খুলনা | শনিবার | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১২ পৌষ ১৪৩২

শীতের সবজিতে স্বস্তি ফিরলেও মুদিপণ্যের বাজার চড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:১৫ এ.এম | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫


নগরীতে কাঁচাবাজারে সরবরাহ বেড়েছে, কমতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজির দাম। এছাড়া স্বস্তি মিলেছে পেঁয়াজের দামেও। মাত্র দুই-তিন সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন পেঁয়াজের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে আসায় মধ্য ও নিম্নবিত্ত ক্রেতাদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। তবে সবজি ও পেঁয়াজের দামে পতন ঘটলেও মাছ, মাংস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদিপণ্যের বাজার এখনও আগের মতোই স্থিতিশীল রয়েছে। 
শুক্রবার সকালে নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতের সবজিতে বাজার এখন ভরপুর। নতুন আলু, শিম ও টমেটোর দাম গত সপ্তাহের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। 
বাজার ঘুরে দেখা যায়, নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজের কেজিও এখন ৭০ থেকে ৭৫ টাকা,চায়না রসুন ২২০ টাকা, মানভেদে দেশি রসুন ১২০ টাকা। গত দু-তিন সপ্তাহ আগের চেয়ে পেঁয়াজের দাম প্রায় অর্ধেক কমেছে। এতে ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তবে বাজারে মুরগি, ডিম, মাছ ও অন্যান্য মুদিপণ্যের দাম আগের মতোই স্থিতিশীল। 
পরিবর্তন নেই মাছ, মাংস ও নিত্য প্রয়োজনীয় মসলার দামে। রুই-কাতলা ৪০০, পাঙাশ ২০০ টাকা কেজি, পোল্ট্রি মুরগি কেজিপ্রতি ১৭০ টাকা, ডিমের ডজন ১২০ টাকা, খাসি মাংস ১৩০০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। দোকানীরা জানান, দাম আগের মতোই আছে।  
তবে প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমেছে পাকিস্তানি মুরগির দাম। যা গত কয়েক সপ্তাহ আগে ছিল ৩০০ টাকার ওপরে, তা এখন ২৮০ টাকা। অন্যদিকে কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি ১৬০ টাকা ও কক মুরগি ২৭০ টাকা, সোনালী মুরগি ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। 
মূল্য কমেছে সবধরনের সবজির। নগরীর ময়লাপোতাস্থ কেসিসি সন্ধ্যা বাজার, নগরীর রূপসা ট্রাফিক মোড়স্থ রূপসা কেসিসি সুপার মার্কেটসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধা কপি ৩০ টাকা, উচ্ছে ৭০-৮০ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০ টাকা, ঝিঙে ৪০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা, বরবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৪০ টাকা, কুশি ৪০ টাকা, কাঁকরল ৪০ টাকা, লাউয়ের পিস ৩০ টাকা, আলু ২৫ টাকা, গাজর ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কাঁচাকলা প্রতিহালি ৪০ টাকা, শীতকালীন সিম ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে শাকের দাম কমেছে। পালং শাক, লাল শাক ও মুলা শাকের আঁটি এখন বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকার মধ্যে। 
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকায় বেশ শীত অনুভূত হওয়ায় বাজারগুলোতে ক্রেতা উপস্থিতি কিছুটা কম। বিক্রেতারা বলছেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাসমাগম বাড়বে। সবজি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমে গ্রাহকের নাগালে এসেছে। এতে ক্রেতাদের মধ্যে শীতের সবজি কেনায় স্বস্তি দেখা গেছে। 
বাজারে দেখা গেছে, প্রতিটি দোকানে এখন থরে থরে সাজানো নতুন সবজি। দাম নাগালের মধ্যে থাকায় ক্রেতারাও প্রয়োজন মতো সবজি কিনতে পারছেন। 
কাঁচা বাজারের অধিকাংশ জিনিসের দাম কিছুটা কমলেও অপরিবর্তিত আছে নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদিপণ্যের দাম।
গত এক সপ্তাহ আগে বোতলজাত ভোজ্য সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ১৮৪ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে প্রতিলিটার বিক্রি হচ্ছে ১৯৩ টাকা দরে। অর্থাৎ বোতলজাত ভোজ্য সয়াবিন ফ্রেশ, তীর, বসুন্ধরা পাঁচ লিটার বিক্রি হচ্ছে ৯৬৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা বিক্রি হয়েছে ৯২০ টাকা দরে। অন্যদিকে খোলা সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা। তাছাড়া  কৌটাজাত ঘি ১৪৫০-১৫৫০ টাকা, খোলা ঘি ১২৫০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১১০ টাকা, খোলা চিনি ৯৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৩০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১২০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এলাচি ৪ হাজার ৭৫০ টাকা, দারুচিনি ৫০০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ২৮০ টাকা, সাদা গোল মরিচ ১ হাজার ৩৫০ টাকা ও কালো গোল মরিচ ১ হাজার ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। 
এছাড়া মাসের পর মাস স্থিতিশীল রয়েছে মশুর ডালের দাম। প্রতিকেজি মশুর ডাল (মোটা) ৯০ টাকা, মশুর ডাল (সরু) ১৫৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। একমাস আগেও প্রতিকেজি মোটা মশুর ডাল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, মশুর ডাল (সরু) ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা,খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, মাষকলাই ডাল ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। 
খুচরা বাজারে ৫৫ টাকার নিচে মিলছে না চাল। নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি স্বর্ণা চাল ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা, মানভেদে আঠাশ বালাম ৫৫ টাকা, ৬০ টাকা ও  ৬৫ টাকা, মিনিকেট ভালোমানের ৭৫ টাকা, নি¤œমানের ৬০ থেকে ৬৬ টাকা ও বাসমতি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি প্যাকেট পোলাও চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাও চাল মানভেদে ৯০-১৩০ টাকা।
কাঁচা বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ায় সাধারণ মানুষের নাগালে এসেছে অনেক পণ্য। বিশেষ করে পেঁয়াজ ও নতুন আলুর দাম দ্রুত কমে আসায় নিম্ন আয়ের মানুষের খরচ কিছুটা কমেছে। তবে ক্রেতাদের মতে, কেবল কয়েকটি পণ্যের দাম কমলেই বাজারে পূর্ণ স্বস্তি ফেরা সম্ভব নয়। তারা মনে করেন, বাজার মনিটরিং জোরদার করে চাল, ডাল, তেলসহ মুদিপণ্যের দাম কমাতে পারলে সব শ্রেণির মানুষের জন্য তা সুফল বয়ে আনবে। 

্রিন্ট

আরও সংবদ