খুলনা | শনিবার | ১২ জুলাই ২০২৫ | ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

আমদানি পণ্যেও মূল্য বৃদ্ধি দেশের জন্য অশনিসংকেত

|
১২:৩২ এ.এম | ২২ নভেম্বর ২০২১


চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হওয়া শীর্ষ ১০০টি আমদানি পণ্যের মধ্যে ৯০টির দাম গত অর্থ বছরের প্রথম চার মাসের তুলনায় বেড়ে যাওয়ার খবরটি খুবই উদ্বেগজনক। এসব পণ্যের মধ্যে যেমন ভোগ্যপণ্য আছে, তেমনি আছে শিল্পের কাঁচামালও। দু’টোই খুব গুরুত্বপূর্ণ। মানুষকে খাইয়ে বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য আমদানি করতে হবে। আবার শিল্পকারখানা টিকিয়ে রাখতে হলে কাঁচামাল আমদানিরও বিকল্প নেই।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থ বছরে প্রথম চার মাসের তুলনায় চলতি অর্থ বছরের প্রথম চার মাসে আমদানির পরিমাণে খুব হেরফের নেই। চলতি বছর মাত্র ১ টন পণ্য বেশি আমদানি হয়েছে। কিন্তু দাম বেড়েছে ৪২ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক পণ্যের দাম বাড়লেও এখনো দেশীয় বাজারে তার অভিঘাত এসে পড়েনি। আগের আমদানি করা পণ্য বিক্রি হচ্ছে। নতুন চালান এলে এসব পণ্যের দামও বেড়ে যাবে। তদুপরি জাহাজের ভাড়া বৃদ্ধি আমদানি পণ্যের ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার কারণে বিশ্ববাজারে শিল্পের কাঁচামালের চাহিদা কম ছিল। ফলে দামও কম ছিল। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করছে এবং বিশ্ববাজারে এসব পণ্যের চাহিদাও বেড়েছে। উন্নত দেশগুলোর সুবিধা হলো, তারা যে পরিমাণ পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করে, রপ্তানি করে তার চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু বাংলাদেশকে শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য দু’টোই বেশি আমদানি করতে হয়। ব্যবসায়ী ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এক বছর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে যে সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৮০০ ডলার, এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪৮০ ডলার।
আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশি মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটেছে। বর্তমানে খোলাবাজারে ১ মার্কিন ডলার বিনিময়ে ৯০ দশমিক ১০ টাকা পান গ্রাহক; যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারণ করে দেওয়া হার হচ্ছে ৮৫ দশমিক ৭০ টাকা। ডলারের পাশাপাশি অন্য প্রায় সব বৈদেশিক মুদ্রা যেমন পাউন্ড, ইউরো, সৌদি রিয়াল, কৃয়েতের দিনার এবং ভারতীয় মুদ্রারও দাম বেড়েছে ব্যাংক ও খোলাবাজারে। যদি টাকার বিপরীতে ডলারের দাম আরও বেড়ে যায়, তার বিরূপ প্রভাব পড়বে আমদানি পণ্যেও। অন্যদিকে রপ্তানিকারকেরা লাভবান হবেন।
আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই সত্য, কিন্তু তারা এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে, যাতে দাম বৃদ্ধির মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকে। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি বাড়াতে হবে। এ ছাড়া আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েও দাম স্থিতিশীল রাখা যেতে পারে। পেঁয়াজ ও চালের আমদানি শুল্ক ইতিমধ্যে সরকার কমিয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত আন্তর্জাতিক বাজারে কোন পণ্যের দাম কত বেড়েছে, আর বাংলাদেশে আমদানিকারকেরা কত বাড়াচ্ছেন, তা–ও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
এ দুশ্চিন্তার মধ্যেও আশার খবর হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে যে জ্বালানির দাম বাড়ছিল, সেটি আবার কমতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জ্বালানির দাম বাড়ার কারণ নেই। সে ক্ষেত্রে সরকার জ্বালানির দাম কমিয়ে আগের অবস্থায় নিয়ে আসতে পারে। তাতে অন্তত পণ্যের পরিবহন ব্যয় ও যাত্রী ভাড়া কমানো সম্ভব হবে।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ