খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

খুলনা বিএনপির সদ্য ঘোষিত কমিটি নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য মঞ্জু’র আবেগঘন স্ট্যাটাস

নিজস্ব প্রতিবেদক |
১১:৪৯ এ.এম | ১০ ডিসেম্বর ২০২১

খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির সদ্য ঘোষিত আহবায়ক কমিটি নিয়ে আজ শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন দলটির সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু। সাথে গত ২২ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে আন্দোলনরত অবস্থায় লাঠি পেটার ঘটনায় ডেইলি স্টারে প্রকাশিত ছবিটি যোগ করেন তিনি। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগর বিএনপির সদ্য সাবেক সভাপতি। একাধিকবার খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য পদে ও সর্বশেষ কেসিসি নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক সভাপতি এ্যাড. শফিকুল আলম মনাকে নগর বিএনপির আহবায়ক, তরিকুল ইসলাম জহিরকে ১নং যুগ্ম-আহবায়ক ও শফিকুল আলম তুহিনকে সদস্য সচিব এবং আমীর এজাজ খানকে আহবায়ক, শেখ আবু হোসেন বাবুকে ১নং যুগ্ম-আহবায়ক ও এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পীকে সদস্য সচিব করে আংশিক আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্র।

পাঠকের সামনে সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

“আমরা স্থম্ভিত, 
ব্যাথিত ও ক্ষুব্ধ

রক্তের দাগ শুকানোর আগেই আমরা অযোগ্য ঘোষিত হলাম। কিন্তু কেন? গতকাল ঘোষিত কমিটিতে যাদের আনা হয়েছে তারা কি আমাদের চেয়ে যোগ্য? আন্দোলন সংগ্রাম, মানবতার সেবায় ও হাজারো কর্মসূচি পালনে আমাদের অযোগ্যতা কোথায়? সারাদেশে বিএনপির রাজনীতি চর্চায় অন্যতম মডেল খুলনা মহানগর বিএনপি কেন আক্রমনের শিকার? সারাদেশ খুলনার দিকে তাকিয়ে থাকে যে খুলনায় বিএনপি কর্মীরা যে কোন সরকার বিরোধী কর্মসূচীতে শক্ত প্রতিবাদ জানাবে, তাই তো খুলনা বিএনপি সকলের সেরা।

সেই বিএনপিকে নিয়ে দলের এ অবহেলা কেন? যারা দল প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছরে ৪৪ দিন খুলনায় আসেনি, থাকেনি দল ও দলের নেতাকর্মীদের পাশে, তিনটি গনতান্ত্রিক আন্দোলনে যাদের কোন ভূমিকা ছিল না, পড়েনি কখনো মিথ্যা মামলায়, থাকেনি আহত কর্মীর পাশে, পড়েনি জানাজা-ছিল না দাফনে ও আহত কর্মীর চিকিৎসা সেবায়। যারা এই শহরের পাঁচটা রাস্তার নাম জানে না, বলতে পারবেনা পাঁচজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম, পাঁচজন খ্যাতনামা ডাক্তারের নাম, পাঁচজন গুনীজনের নাম, পাঁচজন শিক্ষাবীদের নাম। যারা মাঠের কর্মীদের চেনে না যারা নির্বাচন করতে এসে বিএনপি অফিস চিনেছে, চিনেছে আদালতপাড়া ও হাসপাতাল। দুই দফা করোনাকালে যাদের জনগন পাশে পায়নি তারা চায় খুলনা বিএনপির কর্তৃত্ব, ধিক তাদের প্রতি।

দুঃশাসনের ১২ বছরে দেশনেত্রী কে নিয়ে তিনটি মহাসমাবেশ লংমার্চ, রোডমার্চ, গণঅবস্থান, গণঅনশন, রাজপথ-রেলপথ ঘেরাও হরতাল অবরোধে কি কখনো তারা দলের পাশে কর্মীর পাশো ছিল? তাহলে কেন তাদের প্রেক্রিপশনে দল গঠিত হবে? কেন রাজপথের ত্যাগী নেতাকর্মীরা অবমূল্যায়িত হবে এ প্রশ্ন সবার।
গত চার বছর তাদের হাতে গড়া যুবদল, সেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্রদল পরিপুর্ণতা পায়নি, গড়ে ওঠেনি মাঠের সংগঠনে হয়েছে বিভক্তি, বেড়েছে অসন্তোষ গড়েছে ব্যক্তির সমর্থক গোষ্ঠি।

দল গঠনে নেতৃত্বে প্রাধান্য পেয়েছে শহরের বড় ছিনতাইকারী, কর্মীর খুনীর সহযোগী, মাদক কারবারী, মোটরসাইকেল চোর, ক্লাবপাড়ার মাতাল জুয়াড়ী। পদবঞ্চিত হয়েছে আন্দোলন সংগ্রামে সাহসী ভূমিকা পালনকারীরা, সাবেক ছাত্রনেতা মরহুম এসএম কামালের মতো রাজপথের সাহসী নেতৃত্বতে পদহীন হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হয়েছে, তার মৃত্যুর পর কতিপয় ব্যক্তির মায়া কান্না ও অভিনয় দেখেছে দলের নেতাকর্মীরা ও জনগন।

গত চার বছর ঢাকায় বসেছে দুই নেতার নানা ষড়যন্ত্রের বৈঠক, ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অনেক নেতাকর্মীকে বলা হয়েছে মঞ্জু-মনির সাথে থাকলে পদ পাওয় যাবে না, বিকল্প বিএনপি তৈরি করে প্যারালাল কর্মসূচী পালনের ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে, খুলনা মহানগর বিএনপির কর্মসুচিতে আসতে নিষেধ করা হয়েছে, জন্য চালু করা হয়েছে টোপের রাজনীতি।

৪৪ বছরে গড়ে ওঠা আমাদের ঐতিহ্যের সংগঠন আন্দোলন সংগ্রামের প্রানশক্তি কর্মী গড়ার সংগঠন আমাদের গর্বের অহংকারের জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে দুর্বৃত্ব নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হেয়েছে কলুষিত করা হয়েছে ছাত্র রাজনীতিকে। ৪৪ বছরে তৈরী করা আমাদের কর্মীদের বিপথগামী করা ও আমাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিছু পদলোভী বিবেকবর্জিত দুর্বল চিত্তের কর্মী ছাড়া সকলেই আমাদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করে রাজনীতি করেছে ।
এসকল বিষয় দলের সর্বোচ্চ নেতা ও ফোরামে উপস্থাপন করা হয়েছে। তারপরও একে একে চলেছে দল বিধ্বংসী কর্মকান্ড। সরকার চায় বিএনপি দুর্বল হোক এবং আমাদের মাঝে কিছু ব্যক্তির চাওয়া একই। তাহলে কি আমরা আমাদের ধ্বংস চেয়ে চেয়ে দেখবো নিশ্চয়ই না। রাজনৈতিক কর্মীরা অন্যায় অসত্যের বিরুদ্ধে কথা বলবে করবে সত্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এবং এর কোন সীমা রেখা নেই।
দলের এ সংকটে প্রয়োজন ধৈর্য্য ঐক্যবদ্ধতা ও আগামীর রাজনীতি নিয়ে সুচিন্তিত সুস্থ্য ভাবনা এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এক্ষেত্রে  আমি সকলের সাথে পরামর্শ করবো, মতবিনিময় করবো এবং একটি প্রতিবাদী কর্মসূচি দাঁড় করাবো ইনশাল্লাহ এবং সেটি হবে দলের স্বার্থে ও নিয়মতান্ত্রিক। আমাদের সকলের দায়িত্ব ধৈর্য্য ধারন করা, সকল  নেতাকর্মীর সাথে কথা বলা, বিভ্রান্ত না হওয়া জনমত গড়ে তোলা ও মহান রব্বুল আলামিনের কৃপা কামনা করা।

দু/একদিনের মধ্যে আমি সংবাদ সম্মেলের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে খুলনা বিএনপিতে ঘটে যাওয়া সকল বিষয় উপস্থাপন করবো ইনশাল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন, আমিন।”

্রিন্ট

আরও সংবদ