খুলনা | মঙ্গলবার | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৮ পৌষ ১৪৩২

‘নির্বাচনে ভয় থাকবে না, থাকবে নির্ভীক মত প্রকাশ’

আগামী নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী বেছে নেওয়ার আহবান প্রধান উপদেষ্টার

খবর প্রতিবেদন |
০১:৫২ এ.এম | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫


আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহŸান জানিয়েছেন অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আপনি দেশের মালিক। এদেশ আগামী পাঁচ বছর আপনার পক্ষে কে চালাবে সেটা আপনি ঠিক করুন। আপনার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিন। সৎ ও যোগ্য প্রার্থী বেছে নিন। চিন্তা-ভাবনা করে ভোট দিন।’
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে কোনো মূল্যে স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। একই সঙ্গে তিনি ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডসহ সব ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। 
সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিনি এসব নির্দেশনা দেন।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানসহ পুলিশ, র‌্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন, আসন্ন বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
এ সময় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই যোদ্ধা শহীদ শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার এবং তদন্তের অগ্রগতি নিয়েও বিশদ আলোচনা হয়।
পুলিশের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়, স¤প্রতি দু’টি জাতীয় দৈনিক ও দু’টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ৩১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। 
এর মধ্যে সোমবার সকাল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অন্তত ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন মোঃ কাশেম ফারুকি, মোঃ সাইদুর রহমান, রাকিব হোসেন, মোঃ নাইম, মোঃ সোহেল রানা ও মোঃ শফিকুল ইসলাম। বাকি শনাক্ত ব্যক্তিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ ছাড়া চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবনের কাছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টার ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ দেখে তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলেও বৈঠকে জানানো হয়।
এদিকে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিউনিউতে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে ‘ভোটের গাড়ি’ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে ভিডিওবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা এমন নির্বাচন চাই- যেখানে থাকবে না ভয়, থাকবে শুধু জনগণের নির্ভীক মত প্রকাশ । সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধ পরিকর। তিনি বলেন, আপনি দেশের মালিক, এদেশ আগামী পাঁচ বছর আপনার পক্ষে কে চালাবে, সেটা আপনি ঠিক করবেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ২০২৬ উপলক্ষে ভোটারদের সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে ‘ভোটের গাড়ি’র প্রচার এর মধ্যে দিয়ে শুরু হচ্ছে।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিক্রম করছে। সামনে আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ওপর গণভোট-এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে যাত্রা শুরু করছে। ১০টি ভোটের গাড়ি ‘সুপার ক্যারাভান’, এসব গাড়ি দেশের ৬৪টি জেলা এবং ৩০০টি উপজেলায় ঘুরে বেড়াবে। তারা মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে নির্বাচন ও গণভোট সম্পর্কে তথ্য পৌঁছে দেবে। ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করবে এবং গণতন্ত্রের বার্তা ছড়িয়ে দেবে।
তিনি বলেন, ভোটাধিকার কারও দয়া নয়, এটি আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমেই আমরা ঠিক করি ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে? একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা শুধু সরকারে দায়িত্ব নয়, এটি রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। এই সুপার ক্যারাভান কেবল একটি গাড়িই নয়, এটি গণতন্ত্রের আনন্দবাণী বহনকারী ভোট। এটি জানিয়ে দেবে আপনার একটি ভোট কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা মনে করিয়ে দেবে নিষ্ক্রিয়তা নয়, অংশগ্রহণে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি তরুণ সমাজ, নারী ভোটার এবং প্রথমবারের ভোটারদের প্রতি আপনারা এগিয়ে আসুন, প্রশ্ন করুন, জানুন-বুঝুন এবং আপনার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিন।  সৎ ও সমর্থ প্রার্থী বেছে নিন, চিন্তাভাবনা করে ভোট দেন। এবারের নির্বাচনে আপনি আরও একটা ভোট দেবেন জুলাই সনদের ওপর গণভোট। দীর্ঘ ৯ মাস ধরে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দিনের পর দিন বৈঠক করে এই সনদ তৈরি হয়েছে। এই সনদ দেশের মানুষ পছন্দ করলে দেশ আগামী বহু বছরের জন্য নিরাপদে চলবে বলে আমার বিশ্বাস।
ভয়হীন ও মুক্ত পরিবেশে ভোট দেওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করার বিষয়ে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই, যেখানে থাকবে না ভয়, থাকবে না বাধা-থাকবে কেবল জনগণের মুক্ত ও নির্ভীক মত প্রকাশ। সরকার সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।’
একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে দেশের প্রতিটি নাগরিকেরও দায়িত্ব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ভোটাধিকার কারো দয়া নয়-এটি আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। এই অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমেই আমরা ঠিক করি, আমাদের ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়; এটি রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব।
তিনি আরও বলেন, ‘চলুন, ভোট দিই-নিজের জন্য, দেশের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য, নতুন পৃথিবীর জন্য।’
‘ভোটের গাড়ি’ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই সুপার ক্যারাভান কেবল একটি গাড়ি নয়, এটি গণতন্ত্রের আনন্দ বাণী বহনকারী বহর। এটি জানিয়ে দেবে, আপনার একটি ভোট কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা মনে করিয়ে দেবে নিষ্ক্রিয়তা নয়, অংশগ্রহণই গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে।
তিনি জানান, এবারের নির্বাচনে ভোটারদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি জুলাই জাতীয় সনদের ওপর গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ নয় মাস ধরে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এই সনদ প্রস্তুত করা হয়েছে। জনগণ এই সনদে সমর্থন দিলে দেশের ভবিষ্যৎ দীর্ঘমেয়াদে নিরাপদ ও স্থিতিশীল হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সনদের পক্ষে থাকলে গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেওয়ার আহŸান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিক্রম করছে। সামনে আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ওপর গণভোট।
এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে যাত্রা শুরু করেছে ১০টি ভোটের গাড়ি-সুপার ক্যারাভান। এসব গাড়ি দেশের ৬৪টি জেলা ও ৩০০টি উপজেলায় ঘুরে বেড়াবে। তারা মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে নির্বাচন ও গণভোট সম্পর্কে তথ্য পৌঁছে দেবে, ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করবে এবং গণতন্ত্রের বার্তা ছড়িয়ে দেবে।
গণতান্ত্রিক এই যাত্রাকে সফল করতে তিনি সবাইকে এগিয়ে আসার আহŸান জানান।

্রিন্ট

আরও সংবদ