খুলনা | বৃহস্পতিবার | ০১ জানুয়ারী ২০২৬ | ১৭ পৌষ ১৪৩২

স্বাগতম ২০২৬, বিদায় ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক |
১২:১৩ এ.এম | ০১ জানুয়ারী ২০২৬


সময়ের অতল গহবরে হারিয়ে গেল আরও একটি বছর ২০২৫। আরেকটি নতুন বছর ২০২৬-এর অভিষেক হলো রেখা বিশ্ববাসীর সামনে। বর্ষপঞ্জির পাতা বদলালেও পেছনে রয়ে গেছে রক্ত, অশ্র“, প্রতিবাদ আর প্রত্যাশার স্মৃতি। নববর্ষ বা নতুন বছর হলো সেই সময় বা দিন যখন থেকে একটি পঞ্জিকার নতুন বছর শুরু হয় এবং পঞ্জিকার বছরের গণনা এক এক করে বৃদ্ধি হয়।  
স্বাগত ২০২৬, নতুন বছরের সূর্যোদয়। এর আগে পশ্চিম আকাশে রক্তিম আভা ছড়িয়ে ডুব দেয় ২০২৫ সালের শেষ সূর্যাস্ত। 
ইংরেজি নববর্ষ  উপলক্ষে দেশে ও বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিসহ বিশ্ববাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
চন্দ্র-সূর্যের আসা-যাওয়ার নিয়মে ৩৬৫ দিন পর পর বছরের ক্রমিক বদলায়। ৩৬৫ দিনের এই বৃত্তের মাঝে থাকে মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, চাওয়া-পাওয়া, এমনকি না পাওয়ারও বেদনাও। তবুও মানুষ ক্রমাগত পুরাতনকে পেছনে ফেলে নতুনের দিকে যাত্রা করে। সেই যাত্রায় পঞ্জিকানুসারে ২০২৫ সালের শেষ সূর্যাস্ত ছিল গতকাল। 
বছরের বিদায়বেলায় এক শোকাতুর পরিবেশ গ্রাস করেছে পুরো দেশকে। গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত, আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মহাপ্রয়াণে কেঁদেছে কোটি প্রাণ। এ দেশের মানুষের হৃদয়ে শ্রদ্ধার যে আসনে তিনি অধিষ্ঠিত ছিলেন, তার প্রমাণ মিলেছে বিদায়বেলার সেই অশ্র“সিক্ত ভালোবাসায়। মানুষ তাদের প্রিয় নেত্রীকে বিদায় জানিয়েছে একরাশ গভীর মমতা আর পরম শ্রদ্ধায়।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যায় এ শোকের কালো মেঘ আরো ঘনীভূত হয়। এই হত্যাকাণ্ড স্তব্ধ করে দিয়েছে আরেকটি নীরব গল্পকে। যে গল্প বলে, মানুষ আর অপূর্ণ প্রতিশ্র“তির ছায়ায় মাথানত করতে রাজি নয়।
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় : ২০২৫ সালের ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের অনুপস্থিতিতে তাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। এই রায়কে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত শহীদদের আত্মদানের বিচার হিসেবে দেখা হয়। জুলাইয়ের পক্ষের শক্তি রায়কে স্বাগত জানিয়ে মিছিল করে।
তবে কোনো কিছুই থেমে থাকে না, পৃথিবী তার নিয়মে চলতে থাকে, তার গতিপথও চলতে থাকে সময়ের হাত ধরে। ঠিক তেমনি ২০২৫ বিদায় নিয়ে আজ শুরু হচ্ছে নতুন বছর ২০২৬। নতুন বছর মানেই নতুন আশা, নতুন সংকল্প আর একমুঠো সতেজ স্বপ্ন নিয়ে। অনেক জাতিই বেশকিছু সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি উদকরে থাকে। তবে এ বার দেশে ভিন্ন মাত্রায় আসছে নতুন বছর।
দেশ গড়ার এই বিশাল কর্মযজ্ঞ কেবল সরকারের কাঁধেই বর্তায় না। এটি দেশের মানুষ আজ নিজের ভাগ্যের চাবিকাঠি নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। বিশেষ করে তরুণ সমাজ, যারা ছিল এই গণজাগরণের হৃৎস্পন্দন, তারাই আজ আগামীর আধুনিক স্থাপত্যের মূল কারিগর হিসেবে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। 
২০২৬ সালের ভোরের প্রথম আলো যখন পূর্ব আকাশের দিগন্তে উঁকি দেবে তখন জানান দেবে-২০২৬ সালের আগমন ঘটে গেছে। এই উদয় কেবল ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টানো নয়; এটি একটি জাতির পুনর্জন্ম। এটি এক পবিত্র অঙ্গীকার যে, উত্তাল সময়ের শিক্ষাগুলোই হবে আগামীর পথপ্রদর্শক। এ জাতি এখন আর শুধু কোনোমতে টিকে থাকাতে সন্তুষ্ট নয় বরং আমরা এখন অদম্য সাহসে শ্রেষ্ঠত্বের শিখরে পৌঁছাতে বদ্ধপরিকর।
২০২৬ সালের ভোর কেবল সূচনা নয়। এটি এক পুনর্জন্মের ঘোষণা। অশান্ত এক বছরের শিক্ষা, ভবিষ্যৎ নির্মাতাদের পথ দেখাবে, এই অঙ্গীকারই এর মর্মকথা। এই জাতি আর কেবল টিকে থাকার কথা ভাববে না। দৃঢ়ভাবে, নির্ভীকভাবে এগিয়ে যাওয়া পথে এগিয়ে চলবে।
২০২৬ সালের ভোরের প্রথম আলো যখন দিগন্তে উঁকি দেবে, তখন তাকে মনে হবে দীর্ঘ বিরহের পর এক পরম মমতাময়ী সন্ধি। যে রাজপথগুলো একসময় মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত হতো, সেখানে এখন পড়বে আগামীর স্বপ্নদ্রষ্টা আর কারিগরদের শান্ত অথচ দৃঢ় পদক্ষেপ।
২০২৬ সালের এই উদয় কেবল ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টানো নয়; এটি একটি জাতির পুনর্জন্ম। এটি এক পবিত্র অঙ্গীকার যে, উত্তাল সময়ের শিক্ষাগুলোই হবে আগামীর পথপ্রদর্শক। এ জাতি এখন আর শুধু কোনোমতে টিকে থাকাতে সন্তুষ্ট নয়; বরং আমরা এখন অদম্য সাহসে শ্রেষ্ঠত্বের শিখরে পৌঁছাতে বদ্ধপরিকর।
নতুন এই বাংলাদেশের হয়তো কিছু অপূর্ণতা আছে। কারণ, কোনো রাষ্ট্রই নিখুঁত নয়। কিন্তু এই বাংলাদেশ এখন অকুতোভয় হয়ে স্বপ্ন দেখতে জানে, অন্যায়কে চ্যালেঞ্জ জানাতে জানে এবং অক্লান্ত পরিশ্রমে নতুন কিছু গড়তে জানে। ২০২৫ সালের প্রতিটি বিসর্জন আজ রূপ নিতে চলেছে ন্যায়বিচার, সাম্য আর সমৃদ্ধির ভিত্তিপ্রস্তরে।
জাতীয় নির্বাচন : ২০২৬ কেবল একটি নতুন বছর নয়; আসছে ফেব্র“য়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অংশগ্রহণমূলক আর উৎসবমুখর এই নির্বাচনের মাধ্যমে সূচিত হতে যাচ্ছে এক নতুন প্রারম্ভ। বাংলাদেশ আজ তার সোনালী ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াচ্ছে, যা এ দেশের মানুষের অদম্য প্রাণশক্তি।
নতুন বছরকে প্রথম স্বাগত জানালো যেসব দেশ : অস্ট্রেলিয়ায় ইংরেজি নববর্ষ ২০২৬ উদযাপনের সময় আতশবাজির আলোতে রঙিন হয়ে ওঠে সিডনি হারবার ব্রিজ ও সিডনি অপেরা হাউজ।
নতুন বছর ২০২৬ সালকে বিশ্বের বুকে প্রথম স্বাগত জানিয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় কয়েকটি দেশ। আন্তর্জাতিক সময়মান (ইউটিসি) অনুযায়ী সবার আগে রাত ১২টায় নতুন বছরে প্রবেশ করে কিরিবাতির লাইন আইল্যান্ডস। এই অঞ্চলের মানুষ আতশবাজি, ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়।
কিরিবাতির পরপরই নতুন বছরে প্রবেশ করে টঙ্গো ও সামোয়ায়। তারা ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পারিবারিক মিলনমেলা ও জনসমাবেশের মাধ্যমে বছরের সূচনা করে। এরপর নতুন বছর আসে নিউজিল্যান্ডে। বিশেষ করে, দেশটির বৃহত্তম শহর অকল্যান্ডে ঐতিহ্যবাহী স্কাই টাওয়ারকে কেন্দ্র করে বিশাল আতশবাজির আয়োজন করা হয়। হাজারো মানুষ শহরের রাস্তায় ও হারবার এলাকায় জড়ো হয়ে নতুন বছর উদযাপন করে।
নিউজিল্যান্ডের পর নতুন বছরে প্রবেশ করে অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চল, যার মধ্যে রয়েছে সিডনি ও মেলবোর্ন। সিডনি হারবার ব্রিজ ও অপেরা হাউজকে ঘিরে আয়োজিত বিশ্বখ্যাত আতশবাজির প্রদর্শনী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নজর কাড়ে। এগুলো ছাড়াও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আরও কয়েকটি দেশে নতুন বছর শুরু হয়ে গেছে। এর মধ্যে আছে ফিজি, মার্শাল আইল্যান্ড, টুভালু নাউরু ও রাশিয়ার কিছু অঞ্চল।
ধাপে ধাপে বিশ্বজুড়ে উদযাপন : প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে শুরু করে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা ও আমেরিকা-সময় অঞ্চলের পার্থক্যের কারণে ধাপে ধাপে গোটা বিশ্বে শুরু হয় ২০২৬ সালের উদযাপন। একেক দেশে একেক সংস্কৃতিতে পালিত হয় নতুন বছরের উৎসব।
বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও জলবায়ু সংকটের প্রেক্ষাপটে অনেক দেশ নতুন বছরকে ঘিরে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে। ২০২৬ সাল ঘিরে মানুষের এই আশাবাদই নতুন বছরের প্রথম প্রহরে সবচেয়ে বড় বার্তা হয়ে উঠেছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ