খুলনা | শুক্রবার | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১১ পৌষ ১৪৩২

এবার উড়িষ্যায় ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে পশ্চিমবঙ্গেও মুসলিম যুবককে পিটিয়ে হত্যা, দুই সহকর্মীকে পিটিয়ে জখম

খবর প্রতিবেদন |
০১:২২ এ.এম | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫


এবার ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে উড়িষ্যা রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের এক মুসলিম নির্মাণ শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। জুয়েল রানা নামে ওই যুবককে পেটানোর সময় ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানও দিতে বলে ঘাতকরা। জুয়েলের দুই সহকর্মীও পিটুনির শিকার হয়ে এখন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বুধবার  রাত সাড়ে ৮টার দিকে উড়িষ্যার সম্বলপুর জেলায় এ হত্যাকান্ড ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খবর বিবিসি বাংলার।
১৯ বছর বয়সী জুয়েল রানা পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের সুতি অঞ্চলের বাসিন্দা। মাত্র পাঁচদিন আগে তিনি বাড়ি থেকে কাজ করতে উড়িষ্যা গিয়েছিলেন।
তার দুই সহকর্মী জানান, হিন্দুত্ববাদীরা প্রথমে তাকে বাংলাদেশি বলে সন্দেহ করে এবং পরিচয়পত্র দেখতে চায়। এরপর তাকে পেটাতে থাকে।
অভিবাসী শ্রমিকদের একটি সংগঠন বলছে, বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার ‘বাংলাদেশি’ এবং ‘রোহিঙ্গা’ ধরার যে বিশেষ প্রক্রিয়া শুরু করেছে, তারই ফলশ্র“তিতে বাংলাভাষী মুসলিমরা এভাবে একের পর এক ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হচ্ছেন।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে নির্মাণ শ্রমিক পল্টু শেখ বলেন, জুয়েল আর বাকি দু’জন ঘরে রান্নাবান্না করে খেয়ে বাইরে বেরিয়েছিল বিড়ি খেতে। আমাদের ঘরের একেবারেই পাশে ওরা থাকত। একদল স্থানীয় প্রথমে এসে ওদের কাছ থেকে বিড়ি চায়। ‘তখন রাত সাড়ে ৮টা হবে। ওই দলটা বিড়ি চাওয়ার পরেই সন্দেহ করে যে জুয়েলরা তিনজন বাংলাদেশি কি না, আধার কার্ড দেখতে চায়। একজন আধার কার্ড আনতে ঘরে গেছে, এর মধ্যেই মারধর শুরু করে দেয় ওই স্থানীয় লোকেরা।
পল্টু শেখ বলেন, এর আগেও বাংলাদেশি বলে সন্দেহ করে তাদের হুমকি দিয়েছে স্থানীয় লোকেরা। কিন্তু এতদিন কেউ মারধর করেনি, তবে শেষ পর্যন্ত তা ঘটল বুধবার রাতে। ওদের হাত থেকে একজন পালিয়ে এসে আমাদের ঘরে খবর দেয় যে আমায় বাঁচাও, মেরে ফেলছে। আমরা সবাই তখন বেরিয়ে আসি।
আরেক নির্মাণ শ্রমিক সাদ্দাম হুসেন বলেন, চিৎকার শুনে আমরা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখি ওই লোকগুলো অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে পালিয়ে গেল। এরপর আমরা সবাইকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। জুয়েল মারা গেছে। গ্রামে খবর দেওয়া হয়েছে।
মুর্শিদাবাদ জেলার সুতি এক নম্বর ব্লকের অধীন চক বাহাদুরপুর গ্রামে জুয়েল রানার বাড়ি। তার চাচা রিয়াকুল শেখ প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বলেন, ওরা তিনজন খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিড়ি খাওয়ার সময়েই এই ঘটনা। চার-পাঁচ জন গুন্ডা এসেছিল। তারা জুয়েলদের তিনজনকে বলে যে তোমরা বাংলাদেশি, ভারতে কেন থাকবে। জয় শ্রীরাম স্লোগান দিতে বলেছিল। মারধর করার সময়ে মোবাইল কেড়ে নেয়।
মহকুমা পুলিশ অফিসার তোফান বাগ বলেন, তিনজন শ্রমিক বিড়ি খাচ্ছিলেন। সেই সময়ে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা সেখানে গিয়ে আধার কার্ড দেখতে চায়। তারপরেই তিনজনকে মারধর করে। একজন ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। তার লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে এবং পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে এবং তদন্ত এখনো চলছে বলে জানান তোফান বাগ।
ডিসেম্বর মাসেই ভারতের তিনটি রাজ্যে গণপিটুনিতে মৃত্যুর তিনটি ঘটনা সামনে এসেছে। এর মধ্যে বিহারে আতহার হুসেইন নামে একজন মুসলিম ফেরিওয়ালাকে গত ৫ ডিসেম্বর ধর্মীয় পরিচয়ের গণপিটুনি দিয়ে মারা হয়। তারও আগে কেরালায় একজন দলিত অর্থাৎ নিম্নবর্ণের হিন্দুকে বাংলাদেশি সন্দেহে পিটিয়ে মারা হয়।
তৃতীয় ঘটনাটি বুধবার রাতে, ওড়িশা রাজ্যে ঘটল। জুয়েল রানাও পরিযায়ী শ্রমিক ছিলেন। মুর্শিদাবাদ থেকে কাজে গিয়েছিলেন উড়িষ্যায়।
উড়িষ্যায় এ মাসেই বাংলাদেশি সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হন পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বাসিন্দা এক মুসলিম যুুবক। তাকে মারধর ও ‘জয় শ্রীরাম’ বলার জন্য শারীরিক নির্যাতন করা হয়।

্রিন্ট

আরও সংবদ