খুলনা | বুধবার | ০৯ জুলাই ২০২৫ | ২৫ আষাঢ় ১৪৩২

প্রতিমাসে আয় অন্তত দেড় লাখ টাকা

কেডিএ’র ময়ূরী আবাসিক এলাকায় বেআইনী বিনোদন ব্যবসা!

এস এম আমিনুল ইসলাম |
০১:০১ এ.এম | ২১ নভেম্বর ২০২১


খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)’র ময়ূরী আবাসিক এলাকায় কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়াই চলছে রমরমা বিনোদন ব্যবসা। নির্ধারিত টিকিটের বিনিময়ে প্রতিদিন এ আবাসিকে ভীড় করছেন শত শত দর্শণার্থী। যার মাধ্যমে প্রতিমাসে আয় হচ্ছে অন্তত দেড় লাখ টাকা। সংস্থাটির কর্মকর্তা/কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ ‘ময়ূরী আবাসিক এলাকা ‘বিনোদন পার্ক’ নামে এটি পরিচালনা করছে। তবে নাগরিক নেতারা বলছেন, আবাসিক এলাকাকে পুঁজি করে এভাবে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্পূর্ণ বেআইনী।
কেডিএ’র দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে মহানগরীর পশ্চিম প্রান্তে সিটি বাইপাস সংলগ্ন আহসানাবাদ মৌজায় ৯০ একর জমির উপর ‘ময়ূরী’ নামে আবাসিক এলাকা নির্মাণ উদ্যোগ নেয় খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। স¤প্রতি আবাসিক এলাকাটির অবকাঠামো নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। সেখানে স্থান পেয়েছে ৬৫৩টি পট। এরমধ্যে তিন কাঠার ৩৮৪টি ও পাঁচ কাঠার ২৬৯টি। প্রসপেক্টাস অনুযায়ী ইতোমধ্যে লটারীর মাধ্যমে এসব পট বরাদ্দও দেয়া হয়েছে। পট বরাদ্দ গ্রহীতা ৩ কাঠা প্লটের প্রতি কাঠা জমির মূল্য ৯ লাখ টাকা এবং ৫ কাঠা প্লটের মূল্য প্রতি কাঠা ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে অর্থাৎ ৩ কাঠা ২৭ লাখ ও ৫ কাঠার মূল্য ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করে পট গ্রহণ করেছেন। কিন্তু এখনও কোন ভবন নির্মাণ হয়নি।
সরেজমিন দেখা গেছে, আবাসিকে নির্মিত হয়েছে চওড়া চওড়া অভ্যন্তরীণ সড়ক। সড়কের পাশে কোথাও কোথাও রয়েছে টাইলস বসানো সিটিং এ্যারেঞ্জমেন্ট। লম্বা দু’টি লেক ডিঙ্গিয়ে এপার-ওপার যেতে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন সেতু। এছাড়া শিশুদের বিনোদনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে বড় বড় ছাতা ও রাইডার সম্বলিত আলাদা পার্ক। সন্ধ্যায় রঙ-বেরঙের বৈদ্যুতিক আলোয় এলাকাটি মনোমুগন্ধকর পরিবেশ তৈরি করছে। যা উপভোগ করতে প্রতিদিন ভীড় করছে অন্তত ৩৫০ থেকে ৪০০ দর্শনার্থী।
জানা গেছে, প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ দর্শনার্থীর ভীড় দেখে লোভ সামলাতে পারেনি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তারা সুযোগটি লুফে নিতে গত ৫ নভেম্বর থেকে সেখানে চালু করেছে কেডিএ ময়ূরী আবাসিক এলাকা বিনোদন পার্ক। এ পার্কে প্রবেশ মূল্য ৫ টাকা, শিশু পার্কে ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া পার্কিং গ্যারেজে সাইকেল রাখতে ১০ টাকা, মোটরসাইকেল ১৫ টাকা ও প্রাইভেটকার ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে প্রতিদিন এ পার্কে গড়ে আয় হচ্ছে সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। যা মাসে গিয়ে দাঁড়াবে অন্তত দেড় লাখ টাকা। এ টাকা আদায় হচ্ছে কেডিএ কর্মকর্তা/কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের নামে। 
দর্শণার্থী রুপা আক্তার-মুরাদ দম্পতি জানান, তারা এখানে শিশু বাচ্চাকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। ৫ টাকা করে দিয়ে প্রবেশ টিকিট সংগ্রহ করেছেন। ১০ টাকা করে দিয়ে শিশু পার্কের টিকিট সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া গ্যারেজে মোটরসাইকেল রাখতে পরিশোধ করেছেন ১৫ টাকা।
নাগরিক নেতা ও সুজন-এর জেলা সম্পাদক কুদরত-ই-খুদা বলেন, মূয়রী আবাসিক এলাকার মালিক গ্রহীতারা এবং এটা একটি সংরক্ষিত এলাকা। এটাকে পুঁজি করে বিনোদন পার্ক বানানো বা লিজ দেয়া সম্পূর্ণ বেআইনী।
এ ব্যাপারে কেডিএ’র পরিচালক (স্টেট) মোঃ বদিউজ্জামান বলেন, সম্পত্তি শাখার দায়িত্ব সম্পত্তি দেখা শোনা করা। এটি তার বিষয় না। আর ময়ূরী আবাসিক এলাকা তাকে এখনও বুঝিয়ে দেয়া হয়নি।
কেডিএ’র উপ-পরিচালক (বাজেট-নিরীক্ষা) (চঃদঃ) ও কর্মকর্ত/কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মোঃ মামুনুল আবেদীন বলেন, প্রকল্প শেষ হতে ৫/৬ মাস বাকী রয়েছে। কিন্তু আবাসিক এলাকাটি উন্মুক্ত ছিল, যার কারণে লোকজন ঢুকে পরিবেশ ও রাইড নষ্ট করছিল। তাই নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সুর্যোদয়-সুর্যাস্ত পর্যন্ত এ ধরনের বিনোদন পার্ক চালু করা হয়েছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ