রাজবাড়ীর পাংশায় অমৃত মন্ডল ওরফে সম্রাটকে হত্যার ঘটনাটিকে একটি মহল সা¤প্রদায়িক হামলা হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে অন্তর্বতী সরকার। এ ধরনের অপপ্রচার সামাজিক স¤প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে। এজন্য বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক ও সা¤প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার থেকে সবাইকে বিরত থাকার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিফুল আলমের পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রেস সচিবের ফেসবুক পোস্টটি হু-বহু তুলে ধরা হলো: রাজবাড়ীর পাংশা থানাধীন এলাকায় বুধবার রাতে সংঘটিত একটি দুঃখজনক হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে।
পুলিশের তথ্য ও প্রাথমিক তদন্ত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, ঘটনাটি মোটেই সা¤প্রদায়িক হামলা নয়। এটি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড থেকে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতির থেকে সৃষ্ট ঘটনা। নিহত ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী অমৃত মন্ডল ওরফে সম্রাট চাঁদা দাবির উদ্দেশ্যে এলাকায় উপস্থিত হন এবং বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে প্রাণ হারান। তিনি ইতিপূর্বে ২০২৩ সালে রুজুকৃত হত্যা এবং চাঁদাবাজির মামলাসহ একাধিক গুরুতর মামলার আসামি ছিলেন। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে।
পুলিশ ঘটনাস্থল হতে সম্রাটের সহযোগী সেলিমকে একটি বিদেশী পিস্তল ও ১টি পাইপগানসহ আটক করে। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় সরকার কঠোর নিন্দা জানায়। সরকার সুস্পষ্টভাবে জানাতে চায়, যে কোনো ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকান্ড, গণপিটুনি বা সহিংসতা সরকার কোনো ভাবেই সমর্থন করে না। এ ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
একইসঙ্গে সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, একটি মহল নিহত ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে ঘটনাটিকে সা¤প্রদায়িক হামলা হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসদুদ্দেশ্য প্রণোদিত। এ ধরনের অপপ্রচার সামাজিক স¤প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।
সরকার সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহŸান জানাচ্ছে এবং বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক ও সা¤প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশ একটি সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির দেশ এ দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার কোনো যে কোনো অপচেষ্টা সরকার কঠোরহস্তে দমন করবে।
পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, অমৃত মন্ডল নিজের নামে এলাকায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে আশপাশের এলাকায় ভয়ভীতি দেখিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও চাঁদাবাজি করতেন বলে অভিযোগ আছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ভারতে পালিয়ে থেকেও সম্রাট বাহিনীর মাধ্যমে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছেন। স¤প্রতি তিনি নিজ এলাকায় ফিরে আসেন। এর মধ্যে হোসেনডাঙ্গা পুরাতন বাজার এলাকার এক ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে চাঁদা দাবি করেন অমৃত। কিন্তু চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গতকাল সম্রাট বাহিনীর অন্য সদস্যদের ওই বাড়িতে যান। এ সময় বাড়ির মালিককে না পেয়ে তার ছেলেকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে বাড়ির লোকজন ‘ডাকাত, ডাকাত’ বলে চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন গিয়ে সম্রাটকে পিটুনি দেন। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।