খুলনা | বৃহস্পতিবার | ০১ জানুয়ারী ২০২৬ | ১৭ পৌষ ১৪৩২

মিষ্টি বিতরণ, ক্ষুব্ধ শিক্ষকদের প্রতিবাদ সভা : থানায় অভিযোগ

রাষ্ট্রীয় ঘোষণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখালেন বঙ্গবাসী স্কুলের প্রধান শিক্ষক! শিক্ষকদের হাজির হতে নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০২:০৪ এ.এম | ০১ জানুয়ারী ২০২৬


রাষ্ট্রীয় শোক দিবসকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে স্কুলের সকল শিক্ষককে নোটিশ দিয়ে হাজির করেন বঙ্গবাসী স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন। তিনি বিগত দিনে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নেতা। পুরো স্কুলটি তিনি আ’লীগের উর্বর ভূমিতে পরিণত করে ছিলেন। ৫ আগস্টের পর কিছু দিন গা ঢাকা দিয়ে থাকলে পরে আবার কতিপয় সুবিধা ভোগী নেতাদের আশ্বাসে স্কুলে ফিরে এসে বিএনপি’র বুদ্ধিজীবী সাজার চেষ্টা করছেন। তবে পূর্বের বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সাবেক বন্ধুদের সাথে তার যোগাযোগ রয়েছে বলে শিক্ষকরা জানান। তিনি প্রায় দিন সন্ধ্যার পর খালিশপুর পার্কের মোড়ে ওই বন্ধুদের সাথে মিলেমিশে আড্ডাবাজি করেন আর বিএনপি’র কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা করেন বলে ওই আড্ডায় অংশ নেয়া একজন শিক্ষক জানান। 
বুধবার ছিল রাষ্ট্রীয় সাধারণ ছুটি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর পর বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন সরকার। সে মতে, দেশের সকল সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল বন্ধ। এ বন্ধের চাকুরিজীবী সুযোগে কেউ কেউ বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা নামাজে শরিক হতে ঢাকায় যান। তবে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের খুলনার সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের কারণে স্কুলের একাধিক শিক্ষক ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে পারেননি। কেননা এর আগে শিক্ষকদেরকে যথাসময়ে (বুধবার ছিল রাষ্টীয় শোক,সাধারণ ছুটির দিন) হাজির হতে নোটিশ দেন। 
দেলোয়ার মাস্টারের আওয়ামীকরণ এখানেই শেষ নয়। তিনি বিগত দিনে ১৫ আগস্ট শোকে শোকাহত হয়ে পড়তেন। পুরো স্কুল জুড়ে কালো ব্যাজে ছেয়ে যেত। কালো পতাকা স্কুলে পত-পত করে উড়তো। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তেমন কোন ব্যবস্থা ছিল না বলে ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা জানান। এমন কি অদ্ভূদভাবে প্রধান শিক্ষক বুধবার উপস্থিত সকল শিক্ষককে খাওয়ালেন মিষ্টি। ক্ষুব্ধ কোন কোন শিক্ষক শোকের দিন মিষ্টি খাওয়া থেকে বিরত থাকেন বলে ক্ষুব্ধ শিক্ষক মনির জানান।
তিনি বলেন, একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করায় সে মিস্টি এনেছে। কিন্তু স্কুলে কোন শিক্ষার্থী দেখা যায়নি। বিগত ১৫ আগস্টে স্কুলে কালো ব্যাজের মিছিল হতো। কিন্তু খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সবাই শোকাহত ও কালো ব্যাজ ধারণ করলেও এ স্কুল ছিল বিপরীত। এটা খুবই কষ্ট দায়ক। তিনি কৌশলে শিক্ষকদের আটকে রাখেন। যার জন্য অনেকে ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও জানাজায় অংশ নিতে পারেননি। তাহলে প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে খুশি হয়ে হয়তো বা সব শিক্ষকদেরকে মিষ্টি খাওয়ালেন। এমনটি ভাবা ছাড়া আর কোন উপায় নেই বলে তিনি জানান। 
তিনিসহ আরো শিক্ষকরা জানান, মঙ্গলবার রাতে নোটিশ করে জানানো হয়, বুধবার সাধারণ ছুটি থাকলেও সকাল ৯টার মধ্যেই আসতে হবে। কোন অজুহাত চলবে না। দেরি করে আসলে ৫০ টাকা জরিমানা করা হবে। যারা জানাজায় যেতে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তারা এক বুক কস্ট নিয়ে স্কুলে যথারীতি হাজির হন। এর পরই প্রধান শিক্ষক সকল শিক্ষকদের মাঝে মিস্টি বিতরণ করেন। সবাই শোকাহত থাকলেও তিনি ছিলেন আনন্দে। ন্যূনতম শোকাহত বা কস্ট তার চোখে মুখে দেখা যায়নি। দেখা গেছে উল্টো চিত্র। এর পরই শিক্ষকরা প্রতিবাদ সভা করেন। ওই সভায় তারা প্রধান শিক্ষকের কর্মকান্ডে প্রতিবাদ জানান। শিক্ষক মনিরের নেতৃত্বে এ সভা হয়।
শিক্ষক বাদশা বলেন, মঙ্গলবার রাতে জানতে পেরেছি স্কুলে বুধবার আসার জন্য নোটিশ করেছে। সে জন্য বুধবার আসা। তবে এ দিন একাধিক শিক্ষকরা জানাজা নামাজে অংশ নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তারা পারেননি। বিগত আওয়ামী সরকারের  আমলে তিনি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে স্কুলটিকে আওয়ামীকরণে পরিণত করেন। এখন ভোল পাল্টিয়ে বিএনপি সাজতে ব্যস্ত।
হুজুর শিক্ষক আঃ রহিম বলেন, নোটিশ করেছে এ জন্য বুধবারে ছুটির দিন তারা এসেছেন। প্রধান শিক্ষকরা এটা ঠিক করেননি।
শিক্ষক মাহমুদ জানান, প্রধান শিক্ষক অনেকটা জোর করেই নিয়ে এসেছেন। তিনি নোটিশ করে স্কুলে শিক্ষদের ডেকে এনেছেন, এটা ঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন।
তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ নোটিশ পুরাতন। সকল শিক্ষককে আসার জন্য বলা হয়নি। স্কুলের কয়েকজন শিক্ষককে ডাকা হয়েছে। কারণ অভিভাবকরা স্কুলে তাদের সন্তানদের রেজাল্টের ব্যাপারে খোঁজ নিতে আসবেন। এব্যাপারে কয়েকজন শিক্ষককে ডাকা হয়। জরিমানার বিষয়টি অনেক আগের বিষয় বলে তিনি জানান।
খালিশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তৌহিদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি শিক্ষক অধিদপ্তরের। তারপরও অভিযোগ পেয়ে অফিসারদের পাঠাই। তবে প্রধান শিক্ষক ফ্যাসিস্ট কি না সে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসএম সাইদুর রহমান জানান, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। তিনি খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিবেন বলে তিনি জানান।

্রিন্ট

আরও সংবদ