ভালো মানুষ হতে হলে আমাদের কিছু গুণ অর্জন করতে হবে এবং কিছু দোষ বর্জন করতে হবে। ইতিপূর্বে এই কলামে বর্জনীয় অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। আজকে আমরা আলোকপাত করবো, সত্যিকারের ভালো মানুষ হতে হলে আমাদের কি কি গুণ অর্জন করতে হবে। 
সততা : ভালো মানুষ হতে হলে আমাদেরেকে অবশ্যই সৎ হতে হবে। সৎ মানুষ ছাড়া একটি সুষ্ঠু-সুন্দর জাতি আশা করা যায় না। হাদিসে আছে, সত্য মানুষকে মুক্তি দেয়, মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে। একটি ঘটনা প্রসিদ্ধ যে, শিশু আব্দুল কাদির জিলানির (রহঃ) সত্য কথা বলার কারণে একদল ডাকাত তওবা করে সঠিক পথে ফিরে এসেছিল। 
আমানতদারী ও বিশ্বস্ততা : আমানতদারী ও বিশ্বস্ততা ভালো চরিত্রের পূর্বশর্ত। জনগণের মধ্যে আমানতদারী না থাকলে মানুষস্তুর্নীতি পরায়ণ হতে বাধ্য।  রাসূলুল­াহ সাল­াল­াহু আলাইহি ওয়াসাল­াম বলেছেনঃ মুনাফিকের চিহ্ন তিনটিঃ যখন সে কথা বলে, তখন মিথ্যা বলে, আর যখন সে ওয়াদা করে, তখন তা ভঙ্গ করে আর যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় তখন সে তাতে খিয়ানত করে।
বিনয় ও নম্রতা : বিনয় ও নম্র মানুষকে সবাই ভালোবাসে।  বিশ্ব নবীর একটি ঘটনা। একবার এক বেদুঈন মসজিদে পেশাব করে দিলো। তখন লোকজন তাকে শাসন করার জন্য উত্তেজিত হয়ে পড়ল। রাসুলুল­াহ (সাঃ) তাদের বললেনঃ তোমরা তাকে ছেড়ে দাও এবং তার পেশাবের উপর পানি ঢেলে দাও। কারণ, তোমাদের নম্র ব্যবহারকারী বানিয়ে পাঠানো হয়েছে, কঠোর ব্যবহারকারী হিসেবে পাঠানো হয়নি।
ক্ষমা ও মহানুভবতা : ক্ষমা করা মহৎ গুণ।  প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা ও সুযোগ থাকা সত্তে¡ও সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব (সাঃ) চরম শত্র“কেও ক্ষমা করে দিতেন। আর এই কারণে তিনি মক্কা বিজয়ের দিনে ঘোষণা করলেন, ‘তোমাদের প্রতি আজ কোন অভিযোগ নেই। আজ তোমরা মুক্ত!’ এক ইহুদী বুড়ি তাকে বিষ প্রয়োগ করেছিল, তারপরও তিনি তাকে মাফ করে দিয়েছিলেন। 
ভালোবাসা, দয়া ও পরোপকার : একজন আদর্শ মানুষের কর্তব্য হলো পরিবার পরিজন, আত্মীয় স্বজন ও কর্মস্থলে সহকর্মীদের জন্য সাহায্য, সহযোগিতা, দয়া,  সহনশীলতা ও সহমর্মিতার হাত প্রসারিত করা। মহানবী (সাঃ) বলতেন, যদি কোন ব্যক্তি কোন বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দান করে আল­াহ তায়ালা তাকে জান্নাতের সবুজ বস্ত্র পরিধান করাবেন। যদি কেউ কোন ক্ষুধার্তকে খানা খাওয়ায় আল­াহপাক তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। আর যদি কেউ কোন  পিপাসিতকে পানি পান করায় মহান আল­াহপাক তাকে জান্নাতের মোহরযুক্ত পানীয় পান করাবেন। 
সকল জীবের প্রতি দয়া : কথায় বলে, সৃষ্টির সেবা;  স্রষ্টার ইবাদত। সহিহ হাদিসে আছে, এক ব্যক্তি পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে মহান আল­াহপাক তার সমস্ত গোনাহ মাফ করে জান্নাত দান করেছিলেন (বুখারী)। 
লজ্জাশীলতা : মানুষ অধিকাংশ সময়ে অশ্লীল ও বেহায়া কাজ করে শুধুমাত্র লজ্জাশীল না হওয়া কারণে। এক হাদিসে আছে, পূর্বেকার নবীদের কর্তব্য থেকে মানুষ যা বর্জন করেছে তার একটি হল লজ্জা। যদি তুমি লজ্জাই ছেড়ে দাও তবে তুমি যা চাও তা কর । 
পারিশ্রমী ও  নিষ্ঠাবান : সময়ের কাজ সঠিক সময়ে, সঠিকভাবে সম্পন্ন করা ভালো মানুষের অন্যতম  বৈশিষ্ট। 
আত্মবিশ্বাস : নিজের উপর আত্মবিশ্বাস না রাখতে পারলে কখনও ভালো মানুষ হওয়া যায় না। এইজন্য নিজের উপর আত্মবিশ্বাস এবং সর্বপরি মহান সৃষ্টিকর্তার ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে পারলে সফলতা আমাদের কাছে ধরা দিবে। 
ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা : ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার গুণ মানুষকে মহৎ করে তোলে। আমাদের একটি বড় সমস্যা হলো, আমরা বিপক্ষ মতকে একেবারেই সহ্য করতে পারি না। আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব আদর্শ, মূল্যবোধ, নৈতিকতার জায়গা থাকে, এবং আমরা সবসময় সেগুলোকেই আঁকড়ে ধরে রাখতে চাই। এতে কোনোই সমস্যা ছিল না, যদি না আমরা আমাদের আদর্শ, মূল্যবোধ, নৈতিকতার বিরোধী কারো উপর অকারণে আগ্রাসী হয়ে না উঠতাম। 
উন্নত চরিত্র : খারাপ চরিত্রের মানুষ কখনও ভালো মানুষ হতে পারে না। মহানবী (সাঃ) বলতেনঃ তোমাদের মধ্যে যার স্বভাব-চরিত্র ভালো সেই তোমাদের মধ্যে সব চাইতে উত্তম।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি, গর্ব-অহঙ্কার, লোভ, অহেতুক রাগ, পরচর্চা-পরনিন্দা, চোগলখোরী, হিংসা-বিদ্বেষ, মিথ্যা বর্জন করে সততা, আমানতদারী ও বিশ্বস্ততা, বিনয় ও নম্রতা, ক্ষমা ও মহানুভবতা, অন্যকে সাহায্য করা, পরিশ্রমী ও  নিষ্ঠাবান, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা অর্জনের মাধ্যমে চরিত্র গঠন করতে পারলেই একজন প্রকৃত ভালোমানুষ হওয়া সম্ভব। 
লেখক : মৎস্য বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।