খুলনা | বৃহস্পতিবার | ০১ জানুয়ারী ২০২৬ | ১৭ পৌষ ১৪৩২

বছর জুড়ে রক্তাক্ত লাশের ভারে ন্যুব্জ খুলনা

এন আই রকি |
০১:৪৬ এ.এম | ০১ জানুয়ারী ২০২৬


সমাপ্ত হলো ২০২৫ সাল। খুলনা মহানগরী ও জেলার জন্য এই বছরটি ছিল রাজনৈতিক সমীকরণ বদল, প্রশাসনিক সংস্কারের লড়াই এবং কিছু লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী। একদিকে দীর্ঘ সময় পর রাজপথে ফিরেছেন প্রভাবশালী নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু, অন্যদিকে প্রথমবারের মতো হিন্দু প্রার্থী দিয়ে চমক দেখিয়েছে জামায়াত। তবে বছর জুড়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে আদালত চত্বরে জোড়া খুন ও ট্রিপল মার্ডারের মতো নৃশংস ঘটনা।
মঞ্জুর প্রত্যাবর্তন ও জামায়াতের ‘হিন্দু কার্ড’ : খুলনার রাজনৈতিক অঙ্গনে এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বিএনপিতে রাজকীয় প্রত্যাবর্তন। ৩ সেপ্টেম্বর তাকে ঢাকার গুলশান কার্যালয়ে ডেকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সংকেত দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২৭ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ ‘ফলো-আপ’ মিটিংয়ের মাধ্যমে খুলনা-২ আসনে তাঁর মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত হয়। দীর্ঘ তিন বছরের নীরবতা ভেঙে মঞ্জুর ফেরাতে চাঙা হয়ে ওঠে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
রাজনীতির আরেক বড় চমক ছিল জামায়াতে ইসলামীর কৌশলগত পরিবর্তন। ১ ডিসেম্বর দলটির আমির ডাঃ শফিকুর রহমান খুলনায় এসে খুলনা-১ আসনে কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত ঘোষণা করেন। একটি কট্টরপন্থী দলের পক্ষ থেকে হিন্দু প্রার্থী দেওয়ার এই ঘটনাটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বছরের অন্যতম আলোচনার কেন্দ্রে ছিল।
কুয়েট ভিসি পরিবর্তন ও কমিশনারের অপসারণ আন্দোলন : শিক্ষাঙ্গনে এ বছর সবচেয়ে বেশি অস্থিরতা ছিল খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট)। ফেব্র“য়ারি মাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর এপ্রিলের শেষে তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ ও প্রো-ভিসিকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য হয় সরকার। এটি ছিল শিক্ষার্থীদের এক দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল। পরবর্তীতে ১২ সেপ্টেম্বর সংঘর্ষে জড়িত ৫ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারের মাধ্যমে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা করে নতুন প্রশাসন।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতার দায়ে কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণের দাবিতে উত্তাল ছিল জুন-জুলাই মাস। ২৪ জুন অভিযুক্ত এক এসআইকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় ২৫ জুন ছাত্ররা কেএমপি দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে দেয়। টানা আন্দোলনের মুখে অবশেষে ৮ ডিসেম্বর কমিশনারকে সরিয়ে নতুন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়।
রক্তাক্ত রাজপথ:  ট্রিপল মার্ডার ও আদালত চত্বরে খুন : ২০২৫ সাল ছিল অপরাধের এক বিভীষিকাময় বছর। ১৭ মার্চ নিরালা এলাকায় কুখ্যাত চরমপন্থী নেতা শাহিনুল হক শাহিন খুন হওয়ার মাধ্যমে আন্ডারওয়ার্ল্ডের অস্থিরতা প্রকাশ পায়। জুলাই মাসে যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান মোল্লাকে নিজ বাড়ির সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১৬ নভেম্বর লবণচরা এলাকায় নানি ও দুই নাতিসহ ট্রিপল মার্ডার শহরবাসীকে স্তব্ধ করে দেয়।
এর রেশ কাঁতে না কাঁতেই ৩০ নভেম্বর দুপুরে খুলনা জেলা আদালত চত্বরে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী হাসিব ও রাজনকে। খোদ বিচারিক এলাকায় এমন জোড়া খুনের ঘটনায় আইনি নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন ওঠে। এছাড়া ২ নভেম্বর ফুলবাড়ী গেটে বিএনপি অফিসে হামলার সময় নিরাপরাধ মাদ্রাসা শিক্ষক ইমদাদুল হকের মৃত্যু এবং ১৮ ডিসেম্বর সাংবাদিক মিলন হত্যাকাণ্ড জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
উল্লেখ্য, ৯ জানুয়ারিতে কক্সবাজারে কেসিসির ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপু হত্যাকাণ্ড দিয়ে শুরু হওয়া এই অস্থিরতার বছরটি শেষ হয়েছে ডিসেম্বরে এনসিপি নেতা মোতালেব শিকদারের ওপর প্রাণঘাতী হামলার মধ্য দিয়ে। তবে ইতিবাচক পরিবর্তনের মধ্যে ছিল ১ নভেম্বর থেকে রূপসা তীরের নতুন ও আধুনিক কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের স্থানান্তর। ২০২৫ সালের সালতামামী অনুযায়ী, খুলনার রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ ও নেতৃত্বের উত্থান ঘটলেও অপরাধ দমন ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনকে আগামী ২০২৬ সালে আরও কঠোর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ