খুলনা | বুধবার | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৯ পৌষ ১৪৩২

‘ডিসি-এসপিদের দেখে বুকের জোর বেড়েছে’

দীপু হত্যার মতো ঘটনা যেন না ঘটে ব্যবস্থা নিতে হবে: সিইসি

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩৭ এ.এম | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫


আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স¤প্রতি ময়মনসিংহে ঘটে যাওয়া দীপু হত্যার মতো আরও অনেক ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে ডিসি-এসপি, সব রেঞ্জের ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্মেলনে এ কথা বলেন সিইসি। তিনি বলেন, ময়মনসিংহে একজন হিন্দুকে পুড়িয়ে মেরেছে। এ ধরনের ঘটনা আরও হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি যাতে অটুট থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
অতীতের বিতর্কিত তিনটি নির্বাচনের মাধ্যমে যে বদনাম হয়েছে সেটা বর্তমান নির্বাচন কমিশন ঘুচিয়ে দিতে চায় বলে নিজেদের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সিইসি। ডিসি-এসপিদের উদ্দেশ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আইনের শাসন কাকে বলে তা এবার দেখিয়ে দিতে চায় ইসি। আমরা খারাপ নির্বাচনের অপবাদ ঘুচিয়ে দিতে চাই একটি ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে। আইনের শাসন নিশ্চিত করতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, আইন সবার জন্য সমান। অপরাধী কাউকে ছাড় দেবেন না।
সিইসি তার বক্তব্যের শুরুতে শহীদ ওসমান হাদির রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
গত ১৮ ডিসেম্বর ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে দীপু চন্দ্র দাশকে মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে আগুনে পোড়ানো হয়। বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে র‌্যাব জানায়, কোথায় কবে ধর্ম অবমাননা করেছে দীপু, তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সভায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ডিসি-এসপিদের আশ্বাসের কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, তাদের কথা শুনে আমার বুকের জোর বেড়েছে। আমার একমাত্র অ্যাজেন্ডা দেশ ও জাতির জন্য। আপনাদের সহযোগিতা পেলে তা সফল করতে পারব। কোনো রকম পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কাজ করবেন না।
তিনি বলেন, দু’জন ব্যক্তি আমাদের কাছে ভিভিআইপি। আইন থাকলে এখনই ঘোষণা করে দিতাম-একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অন্যজন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি উলে­খ করে প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা দেখেছি ঢাকা শহর পোস্টারে ছেয়ে গেছে। কিন্তু আপনারা যে সরাচ্ছেন তা কিন্তু দেখছি না।
তিনি আরও বলেন, ইসি এখন অভিযোগ দাখিলের দপ্তর হয়ে গেছে। মানুষকে জানাতে হবে কোথায় অভিযোগ করবে। অভিযোগ দায়েরের জন্য সেন্টার করতে হবে এবং ওই সেন্টার থেকে অভিযোগ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠাতে হবে।
মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাহস জুগিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, আপনারা বুক ফুলিয়ে যখন আমাকে সাহস দেবেন, আমিও তখন সাহসী হব। আপনাদের অঙ্গীকার আমাকে সাহসী করে তোলে। আপনারা যখনই আইনের প্রতিষ্ঠার জন্য সাহসী পদক্ষেপ নেবেন, বিধি-বিধানের আলোকে কাজ করবেন-ইনশাআল­াহ নির্বাচন কমিশন আপনাদের পাশে থাকবে। আপনাদের দেখে বুকের জোর বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাকে খুশি করার দরকার নেই। আপনারা আপনাদের অধীনস্থদের আইনের মাধ্যমে পরিচালনা করবেন। সিস্টেম যাতে ঠিকমতো ডেলিভারি দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা আপনাদেরই করতে হবে। কোনো ধরনের বিচ্যুতি যেন না ঘটে, সেদিকে কঠোর নজর রাখতে হবে।
সিইসি বলেন, দেশের যুগসন্ধিকালে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের মত গুরুদায়িত্ব পালনে কোথাও কোনো ব্যর্থতার অবকাশ নেই।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মোহাম্মদ সানাউল­াহ বলেছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের স্বাধীনতায় বাধা হবে না ইসি। একই ধরনের কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলামও।
সন্ত্রাসীদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে মোহাম্মদ সানাউল­াহ বলেন, নির্বাচন কমিশন আর রক্তপাত চায় না দেখতে চাই না, আর মব দেখতে চায় না।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে মাঠপর্যায়ে অসাধারণ কাজ হচ্ছে, আচরণবিধি প্রতিপালনে বিগত সময়ের চেয়ে বেশি মানছে এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসনের ফ্রিডম অব অ্যাকশনে বাধা হবে না ইসি।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকারও নির্ভয় দিলেন মাঠ প্রশাসনকে। বলেন, ভয়ের কোনো কারণ নেই। কমিশন আশাবাদী ইতিহাসের সেরা নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
সমন্বয়হীনতার কোনো সুযোগ নেই। সমন্বয়হীনতা টের পেলে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি আরও বলেন, ইসি ভেঙ্গে যাবে কিন্তু মচকাবে না।
একই অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমেদ বলেন, ডিসি এসপিরা লবনের মতো।
এর আগে সকালে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে ডিসি-এসপিদের কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। বলেন, যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে দেশ, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জবাব দিতে পারবো না। আর তাই দায়িত্বে ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আইনের শাসন কাকে বলে তা এবার দেখিয়ে দিতে চায় ইসি।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনের অডিটরিয়ামে আয়োজিত গণভোট ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৬ উপলক্ষে রিটার্নিং অফিসার ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় আয়োজন করা হয়।
ইসি সচিব আখতার আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন-পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, নির্বাচন কমিশনার-আব্দুর রহমানেল মাছউদ, বেগম তাহমিদা আহমদ, মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মোঃ সানাউল­াহ (অবসরপ্রাপ্ত), ইসি সচিব আখতার আহমেদ, দেশের ৬৪ জন জেলা প্রশাসক, এসপি, আট বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারগণ ও ডিআইজিবৃন্দ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ৬৪ জেলার ৬৪ জন নির্বাচন কর্মকর্তা, ১০জন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তারা, যারা আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করবেন।

্রিন্ট

আরও সংবদ