খুলনা | বুধবার | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৭ পৌষ ১৪৩২

মিলিয়ন মুসল্লির অংশগ্রহণে খালেদা জিয়ার জানাজা সম্পন্ন

খবর প্রতিবেদন |
০৩:১২ পি.এম | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

লাখো মানুষের অশ্রু আর গুমরে মরা কান্নায় সম্পন্ন হলো সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাষ্ট্রীয় জানাজা।

বুধবার (৩১ ডিসেম্ব) বিকেল ৩টা ৩ মিনিটে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে খালেদা জিয়ার জানাজা শুরু হয়। ৩টা ৫ মিনিটে জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা, বিদেশি কূটনীতিক, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ জানাজায় অংশগ্রহণ করেন।

এদিন সকাল থেকেই প্রিয় নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখো মানুষের ঢল নামে জানাজাস্থল ও এর আশপাশের এলাকায়। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ছাড়িয়ে জনস্রোত খামারবাড়ি, আসাদগেট এবং ফার্মগেট এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

জানাজা শুরুর আগে প্রিয় নেত্রীর স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। শীর্ষ নেতারা এবং পরিবারের সদস্যরা। তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে আসা ছিল আকস্মিক। কিন্তু দেশের প্রয়োজনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন অপরিহার্য।

এরপর খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন এবং মায়ের জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন। তার কাছে কেউ কোনো ঋণ পেলে যোগাযোগ করতে বলেন। এছাড়া খালেদা জিয়ার আচরণে কেউ কোনো কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমা করে দেওয়ার আবেদন জানান তারেক রহমান।

কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে জানাজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও মানুষের শোকের ছায়া কাটেনি। জানাজা শেষে যখন মরদেহবাহী গাড়িটি দাফনের উদ্দেশে রওনা হয়, তখনও রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা হাজারো মানুষকে দুই হাত তুলে মোনাজাত করতে দেখা যায়। এই জানাজার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির একটি বর্ণিল ও দীর্ঘ অধ্যায়ের আনুষ্ঠানিক বিদায় সম্পন্ন হলো।

রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও সংসদ ভবন এলাকা জানাজার জন্য নির্ধারিত হলেও লোক সমাগম ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। ফার্মগেট, বিজয় সরনি, আগারগাঁও, কারওয়ানবাজার, বাংলামোটর, তেজগাঁও পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য ছিল। বানের স্রোতের মতো চার দিক থেকে সাধারণ মানুষ আসতে থাকে জানাজার দিকে। প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে গতকাল থেকেই ঢাকামুখী মানুষের ঢল নামে।

জনশ্রুতি আছে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জানাজা হয়েছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের। সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ ওসমান হাদির জানাজাও ছিল স্মরণকালের বৃহৎ। তবে সব রেকর্ড ছাপিয়ে খালেদা জিয়া স্থান করে নিয়েছেন ইতিহাসের পাতায়। এতো বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি ও ভালোবাসায় এর আগে কোনো নেতা বিদায় নিতে পারেননি।

জানাজায় অংশ নেওয়া সাধারণ মানুষ ও নেতা-কর্মীরা জানান, বেগম খালেদা জিয়া আমৃত্যু জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, আজ কৃতজ্ঞ জাতি তার শেষ বিদায়বেলায় সেই ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। দীর্ঘ ৪৫ বছরের রাজনৈতিক লড়াইয়ে তিনি যে জনপ্রিয়তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, আজকের এই মহাসমুদ্র তারই প্রমাণ।

আপসহীন নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে সকাল থেকেই রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ঢল নামে শোকার্ত মানুষের। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনও ছুটে আসেন। দেশনেত্রীকে হারানোর বেদনা ফুটে উঠেছে তাদের চোখে-মুখে। জানাজা শেষে স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পাশে দাফন করা হবে খালেদা জিয়াকে।

উল্লেখ্য যে, গত ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন খালেদা জিয়া। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার অবস্থা অত্যন্ত জটিল এবং তিনি সংকটময় মুহূর্ত পার করছিলেন। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় মৃত ঘোষণা করেন তাকে চিকিৎসকরা। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

্রিন্ট

আরও সংবদ