খুলনা | শুক্রবার | ০৪ জুলাই ২০২৫ | ২০ আষাঢ় ১৪৩২

খায়েশাত হতে বেঁচে থাকার উপায়

ড. মুহাম্মদ বেলায়েত হুসাইন |
০২:১৮ এ.এম | ১৪ জানুয়ারী ২০২২


খায়েশাতের পরিণতি খুবই মারাত্মক। মানুষ যখন খায়েশাতের দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন তার ঈমান, দ্বীন-ধর্ম, আখিরাত সব বরবাদ হয়ে যায়। এজন্য আমাদের খায়েশাত হতে বেঁচে থাকা উচিৎ।
১. খায়েশাত হতে বেঁচে থাকতে, মহান আল­াহ তা’য়ালা সর্ববস্থায় আমাকে দেখেন অন্তরে এই অনুভূতি তৈরি করা। আমি ঘরে থাকি-বাইরে থাকি, আলোতে থাকি-অন্ধকারে থাকি, পানির নীচে থাকি আর পানির উপরে থাকি সর্ববস্থায় আমার আল­াহ আমাকে দেখেন। তাঁর কুদরতি নজরকে ফাঁকি দিয়ে কিছুই করা সম্ভব না। এই অনুভূতি যদি আমি আমার ভিতর তৈরি করতে পারি তাহলে এই গোনাহ থেকে বাঁচা সম্ভব।
২. খায়েশাতের উপসর্গ সমূহ হতে দূরে থাকা। অর্থাৎ যেখানে গেলে বা যা দেখলে কিংবা যা পড়লে অথবা যা চিন্তা করলে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হয় বা যেনার মনোভাব জাগ্রত হয় তা থেকে বহু দূরে অবস্থান করা।
৩. নির্জনে একাকী কোন গাইরে মাহরাম মহিলার সাথে না বসা। গাইরে মাহরাম নারী পুরুষের কোন নির্জন স্থানে একাকী, কিছুক্ষণের জন্যেও লোকচক্ষুর আড়ালে অন্তরালে, ঘরের ভিতরে, পর্দার আড়ালে একান্তে অবস্থান শরী’আতে হারাম। যেহেতু তা ব্যভিচার না হলেও ব্যভিচারের নিকটবর্তী করে, ব্যভিচারের ভূমিকা অবতরণিকায় সহায়ক হয়। কারণ বারুদের নিকট আগুন রাখা হলে বিস্ফোরণ তো হতেই পারে। আল­াহর নবী সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম বলেছেন, ‘কোন পুরুষ যেন কোন নারীর সাথে একান্তে গোপনে অবস্থান না করে। কারণ, শয়তান উভয়ের কুটনী হয়’। (তিরমিযি)
৪. কোন নারী বা পুরুষের সংস্পর্শে গেলে যদি যেনার কামনা জাগে এবং আল­াহ না করুন যেনা সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে তার কাছ থেকে দূরে থাকা।

৫. অন্তরের খারাপ ভাবনাগুলিকে প্রতিহত করার যথাসাধ্য চেষ্টা করা।
৬. কোন অপরিচিত নারীর দিকে দৃষ্টি পড়ার কারণে বা নিষিদ্ধ বা উলঙ্গ ছবি ইত্যাদি দেখার কারণে অন্তরে কোন অপকর্ম বা খারাপ কাজের উদ্রেক হলে, তখন দ্রুত নিজ স্ত্রীর নিকট গিয়ে স্বীয় হাজত পূর্ণ করা।
৭. বিবাহ না করে থাকলে বিবাহ করা, না পারলে রোযা রাখা।
৮. প্রকৃতিগত ভাবেই নারীর দৈহিক সৌন্দর্য তুলনামূলক ভাবে বেশি আকর্ষণীয় হওয়ায় এবং পুরুষরা তুলনামূলক ভাবে যৌনতার বিষয়ে বেশি তৎপর হওয়ায় ইসলাম নারীর সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষার জন্য প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলে নারীদের শরীর ঢেকে রাখার বিধান দিয়েছে। এজন্য মহিলাদের পর্দা রক্ষা করে চলা এবং দেহাবয়বের সৌন্দর্য প্রকাশ না করা। পর্দা ছাড়া বিনা প্রয়োজনে পুরুষদের সাথে হাটে-বাজারে, রাস্তা-ঘাটে বের না হওয়া। আর পুরুষদের কর্তব্য হল, তারা নারীদের প্রতি তাকাবে না এবং তাদের দেখলে চক্ষুকে অবনত করে রাখবে।
৯. নিজ মা, মেয়ে, বোন, ফুফু, খালাদেরকে যেমন সম্মানের চোখে দেখি তেমনি অপরের মা, মেয়ে, বোন, ফুফু, খালাদেরকেও সম্মানের চোখে দেখা।
১০. অসৎ সঙ্গ পরিত্যাগ করা। সাধারণত মানুষ যে সব অন্যায়, পাপাচার, অপরাধ ও অপকর্ম করে থাকে, তার অধিকাংশের কারণ হল, তার অসৎ সঙ্গী। যাদের সঙ্গী খারাপ হয়, তারা ইচ্ছা করলেও ভালো থাকতে পারে না। সঙ্গীরা তাদের খারাপ ও অন্যায় কাজের দিকে নিয়ে যায়। আবু হুরাইরা রাদিয়াল­াহু আনহু হতে বর্ণিত, রসূল সল­াল­াহু আলাইহি ওয়াসাল­াম বলেন, ‘মানুষ তার বন্ধু’র স্বভাবের উপরই প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে, সুতরাং তোমরা দেখে শুনে বন্ধু নির্বাচন করবে’।(আবু দাউদ)
১১.আল­াহর কঠোর শাস্তির কথা স্মরণ করা। রসূলাল­াহ্ সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম বলেছেন, ‘যিনাকারীরা উলঙ্গ অবস্থায় এমন এক চুলার মধ্যে থাকবে যার অগ্রভাগ হবে অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ আর নিম্নভাগ হবে প্রশস্ত উহার তলদেশে অগ্নি প্রজ্বলিত থাকবে তাদেরকে তাতে দগ্ধ করা হবে। তারা মাঝে মধ্যে সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার কাছাকাছি অবস্থায় পৌঁছে যাবে; অতঃপর আগুন যখন স্তমিত হয়ে যাবে তখন তাতে তারা আবার ফিরে যাবে। আর তাদের সাথে এই আচারণ কেয়ামত পর্যন্ত করা হবে।’(বুখারী)
১২. দো‘আ করা। রসূল সল­াল­াহু আলাইহি ওয়াসাল­াম খায়েশাতের ফিতনা হতে বাঁচাতে তার সাহাবীদের দো‘আ শিখিয়েছেন। শাকাল ইবন হামিদ রাযিয়াল­াহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমি বললাম, হে আল­াহর রসূল! আপনি আমাদের একটি দো‘আ শিখিয়ে দিন। উত্তরে তিনি বলেন, তুমি বল, ‘হে আল­াহ! আমি তোমার নিকট আমার কর্ণের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি, আমার চোখের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি, আমার মুখের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি, আমার অন্তরের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং আমার বীর্যের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।’(আবু দাউদ)
১৩. সুন্নাতের অনুসারী বিশুদ্ধ জ্ঞান ও বিশুদ্ধ আকীদা-বিশ্বাসের অধিকারী কোন ব্যক্তিকে নিজের অনুসরণীয় ব্যক্তি বানিয়ে নেয়া। তাঁর নিকট দ্বীলের সব হালতের কথা তুলে ধরলে সব রকমের গুনাহ থেকে বাঁচা সহজ হবে ইনশাআল­াহ।
খুবভাল ভাবে মনে রাখতে হবে, যে ছুরিতে অস্ত্রোপচার করে রোগ নিবারণের ব্যবস্থা করা হয় সেই ছুরিতেই হত্যা করা সম্ভব। ঠিক তেমনি আসক্তির সঠিক ব্যবহার জানা থাকলে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণ লাভে সক্ষম হব এবং সমস্ত অকল্যাণ হতে মুক্ত থাকতে পারবো। এছাড়াও আমরা সেই সব ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবো, যাদের মহান আল­াহ রাব্বুল আলামীন বিশেষ নেয়ামত দান করেছেন এবং দুনিয়াতে তাদের সৌভাগ্যবান করেছেন। পক্ষান্তরে আমরা যদি আসক্তির খারাপ পরিণতির প্রতি লক্ষ্য না করে এর পূজা করি এবং যে সব কাজ আমাদের ক্ষতির কারণ হয়, তা করতে থাকি, তাহলে আমরা মহান আল­াহ রব্বুল আলামীনের দরবারে জালেম ও অন্যায়কারী হিসেবে পরিগণিত হব।
আল­াহই সর্বজ্ঞ।
মহান আল­াহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে আমাদের পরম চাওয়া হল, মহান আল­াহ তা’য়ালা আমাদের কৃতপাপ সমূহ ক্ষমা করুন এবং সবাইকে কু-আসক্তির মতো ঘৃণিত পাপ হতে বিরত থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন।
লেখক : বায়োকেমিস্ট, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, খুলনা।

্রিন্ট

আরও সংবদ

অন্যান্য

প্রায় ১১ দিন আগে