খুলনা | বুধবার | ০৮ অক্টোবর ২০২৫ | ২২ আশ্বিন ১৪৩২

ভালো মানুষ হতে যা বর্জন করতে হবে

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী |
০১:০৫ এ.এম | ২৯ জানুয়ারী ২০২২


মানবজীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন কী? প্রভ‚ত অর্থ-সম্পত্তির মালিক হওয়া? বিশ্বব্যাপী খ্যাতি ছড়িয়ে পড়া? কঠিনতম স্বপ্নগুলোও পূরণ করতে পারা? এগুলোর কোনোটির গুরুত্বই কম নয়। কিন্তু আমরা যেহেতু মানুষ, তাই আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জনটি হলো একজন ‘ভালো মানুষ’ হয়ে ওঠা। ভালো মানুষ হতে হলে আমাদের কিছু গুণ অর্জন করতে হবে এবং কিছু দোষ বর্জন করতে হবে। আমরা যদি ভালো হতে চাই তাহলে গর্ব-অহঙ্কার, লোভ, অহেতুক রাগ, পরচর্চা-পরনিন্দা, চোগলখোরী, হিংসা-বিদ্বেষ, মিথ্যা বর্জন সহ আরো কিছু অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
গর্ব ও অহঙ্কার : গর্ব ও অহঙ্কার মানুষকে সমূলে বিনাশ করে। হাদিসে আছে, যার মাঝে সামান্য পরিমাণ অহঙ্কার থাকবে সে জান্নাতের খুশবুও পাবে না।
পরচর্চা, পরনিন্দা, গীবত : এছাড়া পরচর্চা, পরনিন্দা ও গীবত মানুষের সমস্ত নেক আমলকে নিঃশেষ করে দেয়। ভালো মানুষ হতে হলে এগুলো ছাড়তে হবে।
মিথ্যা বর্জন : মিথ্যা বর্জন করা ভালো মানুষ হবার পূর্ব শর্ত। মিথ্যা সাময়িক সময়ের জন্য মিঠা মনে হলেও, তার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। হাদিসে আছে, সত্য মানুষকে মুক্তি দেয়, মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে।
লোভ সংবরণ : মানুষ মাত্রই লোভী। কিন্তু সেই লোভকে একান্ত প্রয়োজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা। অতিরিক্ত লোভ মানুষকে দুর্নীতি পরায়ন হতে বাধ্য করে।
অহেতুক রাগ দমন : রাগের সময় মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। রাগ একটি খুবই বাজে জিনিস, যা একটু একটু করে আমাদেরকে ধ্বংস করে দেয়। যখন আমাদের সাথে খুব খারাপ কিছু ঘটে, যা আমাদের প্রত্যাশা ছিল না, কিংবা যখন আমরা কারো কাছ থেকে খুব বাজে ব্যবহারের সম্মুখীন হই, তখন খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমরা অনেক রেগে যাই, ক্রোধান্বিত হয়ে পড়ি। রাগের মাথায় এমন কিছু একটা করে বসি, যাতে মানুষ হিসেবে নিজেরাই অনেক ছোট হয়ে যাই, এবং অনেক অনর্থক বিপদও ডেকে আনি। তাই ভালো মানুষ হতে হলে রাগকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা : ভালো মানুষ হতে হলে পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা পরিত্যাগ করতে হবে। অন্যের উন্নতি বা ভালো দেখলে স্বভাবতই আমাদের অনেকের মনে এক ধরণের হাহাকার জেগে ওঠে। কেউ কেউ আবার সূ² ঈর্ষাবোধও করি। কিংবা ভাবি, “আমি যা করতে পারিনি বা হতে পারিনি, ও কীভাবে তা পারল!” অর্থাৎ নিজেদের সাথে তুলনা করে যখন আমরা উপলব্ধি করি যে কেউ আমাদের চেয়ে এগিয়ে গেছে, তখন আমরা মানসিক যাতনায় ভুগি, অস্থির হয়ে পড়ি।
হাদিসে নাবী সাল­াল­াহু আলাইহি ওয়াসাল­াম বলেছেনঃ তোমরা অনুমান বা ধারণা থেকে বেঁচে থেকো। কারণ অনুমান বড় মিথ্যা ব্যাপার। আর কারো দোষ অনুসন্ধান করো না, গোয়েন্দাগিরী করো না, একে অন্যকে ধোঁকা দিও না, আর পরস্পর হিংসা করো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করো না। বরং সবাই আল­াহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে থেকো।
চোগলখোরী ও দ্বি-মুখীতা : চোগলখোরী অর্থ একজনের কথা অন্যজনের কাছে লাগানো। নাবী সাল­াল­াহু আলাইহি ওয়াসাল­াম বলেছেন, চোগলখোর কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। দু’মুখো ব্যক্তি সম্পর্কে এক হাদিসে এসেছেঃ কিয়ামতের দিন তুমি আল­াহর নিকট ঐ ব্যক্তিকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাবে যে দু’মুখো। সে এদের সামনে একরূপ নিয়ে আসতো আর ওদের কাছে অন্য রূপে ধরা দিত।
অলসতা বর্জন : অলসতার কারণে মানুষ দ্বীন-দুনিয়া সব কিছুই হারায়। অলস ব্যক্তি কখনই জীবনে সফলকাম হতে পারে না। সুতরাং, অলসতা বর্জন না করলে ভালো মানুষ হওয়া সম্ভব নয়।
ভালো মানুষ হবার শ্রেষ্ঠ উপায় কি?
বিজ্ঞজনেরা বলেছেন, ভালো হবার শ্রেষ্ঠ উপায় হলো ভালো মানুষের সান্নিধ্যে থাকা। কথায় বলে সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস; অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। অথবা সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়; যদি কেউ কামারের কাছে বসে তাহলে আগুনের ফুলকি লেগে তার পোশাক পুড়ে যেতে পারে। অথবা আগুনের ফুলকি না লাগলেও, ধোঁয়া তো অবশ্যই লাগবে। অপরপক্ষে, কোন আতরওয়ালার কাছে বসেল, আতর না মিললেও, খোশবু তো অবশ্যই মিলবে।
উপসংহারে আমরা বলতে পারি, গর্ব-অহঙ্কার, লোভ, অহেতুক রাগ, পরচর্চা-পরনিন্দা, চোগলখোরী, হিংসা-বিদ্বেষ, মিথ্যা বর্জন করার মাধ্যমে চরিত্র উন্নত করতে পারলেই একজন প্রকৃত ভালোমানুষ হওয়া সম্ভব।
(মৎস্য বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)

্রিন্ট

আরও সংবদ