খুলনা | সোমবার | ০৭ জুলাই ২০২৫ | ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

আগামী সপ্তাহে খুমেক হাসপাতালে চালু হচ্ছে নিউরো সার্জারি ও ইউরোলোজি ওয়ার্ড

বশির হোসেন |
১২:৫৩ এ.এম | ১০ নভেম্বর ২০২১


বেড থাক বা না থাক, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছাতে পারলেই সুচিকিৎসায় সুস্থ হতে পারবো। এই ভরসায় খুলনাসহ আশে পাশের দশ জেলার মানুষ চিকিৎসা নিতে ভীড় করছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আর এতেই ৫শ’ শয্যার হাসপাতালটিতে সার্বক্ষণিক ভর্তি থাকছেন প্রায় দেড় হাজার রোগী। আর হাসপাতালের চিকিৎসক স্বাস্থ্য কর্মীরাও সেবার মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানকে দেশ সেরা অবস্থানে নিয়ে গিয়েছেন বার বার। এবার সাফল্যের মুকুটে নতুন আরও একটি পালক যুক্ত হলো। বর্তমান পরিচালক ডাঃ রবিউল হাসানের প্রচেষ্টায় খুলনা অঞ্চলের সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের আশা আকাক্সক্ষার বিশেষায়িত নিউরো সার্জারি ও ইউরোলোজি দু’টি ওয়ার্ড চালু হচ্ছে আগামী রবিবার। এর আগে খুলনায় শহিদ আবু নাসের হাসপাতালে এ বিভাগ দু’টি চালু থাকলে জরুরি বিভাগ না থাকায় তা ছিলো সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ফলে লাখ টাকার এ সেবা এখন সাধারণ মানুষ পাবে বিনামূল্যে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, জনবল সংকট নিয়েও ৫শ’ শয্যার হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়ে সেবা নিচ্ছে প্রায় দেড় হাজার রোগী। বহির্বিভাগেও চিকিৎসা নিতে আসেন সহস্রাধিক রোগী। মেডিসিন, সার্জারি, গাইনী, অর্থপেডিক্স, বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি, কার্ডিওলেজি ও শিশু ওয়ার্ডের বাইরে বিশেষায়িত হেনরি বিভাগ চালু করা হয়েছিলো রোগীদের সার্থে। বক্ষ্যব্যাধি, গ্যাস্ট্রো, নিউরো মেডিসিন, এন্ড্রোকাইনোলোজি, লিভার বিভাগ, শিশু সার্জারি, বিভাগ থাকলেও এতোদিন নিউরো সার্জারি ও ইউরোলোজি আলাদা বিভাগ ছিলো না। এই বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদায়ন হওয়ায় বহির্বিভাগ সেবার পাশাপাশি সার্জারী ওয়ার্ডের ভিতরেই সীমিত পরিসরে এ সেবা দিয়ে আসছিলেন।
খুলনার একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল শহিদ আবু নাসের হাসপাতালে এসব বিশেষায়িত বিভাগ চালু থাকলেও সেখানে কোন রোগী চাইলেও সরাসরি ভর্তি হতে পারে না। বিশেষায়িত হাসপাতালের ধোয়া তুলে জরুরি বিভাগ বন্ধ করে রেখেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে কোন দুর্ঘটনায় কোন মানুষ মাথায় আঘাত পেলে খুলনায় তার জরুরি চিকিৎসার কোন বিশেষায়িত ব্যবস্থা ছিলো না। বেসরকারিভাবে অত্যন্ত ব্যয়বহুল বিভাগ দু’টিতে মানুষ আবু নাসের এ সীট না পেয়ে বেসরকারিতে যেতে হত বাধ্য হলেও। হতে হতো সর্বশান্ত। তবে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ এ বিভাগ দু’টিতে একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদায়ন হলে। স্বতন্ত্র নিউরোসার্জারি ও ইউরোলোজি বিভাগ খোলার সুযোগ সৃষ্টি হলেও এতোদিন করোনার প্রকোপে স্থানের অভাবে তা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে করোনার প্রকোপ কমে গেলে জেলা করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা কমিটির মতামত অনুযায়ী করোনা ওয়ার্ড সংকুচিত করে জায়গা বের করেছে হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ রবিউল হাসান। আর তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছে খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও করোনা ব্যবস্থাপনা কমিটির সার্বিক সমন্বয়কারী ডাঃ মেহেদী নেওয়াজ। আগামী রবিবার হাসপাতালের নীচ তলায় ১ও ২নং ওয়ার্ডে চালু হতে যাচ্ছে খুলনাবাসীর বহু প্রতিক্ষিত নিউরোসার্জারি ও ইউরোলোজি ওয়ার্ড। ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি থেকে সেবা পাওয়ার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যয়বহুল অপারেশন গুলো সম্ভব হবে বিনামূল্যে।
ইউরোলোজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ নিরুপম মন্ডল বলেন, খুমেক হাসপাতালে যোগদানের পরই যেহেতু আলাদা ওয়ার্ড নেই তাই বহির্বিভাগে ইউরোলোজি ক্লিনিক চালু করে প্রতিদিনই সেবা দিয়ে আসছি। আর এটা সম্ভব হয়েছে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে আসার পর। ক্লিনিক চালুর সাথে সাথে সার্জারি ওয়ার্ডের ভেতরে রোগী ভর্তি রেখে অপারেশন ও অন্যান্য সেবা দিয়ে আসছি। কিন্তু পরিপূর্ণ ওয়ার্ড চালু না থাকায় পরিপূর্ণ সেবা দেয়া অনেকাংশে সম্ভব হয় না। পরিচালক মহোদয়ের একান্ত চেষ্টায় অবশেষে একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড চালু হচ্ছে। এতে এ অঞ্চলের মানুষ আরও বেশি সেবা দেয়া সম্ভব হবে। 
নিউরোসার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ কমলেশ সাহা বলেন, এ হাসপাতালে যোগদানের পরই যেহেতু আলাদা ওয়ার্ড নেই তাই কনসালটেন্ট হয়েও রোগীদের স্বার্থে বহির্বিভাগে প্রতিদিনই সেবা দিয়ে আসছি। তবে পরিপূর্ণ সেবা দেয়া অনেকাংশে সম্ভব হয় না। পরিচালক মহোদয়ের একান্ত চেষ্টায় অবশেষে একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড চালু হচ্ছে। এতে এ অঞ্চলের মানুষ আরও বেশি সেবা দেয়া সম্ভব হবে। 
হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ রবিউল হাসান বলেন এমনিতে ৫শ’ বেডের হাসপাতালে তিনগুণ রোগী রয়েছে। এ অবস্থার মধ্যে আমার চিকিৎসকরা নিজেদের উদার করে সেবা দিয়ে দেশ সেরা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে। খুলনার মানুষ বিশ্বাস করে যে কোন ধরণের অসুস্থ হয়ে খুমেক হাসপাতালে পৌঁছাতে পারলেই সঠিক সেবা পাওয়া যাবে। সীট না পেলেও নিচে ফ্লোরে বা বাড়ান্দায় থাকলেও ফিরিয়ে দেবে না ঠিকই ভর্তি করে সঠিক সেবা টা পাবে। আরও আগে নিউরোসার্জারি ও ইউরোলোজি বিভাগ খোলার ইচ্ছা থাকলেও করোনা রোগীর চাপ থাকায় তা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে করোনা নিয়ন্ত্রনে থাকায় জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির মতামতের ভিত্তিতে ওয়ার্ড খোলা সম্ভব হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা অনেক সহযোগিতা করেছে। ভবিষ্যতে করোনার প্রকোপ যদি আবার বেড়ে যায় তাহলে এই ওয়ার্ডগুলো সংকুচিত করার প্রয়োজন হতে পারে। তবে সেবা কখনই বন্ধ হবে না।

্রিন্ট

আরও সংবদ