খুলনা | বৃহস্পতিবার | ০১ জানুয়ারী ২০২৬ | ১৭ পৌষ ১৪৩২

বটিয়াঘাটায় নারীর মাথাবিহীন লাশের রহস্য উদঘাটন, প্রেমিক গ্রেফতার

বটিয়াঘাটা প্রতিনিধি |
০২:১৯ এ.এম | ০১ জানুয়ারী ২০২৬


অপহরণ মামলার সূত্র ধরে বটিয়াঘাটায় উদ্ধার হওয়া মাথাবিহীন অজ্ঞাতনামা এক নারীর হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), খুলনা। দীর্ঘ তদন্ত ও ৪০ দিনের অভিযানের পর এ ঘটনায় মূল আসামি মোঃ লালন গাজীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই সঙ্গে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।
পিবিআই সূত্রে জানা যায় খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানাধীন সাজিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা শামিম ফকির (৩০) তার মা সালেহা বেগমের অপহরণের বিষয়ে একই গ্রামের মোঃ লালন গাজীকে আসামি করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন পিবিআই খুলনার এসআই (নিঃ) রেজোয়ান।
তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় জানা যায় ভিকটিম সালেহা বেগম দীর্ঘদিন পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী থানাধীন এলাকায় বসবাস করছিলেন। তবে গত ১৯ আগস্ট ২০২৫ সন্ধ্যার পর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে অনুসন্ধানে জানা যায় সালেহা বেগম ও আসামি লালন গাজী একত্রে ইন্দুরকানীর চাড়াখালী গ্রামে একটি ভাড়া বাসায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করছেন। তদন্তে আরও উঠে আসে ১৯ আগস্ট সন্ধ্যায় ভিকটিম ও আসামি খুলনার বটিয়াঘাটা থানাধীন গজালিয়া গ্রামে যাওয়ার কথা বলে একসঙ্গে বাসা থেকে বের হন। পরদিন ২০ আগস্ট বিকেলে বটিয়াঘাটা থানার সুরখালী ইউনিয়নের সুখদাড়া গ্রামে ঝপঝপিয়া নদী থেকে মাথাবিহীন এক নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় মৃতদেহের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং বটিয়াঘাটা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। 
পরবর্তীতে পিবিআই খুলনার ক্রাইমসিন টিমের সংগৃহীত স্থিরচিত্র ও আলামত অপহরণ মামলার বাদী ও তার পরিবারের সদস্যদের দেখানো হলে তারা পরিধেয় বস্ত্র ও শারীরিক গঠনের ভিত্তিতে মৃতদেহটি সালেহা বেগমের বলে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেন। এরপর হত্যা মামলাটি পিবিআইয়ের সিডিউলভুক্ত হলে পিবিআই খুলনা স্বউদ্যোগে তদন্তভার গ্রহণ করে।
এদিকে মৃতদেহ উদ্ধারের পর থেকেই অপহরণ মামলার আসামি লালন গাজী পলাতক থাকেন। পিবিআই প্রধান মোঃ মোস্তফা কামাল, এ্যাডিশনাল আইজিপি’র তত্ত¡াবধান এবং খুলনা জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন, পিপিএম-সেবা’র নেতৃত্বে পিবিআইয়ের একটি চৌকস দল সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় অভিযান পরিচালনা করে। অবশেষে গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে সুনামগঞ্জ সদর থানাধীন হালুয়ারঘাট বাজার সংলগ্ন খেয়াঘাট এলাকা থেকে আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামি স্বীকার করে ভিকটিমের ব্যাংক হিসাব থেকে প্রায় ১৪ লাখ টাকা উত্তোলন করে নেওয়া এবং বিয়ের চাপের কারণেই সে হত্যার পরিকল্পনা করে। ১৯ আগস্ট বিকেলে বটিয়াঘাটার পার বটিয়াঘাটা খেয়াঘাট এলাকায় সহযোগীদের সহায়তায় সালেহা বেগমকে হত্যা করে তার মাথা বিচ্ছিন্ন করে মৃতদেহ ঝপঝপিয়া নদীতে ফেলে দেয়। পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালে আসামির দেখানো মতে বটিয়াঘাটা থানাধীন গজালিয়া গ্রামে তার আত্মীয়ের বাড়ির বিভিন্ন স্থান থেকে ভিকটিমের ব্যবহৃত মালামাল ও পরিধেয় বস্ত্র উদ্ধার করা হয়। আসামিকে পুনরায় আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত অন্যান্য অজ্ঞাতনামা আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ