খুলনা | রবিবার | ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৭ পৌষ ১৪৩২

সুদানে নিহত সেনাবাহিনীর ৬ সদস্যের জানাজা সম্পন্ন

খবর প্রতিবেদন |
০১:২৯ পি.এম | ২১ ডিসেম্বর ২০২৫


সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ছয় শান্তিরক্ষী সেনাসদস্যের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (২১ ডিসেম্বর) ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে তাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

নিহত সেনাসদস্যরা হলেন— কর্পোরাল মো. মাসুদ রানা: এএসসি (নাটোর), সৈনিক শামীম রেজা: বীর (রাজবাড়ি),  সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম: বীর (কুড়িগ্রাম), সৈনিক শান্ত মন্ডল: বীর (কুড়িগ্রাম), মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (কিশোরগঞ্জ) এবং লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া (গাইবান্ধা)।

আইএসপিআর জানায়, জানাজার আগে নিহত সেনাসদস্যদের জীবন বৃত্তান্ত পড়ে শোনানো হয়। পাশাপাশি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। পরে তাদের যথাযথ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়া হয়। এরপর সেনাসদস্যদের মরদেহবাহী হেলিকপ্টার নিজ নিজ জেলায় উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।

জানাজায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁনসহ সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী প্রধানের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

গত ১৩ ডিসেম্বর (শনিবার) সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের (ইউএনআইএসএফএ) আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিকস বেইসে এই বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়। স্থানীয় সময় আনুমানিক দুপুর ৩টা ৪০ মিনিট থেকে ৩টা ৫০ মিনিটের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী ঘাঁটিতে আকস্মিক ড্রোন হামলা চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ৬ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী।

হামলায় আহত ৮ জন শান্তিরক্ষীকে দ্রুততম সময়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে অবস্থিত আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তারা হলেন—

১। লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার খালেকুজ্জামান

২। সার্জেন্ট মো. মোস্তাকিম হোসেন, বীর (দিনাজপুর)

৩। কর্পোরাল আফরোজা পারভিন ইতি, সিগনালস (ঢাকা)

৪। ল্যান্স কর্পোরাল মহিবুল ইসলাম, ইএমই (বরগুনা)

৫। সৈনিক মো. মেজবাউল কবির, বীর (কুড়িগ্রাম)

৬। সৈনিক মোসা. উম্মে হানি আক্তার, ইঞ্জি. (রংপুর)

৭। সৈনিক চুমকি আক্তার, অর্ডন্যান্স (মানিকগঞ্জ)

৮। সৈনিক মো. মানাজির আহসান, বীর (নোয়াখালী)

আহতদের মধ্যে সৈনিক মো. মেজবাউল কবিরের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তার সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে এবং তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। এছাড়া বাকিরা শঙ্কামুক্ত। এদের মধ্যে একজন চিকিৎসা শেষে ইতোমধ্যে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন।

১৯৮৮ সালে মাত্র ১৫ জন সদস্য নিয়ে শান্তিরক্ষা মিশনে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্বের ১১৯টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। তবে শান্তির এই পথ সবসময় মসৃণ ছিল না। এ পর্যন্ত জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের ১৬৮ জন বীর সদস্য (সেনা, নৌ, বিমান ও পুলিশ) বিশ্বশান্তির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। সুদানের মরুভূমিতে ঝরে যাওয়া এই ৬টি প্রাণ সেই ত্যাগের মিছিলে নতুন নাম, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের পতাকাকে আরও মহিমান্বিত করেছে।

এর আগে, গতকাল শনিবার বেলা ১১টা ৫ মিনিটে নিহত ৬ শান্তিরক্ষী সেনার মরদেহ ঢাকায় পৌঁছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম বিমানবন্দরে শান্তিরক্ষীদের মরদেহ গ্রহণ করেন। এ সময় সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন ও সম্মান জানিয়ে স্যালুট দেন।

গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী। শাহাদাৎ বরণ করেন ৬ শান্তিরক্ষী। আহত ৯ জনের সবাই শঙ্কামুক্ত। এদের মধ্যে কেনিয়ার হাসপাতালে ৮ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

্রিন্ট

আরও সংবদ