খুলনা | শনিবার | ১২ জুলাই ২০২৫ | ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

মরণ নেশা ইয়াবার বিস্তার ও পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

|
১২:৪৫ এ.এম | ১১ জানুয়ারী ২০২২


দেশে প্রতিনিয়ত ইয়াবার চালান আসছে এবং বাস্তবতা হলো, বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া সত্তে¡ও তা প্রতিহত করা যাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িতদের একটি তালিকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে থাকলেও অধিকাংশই সরকার দলীয় লোক হওয়ায় পুলিশ বা প্রশাসন তাদের গ্রেফতারে আন্তরিক নয়। অবাধে মরণনেশা ইয়াবা আসার সংবাদ গভীর উদ্বেগজনক। জানা গেছে, সড়ক ও নৌপথে অন্তত ২৯টি পয়েন্ট দিয়ে ভয়ানক এ মাদক সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। মূলতঃ গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল এলাকায় মিয়ানমারের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং দেশটির নিয়ন্ত্রণাধীন একটি গ্র“পের অধীনে থাকা কারখানাগুলোয় ইয়াবা তৈরির পর রোহিঙ্গাদের কয়েকটি গ্র“প ও দেশের মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যদের মাধ্যমে তা মাদকসেবীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় জীবন ধ্বংসকারী এ মাদকের দামও এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এর ফলে ইয়াবাসেবীর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। এ অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব ইয়াবা পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। তা না হলে দেশের সম্ভাবনাময় তরুণ জনগোষ্ঠীর ধ্বংস অনিবার্য হয়ে উঠবে, যা মোটেই কাম্য নয়।
কোনো জিনিস সহজলভ্য হলে তার বিস্তার ঘটে দ্রুত। ইয়াবার ক্ষেত্রেও এমন হয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। ইয়াবার সহজলভ্যতা রোধে আইন রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। অথচ অভিযোগ রয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজেরাই ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক কেনা-বেচা ও পাচারে সহায়তা করে থাকে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াও মাদক পাচারের সঙ্গে প্রভাবশালীদের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী বা ক্ষমতাবানদের বিন্দুমাত্র ছাড় না দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থানের কথা সর্বজনবিদিত। তবে তা কতটা কার্যকর হচ্ছে, এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদক পাচার ও এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থাকলেও তাদের কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো নয়। অবশ্য শুধু আইন করে মাদকের ব্যবহার ও বিস্তার রোধ করা সম্ভব নয়। শিশু-কিশোরদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা, আদর্শ জীবনবোধ ও ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করা জরুরি। মানুষের সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো তার পরিবার। মাদকমুক্ত জাতি গঠনে পরিবারকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। শিশু-কিশোররা মাদক সেবনের দিকে যাচ্ছে কিনা -এ ব্যাপারে পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিশ্র“তি ও তার সঠিক বাস্তবায়ন অপরিহার্য। একই সঙ্গে আইনের প্রয়োগে আরও কঠোর হওয়া উচিত, যাতে অপরাধীরা আইনের ফাঁক গলিয়ে জামিন কিংবা মুক্ত হয়ে পুনরায় মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত হতে না পারে। দেশে বর্তমানে নেশার উপকরণ হিসাবে ইয়াবাসহ কমপক্ষে ৩২ ধরনের মাদকদ্রব্য ব্যবহৃত হচ্ছে। মাদক অপরাধের মামলার সংখ্যা অজগ্র হলেও উপযুক্ত সাক্ষী, তদন্ত কাজে কর্মকর্তার গাফিলতিসহ নানা কারণে এসব মামলা বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি।
ইয়াবার সর্বনাশা ছোবল থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে সমাজে অবক্ষয় আরও বাড়বে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদকের বিস্তার রোধে রাষ্ট্র, পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ দেশের সব স্তরের মানুষের সচেতনতা ও সমন্বিত উদ্যোগ নিশ্চিত করা গেলে এক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করি আমরা।

্রিন্ট

আরও সংবদ