খুলনা | বুধবার | ০৯ জুলাই ২০২৫ | ২৫ আষাঢ় ১৪৩২

চক্রের বিষয় নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানই অবগত নন

খুলনায় চাকুরি দেয়ার নামে প্রতারণা, কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীদের কু-প্রস্তাবের অভিযোগ

সোহাগ দেওয়ান |
০১:১৫ এ.এম | ২৫ অক্টোবর ২০২১


খুলনা নগরীতে চাকুরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নারীদের সাথে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোন প্রকার বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই দালাল চক্রের মাধ্যমে এ সকল নারীদের ভালো চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। প্রতারণার শিকার এ সকল নারীদের অধিকাংশ খুলনার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কলেজের ছাত্রী। পার্ট টাইম চাকুরি করে পড়ালেখা ও নিজের খরচ বহনের তাদের আশার গুড়ে বালি দিচ্ছেন এক শ্রেণির প্রতারক চক্র। শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, মানসিকভাবেও এ সকল নারীদের হয়রানি করা হয় বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে কু-প্রস্তাবেরও কথা শোনা গেছে, তবে লোক লজ্জার ভয়ে অনেকে প্রসঙ্গ চেপে যান। 
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, স¤প্রতি সময়ে খুলনায় বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল, ক্লিনিকে চাকুরি দেয়ার নামে এ সকল প্রতারক চক্র কাজ করছে। ওই সকল প্রতিষ্ঠানে রিসেপশনিস্ট, সিকিউরিটি গার্ড, একাউন্টস কর্মকর্তাসহ নানা পদে জনবল নিয়োগের কথা বলে চাকুরি প্রার্থী নারীদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। গত আগস্ট মাসে নগরীর সাতরাস্তা মোড়স্থ গরীব নেওয়াজ ক্লিনিকে বিভিন্ন পদে চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে বেশ কয়েকজন নারীর সাথে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত জামানতও নেয়া হয়েছে। তবে কাক্সিক্ষত সেই চাকুরির দেখা মেলেনি এ সকল প্রতারিত নারীদের। বরং জামানতের নামে নেয়া টাকা ফেরতের জন্য অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে ওই প্রতিষ্ঠানের দিকে। তবে যে সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য জনবল নিয়োগের কথা বলে প্রতারণা করা হচ্ছে, ওই সকল প্রতিষ্ঠান এসব বিষয় জানেনই না।  
অভিযোগ অনুসন্ধানে জানা যায়, নগরীর গল­ামারী বুড়ো মৌলভীর দরগা এলাকায় “ইহান সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিঃ” নামের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এলাকাবাসী গত ১ বছর ধরে ওই প্রতিষ্ঠানটি ওই এলাকায় দেখছেন। ‘বেকারত্ব মোচনই আমাদের লক্ষ্য’ এমন শ্লোগানও রয়েছে  প্রতিষ্ঠানটির পরিচিতি বোর্ডে। গত ১৭ আগস্ট ওই প্রতিষ্ঠানের নিয়োজিত মোঃ ইলিয়াছ বেশ কয়েকজন নারীকে চাকুরি দেয়ার নাম করে “ইহান সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিঃ’র নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা কামালের কাছে নিয়ে যান। তাদেরকে বেসরকারি হাসপাতালের রিসেপশনিস্ট পদে চাকুরির কথা বলে ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত কথিত জামানত নেন। এরপর তাদেরকে নানা ভাবে ঘুরপাক খাইয়ে চাকুরি দিতে পারেননি। কথিত জামানতের টাকা ফেরত চাইতে গেলে নানাভাবে হয়রানি করা হয় তাদের। তাছাড়া নানা ধরনের কু-প্রস্তাবও দেন ইলিয়াছ নামের ওই ব্যক্তি। লোক লজ্জার ভয়ে এসব বিষয় চেপে গিয়ে ওই সকল অসহায় নারীরা তাদের টাকা ফেরত ও ভবিষ্যতে অন্যান্যরা যাতে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পায় সেই দাবি জানিয়েছেন। 
প্রতারণার শিকার খুলনার একটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী এ প্রতিবেদককে জানান, জামানত হিসেবে টাকা নিয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ইয়াছিন ও এমডি মোস্তফা কামাল। এক পর্যায়ে ইয়াছিন নানা ভাবে কু-প্রস্তাবও দিতে থাকে। এ সকল প্রতারণা বুঝতে পেরে টাকা ফেরত চাইতে গেলেও নানা ভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছি। 
এ বিষয়ে ইহান সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিঃ’ নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা কামাল মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের মারফত নগরীর গরীব নেওয়াজ ক্লিনিকে জনবল সাপ্লাইয়ের কথা ছিলো। ইয়াছিন আমার প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রে কোন স্টাফ না। তবে মৌখিকভাবে সে চাকুরি প্রার্থীদের নিয়ে আসে। চারজন কলেজ ছাত্রীর কাছ থেকে জামানত হিসেবে নেয়া টাকার মধ্যে তিনি সব টাকা নেননি বলেও জানান। তবে অভিযোগকারীদের টাকা ফেরত দিয়ে দেবেন বলেও তিনি জানান। 
প্রতারণার বিষয়ে অভিযুক্ত ইয়াছিনের মুঠোফোনে বক্তব্য নিতে দফায় দফায় ফোন করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।   
এদিকে গরীব নেওয়াজ ক্লিনিকের পরিচালক সাইফুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানান, ইহান সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিঃ নামের কোন প্রতিষ্ঠানকে আমাদের ক্লিনিকের জনবল নিয়োগের বিষয়ে বলা হয়নি। তারা কেন বা কিভাবে তা করছেন সেটা আমাদের জানা নেই।  

্রিন্ট

আরও সংবদ