ্যোগে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু দেশে-বিদেশে চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও দুঃখজনকভাবে ইনকিলাব মঞ্চের আহবায়ক তরুণ এই রাজনীতিবিদের জীবনাবসান হয়। জুলাই অভ্যুত্থান ও আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনে শরিফ ওসমান হাদির অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ওসমান হাদির মৃত্যুতে আজ শনিবার দেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বৃহস্পতিবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে শহিদ ওসমান হাদির রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি ওসমান হাদির শোকসন্তপ্ত স্ত্রী, স্বজন ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। ওসমান হাদির স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করবে বলে জানান।
রাষ্ট্রীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্ত¡শাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। গতকাল বাদ জুমা দেশের প্রতিটি মসজিদে ওসমান হাদির মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়গুলোতেও আয়োজন হয় বিশেষ প্রার্থনার।
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রতিটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। এদিকে বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে মব সহিংসতা ঘটেছে, তা নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে দেশের সব নাগরিকের প্রতি আহŸান জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘কয়েকজন বিচ্ছিন্ন উগ্র গোষ্ঠীর দ্বারা সংঘটিত সকল প্রকার সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে সতর্ক থাকুন।’
শরিফ ওসমান হাদির হত্যা পরিকল্পনা ও হত্যার সঙ্গে জড়িত কারা, সেটা অবশ্যই যথাযথ তদন্ত করে বের করে আনতে হবে। এ হত্যাকাণ্ডে যারাই জড়িত থাকুক না কেন, সবাইকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এরই মধ্যে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। কিন্তু দুঃখজনক সত্য হচ্ছে, ওসমান হাদিকে গুলি করা প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ওরফে রাহুল ও তাঁর সহযোগী মোটরসাইকেল চালক আলমগীর শেখ এখনো গ্রেফতার হননি। তাঁদের মধ্যে ফয়সাল নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ ও আলমগীর যুবলীগের নেতা। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাঁরা দু’জনই সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। এটা বড় ধরনের গোয়েন্দা ব্যর্থতা বলেই আমরা মনে করি।
শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকান্ড অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল সবার জন্যই সতর্কবার্তা। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। শরিফ ওসমান হাদির শোক শক্তিতে পরিণত হোক।  

্রিন্ট

আরও সংবদ