খুলনা | বুধবার | ১৬ জুলাই ২০২৫ | ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতেই হবে

|
১২:১৯ এ.এম | ২১ নভেম্বর ২০২১


দীর্ঘদিন ধরেই সড়কে চলছে নৈরাজ্য। সরকার নির্ধারিত বর্ধিত ভাড়ার চেয়েও বেশি ভাড়া আদায় করায় যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। বিভিন্ন স্থানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটারও খবর পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে বেপরোয়া যান, বিশেষ করে মোটরসাইকেল চলাচলের কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাগুলো ঘটে বেপরোয়া গতি, পাশ কাটানোর চেষ্টা, বারবার লেন পরিবর্তন, ট্রাফিক আইন না মানা এবং চলন্ত অবস্থায় মুঠোফোনে কথা বলার কারণে। হেলমেট ব্যবহার না করা ও নিম্নমানের হেলমেটের কারণেও দুর্ঘটনা বাড়ছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশেরই বয়স ২১-এর নিচে। নিরাপদ সড়ক চাই-এর হিসাবে, ২০২০ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩ হাজার ২৩২টি, যার ১ হাজার ১২৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এর মধ্যে ২৯ শতাংশ ট্রাক ও ২২ শতাংশ বাস দুর্ঘটনার। বুয়েটের এআরআইয়ের হিসাবে, ২০১৬ সালে ২৮৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩৩৬ জন মারা যান। ২০২০ সালে দুর্ঘটনার সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৮টিতে, মারা যান ১ হাজার ৯৭ জন। বিআরটিএ’র তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সাল পর্যন্ত সারা দেশে যেখানে নিবন্ধিত মোটরসাইকেল ছিল সাড়ে ৭ লাখ, সেখানে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে হয়েছে ৩৪ লাখ। এর বাইরেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় উলে­খযোগ্য সংখ্যক অনিবন্ধিত মোটরসাইকেল রয়েছে। বায়না মেটাতে অনেক অভিভাবক কিশোর সন্তানের হাতে এ মরণফাঁদ তুলে দেন। অনেক কিশোর আত্মীয় বা অন্যদের কিংবা ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালায়। ১৮ বছরের নিচে কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স পায় না বলে ট্রাফিক আইনও ঠিকমতো জানে না।
এ সংখ্যা কেবল উদ্বেগ বাড়ায় না, সড়ক পরিবহনে যে ভয়াবহ নৈরাজ্য চলছে, তারও চিত্র উঠে এসেছে। বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালনার পাশাপাশি মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার না করাও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। ভালো মানের একটি হেলমেট পরলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে। পৃথিবীর অনেক দেশে ১৮ বছরের নিচের বয়সী ছেলে-মেয়েকে মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি দেওয়া হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে ১৮ বছরের কম বয়সী ছেলেরাও মোটরসাইকেল চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগ যেমন জরুরি, তেমনি অভিভাবকদেরও সজাগ থাকতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার যাত্রী কল্যাণ সমিতি সংবাদ সম্মেলনে তালিকা প্রদর্শন ছাড়া বাসে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়, সিটিং সার্ভিসের নৈরাজ্য ও ভাড়া ডাকাতি বন্ধের যে দাবি জানিয়েছে, সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষা করতে চাইলে কর্তৃপক্ষকে তা আমলে নিতে হবে। সমিতির অভিযোগ, ঢাকার পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বারবার ঘোষণা দিয়েও কথিত সিটিং সার্ভিস বন্ধ ও চালুর ইঁদুর-বিড়াল খেলা খেলছেন, যা হতে দেওয়া যায় না। যে হারে তেলের দাম বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি হারে বর্ধিত বাসভাড়া নেওয়ার যুক্তি নেই। সড়কে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে গণপরিবহনে অযৌক্তিক বর্ধিত ভাড়া আদায় বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে মোটরসাইকেলসহ কোনো যানবাহনকে আইন মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সড়কে নৈরাজ্য কেবল যাত্রীদের সমস্যায় ফেলছে না, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদেরও ঝুঁকিতে ফেলবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ