মোংলা কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন সদস্যদের এক বছরে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১১২টি দেশ-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। আটক করা হয়েছে ৪৯ জন বন ও জলদস্যুদের। জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করা ৫২ জন জেলেকে। এছাড়াও ইয়াবা, গাঁজা, বিদেশী মদ, হরিণের মাংসসহ সুন্দরবনের বনজ সম্পদ, পর্যটক ও মোংলা বন্দরের সকল নিরাপত্তায় কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। 
সোমবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসকল তথ্য জানায় কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মেসবাউল ইসলাম। তিনি জানান, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড দেশের উপকূলীয় ও নদী তীরবর্তী অঞ্চলে নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ, বনজ সম্পদ সংরক্ষণ, মৎস্যসম্পদ রক্ষা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানবিক সহায়তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষ করে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, জল ও বনদস্যু নির্মূল, জেলেদের নিরাপত্তা প্রদান এবং সমুদ্র ও নৌপথে অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড জনগণের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি মোংলা বন্দর ও অন্যান্য কেপিআই সমূহের নিরাপত্তা প্রদানসহ চোরাচালান প্রতিরোধ, বনজ সম্পদ সংরক্ষণ, মৎস্যসম্পদ রক্ষা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানবিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। 
তিনি বলেন, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সুন্দরবনে ডাকাত ও জলদস্যু বিরোধী অভিযানে ৩৮টি বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র, ২টি হাত বোমা, ৭৪টি দেশীয় অস্ত্র, অস্ত্র তৈরির বিপুল সরঞ্জামসহ ৪৪৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধারের পাশাপাশি মুক্তিপণের দাবিতে সুন্দরবন থেকে জিম্মি করা ৫২ জন জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সুন্দরবনের দস্যু দমনে এসব অভিযানে মোট ৪৯ জন দস্যুকে অস্ত্রসহ আটক করে প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫,৬৭৪ পিস ইয়াবা, ১৩ কেজি গাঁজা, ১,২৫৬ বোতল বিদেশি মদ ও বিয়ারসহ মোট ৫১ জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে আইনের কাছে হস্তান্তর করেছে।
বন্যপ্রাণি ও পরিবেশ সংরক্ষণ অভিযানে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকাগুলোতে অভিযান চালিয়ে ৮২৪ কেজি হরিণের মাংস, ৬০০টি হরিণের ফাঁদ, সুন্দরবনের কর্তন নিষিদ্ধ বিপুল পরিমাণ কাঠ, পাচারের সময় ২টি বন্যপ্রাণি তক্ষক, বিরল প্রজাতির ৬২পিস কচ্ছপ, এক হাজার ৪৭৩ কোটি টাকার অবৈধ ৩,৪০০ কেজি পলিথিন ও ১২ কোটি মিটার নেট জাল এবং ১২০ কোটি টাকার অবৈধভাবে আহরণ করা চিংড়ি ও রেনু পোনা জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও আর্তমানবতার সেবায় ২ হাজার দুস্থ, অসহায় ও শিশুদের চিকিৎসা সেবা ও বিনামূল্যে ওষুধ ও শীতবস্ত্র বিতরণ, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, জেলে, মাঝি, পেশাজীবী ও সাধারণ জনগণকে বন রক্ষা, বনজ প্রাণি সংরক্ষণ, দুর্যোগকালীন উদ্ধার কার্যক্রম, অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ, কিশোর-তরুণদের মাঝে দেশপ্রেম জাগ্রতকরণ এবং মাদক বিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধিতে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন সদস্যরা। 
তিনি জানান আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু করেছে কোস্ট গার্ড। নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের আওতাধীন উপকূলীয় এলাকাসমূহে ইতিমধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য কোস্ট গার্ড সদস্যদের নির্বাচন কেন্দ্রিকপ্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। অত্র অঞ্চলের জনগণের নিরাপত্তা এবং অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করতে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন সর্বদা সজাগ ও প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানায় জোনাল কমান্ডার।
মোংলা বন্দরসহ উপকূলীয় অঞ্চলে রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সফরকালীন সময়ে কোস্ট গার্ড কর্তৃক নৌপথে নিরাপত্তা প্রদান, সুন্দরবনের আগত পর্যটকদের দুর্ঘটনা রোধে কোস্ট গার্ড পর্যটকবাহী নৌযানসমূহে লাইফ জ্যাকেটের ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন রোধে নিয়মিত টহল কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, বন বিভাগ, মৎস্য অধিদপ্তর এবং অন্যান্য মেরিটাইম সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন শুধু উপকূলীয় নিরাপত্তা নয় বরং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের জান-মাল রক্ষা, বন্দর নিরাপত্তা, বনজ সম্পদ সংরক্ষণ এবং মানবিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে মানুষের আস্থা অর্জন করেছে এবং ভবিষ্যতেও এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মেসবাউল ইসলাম।