খুলনা | শুক্রবার | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১১ পৌষ ১৪৩২

সংকটে আইনের শাসন : প্রান্তিক জনপদে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা

|
১১:৪৯ পি.এম | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫


অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, দেশে যেন খুনখারাবির ঘটনা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। পত্রিকায় প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন আমাদের দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এক বিভীষিকাময় চিত্র তুলে ধরেছে। নোয়াখালীর হাতিয়ায় চর দখলকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন জেলায় তুচ্ছ ঘটনায় পাঁচজন খুন হয়েছেন এবং দু’টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। রাউজানে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের বসতঘরে আবারও তালা লাগিয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
হাতিয়ার জাগলার চরে যে ভয়াবহ সংঘর্ষ ও প্রাণহানি ঘটেছে, তার মূলে রয়েছে ভূমি দখল ও আধিপত্য বিস্তারের পুরনো নেশা। খাসজমির দখল নিয়ে ‘বাহিনী’ গড়ে তোলা এবং প্রকাশ্য দিবালোকে বন্দুকযুদ্ধের এই ঘটনা প্রমাণ করে যে দেশে আইনের শাসন এখনো কতটা ভঙ্গুর। নদীভাঙা ভূমিহীন মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনীগুলোর জমি কেনাবেচার অবৈধ কারবার বন্ধে প্রশাসনের দীর্ঘসূত্রতা ও নজরদারির অভাব প্রশ্নবিদ্ধ।
যেখানে পাঁচটি তাজা প্রাণ ঝরে গেল, সেখানে যাতায়াত ব্যবস্থার অজুহাতে পুলিশের দেরিতে পৌঁছানো সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যক্তিগত ও তুচ্ছ বিবাদের জেরে খুনের ঘটনাগুলো উদ্বেগজনক। বগুড়ায় ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে হত্যা, কিশোরগঞ্জে মুরগি কেনা নিয়ে বৃদ্ধকে পিটিয়ে মারা কিংবা রাজবাড়ীতে জমির আইল নিয়ে সংঘর্ষে প্রাণহানি-এসবই সমাজের অসহিষ্ণুতার প্রকাশ। মানুষের মধ্যে ধৈর্য ও সহমর্মিতার স্থান দখল করে নিচ্ছে চরম সহিংসতা।
আইনি ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার অভাব এবং বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা অপরাধীদের দুঃসাহস জোগাচ্ছে। সবচেয়ে আতঙ্কজনক খবরটি এসেছে চট্টগ্রামের রাউজান থেকে। সেখানে গভীর রাতে বাইরে থেকে দরজা তালাবদ্ধ করে বসতঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনাটি কেবল অপরাধ নয়, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড ঘটানোর চেষ্টা। পর পর তিন দিন হিন্দু স¤প্রদায়ের ঘরবাড়িতে একইভাবে আগুন দেওয়ার ঘটনা গভীর উদ্বেগের জন্ম দেয়। এটি কি সা¤প্রদায়িক অস্থিরতা তৈরির কোনো গভীর ষড়যন্ত্র, নাকি ব্যক্তিগত শত্র“তা তা দ্রুত উদঘাটন করা জরুরি। 
ঘরের বাইরে তালা আটকে আগুন দেওয়া এক চরম পাশবিকতা, যা কোনো সভ্য মানুষের কাজ হতে পারে না। এমতাবস্থায় প্রশাসনের কাছে আমাদের জোরালো দাবি, অস্ত্রধারী বাহিনী ও সন্ত্রাসীদের দমনে অবিলম্বে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করতে হবে। হাতিয়ার চরাঞ্চল থেকে শুরু করে রাউজানের গ্রাম পর্যন্ত প্রতিটি নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। অপরাধীর কোনো দল বা গোষ্ঠী পরিচয় থাকতে পারে না; প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে সামাজিক অস্থিরতা রোধে জনপ্রতিনিধি ও সচেতন সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং মানবিক মূল্যবোধের পুনরুদ্ধার ছাড়া এই নৈরাজ্য থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।

্রিন্ট

আরও সংবদ