খুলনা | সোমবার | ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৭ পৌষ ১৪৩২

# নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ # ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে মামলায় জেলও খেটেছেন # ২০১৮ সালে জাপা প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন সোমনাথ # সবশেষ ছিলেন উপজেলা আ’লীগের সদস্য # কোপিল কৃষ্ণ ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি

বাগেরহাটে বিএনপি’র মনোনয়ন পেলেন সাবেক দুই আওয়ামী লীগ নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট |
০১:২২ এ.এম | ২২ ডিসেম্বর ২০২৫


দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বাগেরহাটের চারটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তবে চারটির দু’টিতেই দলটির মনোনয়ন পেয়েছেন পতিত ফ্যাস্টিট সরকার আওয়ামী লীগের দুই নেতা। বিএনপিতে যোগ দিয়ে এক বছরের মধ্যে দু’টি আসনের মনোনয়ন পাওয়ায় বেশির ভাগ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে নারাজ অনেকেই।
ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে চায়ের দোকানে সমালোচনা করে ভরাডুবির কথাও বলেছেন অনেকে। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সাথে থাকা ঘনিষ্ঠ ছবি শেয়ার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপি’র স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
দলীয় সূত্রে জানাযায়, বাগেরহাট-১ (ফকিরহাট- মোল­হাট-চিতলমারী) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক কপিল কৃষ্ণ মন্ডল। তিনি একই সাথে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব ও বাংলাদেশ অশ্বিনী সেবা আশ্রমের সভাপতি। ছিলেন চিতলমারী উপজেলার কলাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
অপরদিকে বাগেরহাট-৪ (শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ) আসনে মনোননয়ন পেয়েছেন মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোটের সভাপতি সোমনাথ দে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাবেক সভাপতি ছিলেন তিনি। এছাড়া তিনি মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন। এর আগে সোমনাথ দে জাতীয় পার্টি করতেন। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সংখ্যালঘু বিষয়ক উপদেষ্টা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির আহŸায়ক ছিলেন। ২০১৮ সালের ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে বাগেরহাট-৪ (শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন। ২০১৯ সালের শেষের দিকে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০২২ সালে গঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কার্যনির্বাহী কমিটিতে তিনি ৩নং সদস্য হিসেবে স্থান পেয়েছিলেন।
দেশবিরোধী চক্রান্তের অভিযোগে কপিল কৃষ্ণ মন্ডল চলতি বছরের মার্চে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন, অপর একটি মামলায় কারাভোগ করেছেন সোমনাথ দে। জেল থেকে বেরিয়ে সনাতন ধর্মের অনুসারীদের নিয়ে ২০ আগস্ট বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন কপিল ও সোমনাথ। 
শনিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে প্রার্থী ঘোষণার পরে আসন দু’টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।
মোল­া রাজু আহমেদ নামে চিতলমারীর এক বাসিন্দা লিখেছেন, তথ্যটি জানার পর থেকে নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে, যতটা অসহায় বিগত ফ্যাসিস্ট আমলেও মনে হয়নি। আমাদের এ নির্বাচনী আসনে অনেক প্রবীণ-তরুণ যোগ্য ত্যাগী নেতৃত্ব রয়েছে। যারা শেখ হেলালের বিরুদ্ধে নির্বাচনে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। তাদের মধ্য থেকে যেকোনো একজনকে নমিনী করলে এ আসনের মানুষ বিপুল ভোটে ধানের শীষকে নির্বাচিত করত। কিন্তু আজ এই নমিনেশনের খবরটি শোনার পর থেকে নিজেকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে অভিযুক্ত মনে হচ্ছে। ‎কিসের প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে সংগঠন করেও নির্যাতিত নিপীড়িত মজলুম মানুষ গুলোকে হঠাৎ করে নিজের পরিচয় হারিয়ে রোহিঙ্গা হিসেবে বেঁচে থাকতে হবে কিনা। 
মোঃ শিমুল নামে একজন লিখেছেন এই সেই আওয়ামী লীগের দালাল। যাকে ১ আসন থেকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। এটা মানুষ মেনে নেবে না। বিএনপি’র জনগণ এটা মেনে নেবে না। সারা বছর রাজপথে থেকে, সতেরো বছর ঘুমাতে পারিনি। এখন উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। কত টাকার বিনিময়ে নমিনেশন পেয়েছে এটা আমাদের জানতে হবে।
শেখ ইমরান নামে একজন বলেছেন আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদেরও দল মনোনয়ন দিয়েছে।
শরণখোলার বাসিন্দা রাসেল আহম্মেদ ফেসবুকে সোমনাথ দে’র ছবি শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, জয় বাংলা, ধানের শীষে ভোট দিন। পোস্টের নিচে কেউ লিখেছেন, সাথে জাতীয় পার্টির স্লোগান যুক্ত করে দিন। কেউ লিখেছেন পরবর্তী সিরিয়ালে কোন দল আছে।
মাসুম শেখ নামের একজন লিখেছেন, বিভিন্ন দলের জল খাওয়া সোমনাথ জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ হয়ে এখন বিএনপি’র প্রার্থী। আগামীতে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হলেও বিস্মিত হওয়ার কারণ থাকবে না।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপি’র আহŸায়ক এটিএম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বাইরে আমাদের আসলে করার কিছু নেই। তবে স্থানীয় নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। দীর্ঘদিন দল করে, জুলুম-নির্যাতন সহ্য করার পরে অন্যদলের কেউ এসে মনোনয়ন পাওয়ায় তারা ক্ষোভে ফুঁসছে। আমরা নিয়মতান্ত্রিক ভাবে এসব বিষয় কেন্দ্রকে জানিয়েছি।
একই সুরে জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এটি কিভাবে মেনে নিবে বলেন। তারা দু’জনই সুবিধাবাদী এবং শেখ হেলালের নিকটতম অনুসারী ছিলেন। সনাতন ধর্মের যদি কাউকে দিতেও হয় দল ভালো যে হিন্দু ভাইয়েরা রয়েছে তাদের থেকে দিতো, যোগ করেন তিনি। নেতাকর্মীরা সত্যিই হতাশ হয়ে পড়েছে। এছাড়া দীর্ঘ দিন রাজপথে ছিলেন জানিয়ে বাগেরহাট-২ আসনের মনোনয়নও পুনর্বিবেচনার দাবি জানান তিনি।
বাগেরহাট-১ আসনের মনোনয়ন প্রাপ্ত কপিল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, কখনো অন্য কোনো দলের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলাম না। এটিই আমার প্রথম রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া। দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ মন্দিদের সভাপতি হওয়ায় নির্যাতিত হিন্দুদের অধিকার আদায়ে আমি সব সময় সোচ্চার ছিলাম। এ কারণে এমপি-মন্ত্রীদের সাথে আমার কথা বলতে হয়েছে। সেইসব ছবি দেখিয়ে এখন ষড়যন্ত্র চলছে। কেউ বলতে পারবে না, কোনো রাজনৈতিক মঞ্চে আমি বক্তব্য দিয়েছি। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটির কাগজ ভিত্তিহীন দাবি করে তিনি আরো বলেন, পদ নিতে চাইলে অনেক বড় পদ আমি পেতাম, ইউনিয়ন কমিটিতে কেন যাবো। আর মামলার বিষয়টিও উদ্দেশ্য প্রণোদিত দাবি করে তিনি বলেন, উচ্চ আদালত থেকে গত সপ্তাহে রুল নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।
বাগেরহাট-৪ আসনের প্রার্থী সোমনাথ দে বলেন, আমি মনোনয়ন পাওয়ায় যারা চাঁদাবাজ, জুলুমকারী, নির্যাতন করে তাদের গাত্রদাহ হচ্ছে। কিন্তু যারা সাধারণ মানুষ তারা আমাকে সাদরে বরণ করেছেন। আমি জাতীয় পার্টি করেছি, আওয়ামী লীগ করেছি, ৫ আগস্টের পর জেল খেটেছি। আমার নামে এখনো তিনটি মামলা রয়েছে। এসব জেনেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয়, দলের হাইকমান্ড আমাকে মনোনীত করেছেন। আমি নির্বাচিত হলে মোরেলগঞ্জ-শরণখোলায় কেউ এক কাপ চাও অবৈধভাবে খেতে পারবে না, যোগ করেন তিনি।

্রিন্ট

আরও সংবদ